শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পিলখানা ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণ

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পিলখানা ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণ
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পিলখানা ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণ করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার দলমত নির্বিশেষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যে সকাল ৯টায় রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ।

এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাবাহিনী প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্দুল হান্নান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসানসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা ও নিহতের স্বজনরা।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শনিবার সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সেনাবাহিনী। এ সময় কর্মরত সামরিক সদস্যগণ স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এসময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্যগণ, শহিদ পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়গণ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শুনিবার সকলে সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সকল স্তরের সেনাসদস্যগণের উপস্থিতিতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

বিজিবি জানায়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শহীদদের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের মসজিদসমূহে খতমে কোরআন আয়োজন করা হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বিজিবি'র সকল স্থাপনায় রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবি’র সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করে। এছাড়াও বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে শেষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান উপস্থিত শহীদদের নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং খোঁজখবর নেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। এ বছরের মধ্যেই এই মামলার চূড়ান্ত রায় কার্যকর করতে পারবো বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু সেদিন তিনি সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে গাড়িতে করে দুদিনের জন্য কোথায় যেন চলে যান। এই ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সরকারকে উৎখাতের চক্রান্ত ছিল।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। এ ঘটনার উদ্দেশ্য ছিল মূলত সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া। এ ঘটনার তদন্ত যেভাবে হওয়া দরকার ছিল, আমাদের এখানে সেটি সংঘটিত হয়নি। সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদের বের করে আনতে যে তদন্ত প্রক্রিয়া দরকার ছিল তা হয়নি। পত্রপত্রিকায় দেখতে পেয়েছি সেনাবাহিনী যে প্রতিবেদন তৈরি করেছিল- তার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা তার কোনও কিছুই দেশবাসী জানতে পারেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্রোহ হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে বিচার হয়েছে। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাত হাজার সৈনিক, যারা দাবি করেন সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদের মামলার শুনানি এখনও শেষ করা হয়নি। আমি দাবি করবো, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, বিচার সংক্রান্ত যে সমস্যাগুলো রয়েছে, অতি দ্রুত সেগুলো সম্পাদন করে একটি সমাধান করা উচিত।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের শ্রদ্ধা জানানোর শেষে বলেন, ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার স্বজনরা পায়নি। তারা যেন এ বিচারের সন্তুষ্ট হতে পারেন এ বিষয়ে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার জানামতে বেশিরভাগ শহীদ পরিবারের ধারণা, বিচার প্রক্রিয়া ও তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা নেই। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো- এর আগে কিছু জানা গেল না, এটা অবশ্যই অস্বাভাবিক। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি কোনও কিছুই আঁচ করতে পারেনি এসব বিষয়ে? আর তারা যদি আঁচ করতে না পারে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’

প্রসঙ্গ, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলায় ৮৪৬ জনকে আসামি করা করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। আর ২০১৭ সালে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল শুনানি শুরু না হওয়ায় নিষ্পত্তি হয়নি এই হত্যা মামলা ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;