রোহিঙ্গা শিবিরে সরঞ্জাম ছাড়াই করোনা ঠেকানোর প্রস্তুতি

রোহিঙ্গা শিবিরে সরঞ্জাম ছাড়াই করোনা ঠেকানোর প্রস্তুতি
রোহিঙ্গা শিবিরে সরঞ্জাম ছাড়াই করোনা ঠেকানোর প্রস্তুতি

শাহেদ ফেরদৌস হিরু, কক্সবাজার।।

করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে রোহিঙ্গা শিবিরকে চিহ্নিত করেছে বিশেষজ্ঞরা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। সেখানে একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য এক হাত জায়গা ফাঁকা নেই। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ৩৪টি ক্যাম্পে লোকে লোকারণ্য।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা করোনা ভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে বলে সতর্ক করেছে। বিশ্লেকরা বলছে,অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা হানা দিলে তার ধাক্কা লাগবে পুরো দেশে।রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ একজন  আক্রান্ত হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। যা ঠেকানো এই মুহুর্তেই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের।

এরপরও বিদেশি এনজিও কর্মীদের ক্যাম্পে নিয়মিত যাওয়া আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।সম্প্রতি অসংখ্য বিদেশি স্বদেশ থেকে এসে কোয়ারেন্টাইন  না মেনে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে।এতে করে বিদেশিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এ মুহুর্তে নতুন করে কোন বিদেশি আসতে দেয়া হচ্ছেনা বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এদিকে অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুুতির কথা বলা হচ্ছে। তবে সে প্রস্তুুতি কার্যত কোন কাজে আসবে না বলে দাবি করেছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

কক্সবাজার জেলাপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে "দেড়শ শয্যা আইসোলেশান ইউনিট প্রস্তুুতের কাজ চলছে। যা প্রয়োজন হলে ৩শ থেকে ৪শ পর্যন্ত করা হবে।আর বিভিন্ন সংস্থার ২৮০ জন ডাক্তার, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও  বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে  সচেতনাতার পাশাপাশি নানান প্রস্তুুতির কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তুতি থাকলেও কোরনা শনাক্তকরণের কিট ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসামগ্রী বা পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিআই) সহ আরোও অনেক কিছুই  নেই বলে জানাগেছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন, অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। তিনি বলেন,এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকদের  প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের (পিপিআই) ও করোনা শনাক্তকরণের কিট  সরবরাহ করা হয়নি। এমতাবস্থায় কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎকরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, সামছু-দ্দৌজা বলেন, বিভিন্ন সংস্থার পক্ষথেকে আপাতত কিছু পিপিআই দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষথেকে কয়েকদিনের মধ্য কিট ও পিপিআই সরবরাহ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, পুরা বাংলােেদশর অবস্থা যা আমাদের অবস্থাও একই।তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বা  স্থানীয়দের মধ্যে যদি কারোর করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়, রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে। এ ছাড়া কোন বিকল্প আমাদের নেই।

রোহিঙ্গাদের এখনো অবাদে বিচরণ ও বিদেশের ক্যাম্পে যাতায়াত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দা ও সুশীল সমাজ। স্থানীয় বাসিন্দা,সাংবাদিক শাকুর মোহামেদ বলেন, বিদেশিদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর আসংখ্যার পরও তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। অন্যদিকে করোনা শনাক্তের কিট নেই চিকিৎসকদের সুরক্ষার পোশাক নেই। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিধিনিরা বলছে,সবাই মিলে আমাদের উখিয়াবাসীর জীবন নিয়ে খেলছে। তারা  অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা করোনাভাইরাসের মত একটা ভয়াবাহ ইস্যুকে গুরুত্ব দেননি। তাই তাদের প্রস্তুুতিতে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। যার পরিণাম অনেক ভয়াবহ হতে পারে। ১২লাখ অরক্ষিত রোহিঙ্গার কারনে পুরা কক্সবাজারবাসী হুমকিতে আছে দাবি তাদের।