সীতাকুণ্ড পাহাড় ভূতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের নৈসর্গিক যাদুঘর

সীতাকুণ্ড পাহাড় ভূতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের নৈসর্গিক যাদুঘর

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

ভূতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের নৈসর্গিক যাদৃঘর সীতাকুণ্ড পাহাড়। ভূতত্ত্বের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ের অত্যাবশ্যকীয় কোর্স ‘ফিল্ট জিওলজি’–হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেয়া এবং জরিপের জন্য প্রতিবছর শীত মৌসুমে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। অন্যান্য পাহাড়ী অঞ্চলের তুলনায় সীতাকুণ্ড বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ও টেকটনিক বিশ্লেষণে অধিকতর গুরুত্ববাহী এবং আদর্শ স্থান।

সীমারেখা বিচারে সীতাকুণ্ড পাহাড় শ্রেণীর পশ্চিমে রয়েছে সমান্তরালভাবে প্রলম্বিত বঙ্গোপসাগরের উপকুল আর এর সাঝে অতিশয় উর্বর বিস্তীর্ণ পলল সমভূমি। সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পূর্বে হালদা ভ্যালী আর তা দিয়ে বয়ে হালদা নদী মিশেছে কর্নফুলী নদীতে। ভূতাত্ত্বিক ও টেকটনিক বিন্যাসে সীতাকুণ্ড বেঙ্গল নেসিনের ভাঁজ বলয়ের একেবারে পশ্চিমের পাহাড়শ্রেণী এবং ভারত পেন্টটের উত্তর–পূর্ব কোনে অবস্থিত।

সীতাকুণ্ড পাহাড়শ্রেণী বেশ ক’টি বড় সমান্তরাল পাহাড়ের সমষ্টি। এগুলোর গড় উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে প্রায় ৭০০ফুট। এই পাহাড়শ্রেণীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ১১৫৬ফুট ওপরে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ নামে অভিহিত। পাহাড়ের পশ্চিম ও পূর্ব ঢালের মধ্যে যথেষ্ট বৈপরীত্য লক্ষণীয়। পশ্চিমের ঢাল সমতল ভূমি থেকে হঠাৎ করে যেন খাড়া উঠে গেছে আর পূর্বের ঢাল ক্রমে অবনত হয়ে হালদা ভ্যালীতে মিষেছে। উত্তর–দক্ষিণে প্রলন্বিত একটি বড় ফাটল পশ্চিম ঢালের বিস্তীর্ণ অংশকে স্থানচ্যুতি ঘটিয়ে নীচে তলিয়ে দিয়েছে যা পরবর্তীতে পলিমাটির আবরণে ঢাকা পড়ে যায়। আর এ কারণেই পশ্চিম ঢালের পাহাড় হঠাৎ করে অনেকটা খাড়াভাবে জেগে উঠেছে।

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভু–তত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ‘ফিল্ট জিওলজি’–হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেয়া এবং জরিপের জন্য সীতাকুণ্ড পাহাড়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। তাদের নেতৃত্বে ছিল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. খন্দকার ইমামুল হক। তিনি জানান, ভূতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের সীতাকুণ্ড পাহাড়ের অনেক কিছু শেখার আছে। এ পাহাড়ে অনেক ধরনের পাথর রয়েছে। বড় বড় পাহাড়ের টিলা রয়েছে। এই পাহাড়শ্রেণি একটি উর্দ্ধভাঁজ (এ্যান্টিক্লাইন ফোল্ড) যা সীতাকুণ্ড উর্দ্ধভাঁজ (সীতাকুণ্ড এ্যান্টিক্লাইন নামে অভিহিত)। এই উর্দ্ধভাঁজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর পশ্চিম ও পূর্ব বাহু দুটি বেশ খাড়া এবং প্রশস্ত চূড়া। চ্যুতির (ফল্ট) ফলে পশ্চিম বাহুর বৃহত্তর অংশই এখন নবীন পলিন নীচে। সীতাকুণ্ড উর্দ্ধভাঁজের শিলার বৈশিষ্ট্য চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উর্দ্ধভাঁজের মতই এর স্তরবিন্যাস কতগুলো একঘেঁয়ে স্তরীভূত শিলা দ্বারা গঠিত। যেমন, বেলে পাথর, পলিপাথর ও কাদা পাথর।

সীতাকুণ্ডে রয়েছে অনেক বনজ ও খনিজ সম্পদ। চুনাপাথর, কঠিন বেলেপাথর আর কাদাপাথর তো আছেই। সীতাকুণ্ড উর্দ্ধভাঁজের উদরে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বাড়বকুণ্ড, লবণাক্ষ ছরাসহ এই পাহাড়ের বিভিন্নস্থানে নিয়ত গ্যাস নিঃসরিত হচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপে শুকলালহাট এর অলকাস্থ লৈতার ছরায় তেল সম্পৃক্ত বেলেপাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯১০ থেকে ১৯১৪ সনের মধ্যে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে ‘আইপিপিসি’ ও ‘বিওসি’ প্রাকৃতিক তেল অনুসন্ধানের জন্য ৪টি কূপ খনন করা হয়। স্বাধীনতার পর পেট্রোবাংলা ১৯৮৩ সালে সুকলালহাট পাহাড়ের ভিতরে অনুসন্ধান কুপ খনন করে। কিন্তু কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে গ্যাস বা তেল আবিস্কার তখন সম্ভব হয়নি।