রাজশাহীতে ছয় মাসের আম চাষে চমক দেখালেন জলিল!

রাজশাহীতে ছয় মাসের আম চাষে চমক দেখালেন জলিল!

ফয়সাল আহমেদ,রাজশাহী প্রতিনিধি ।।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের কৃষক জলিল সরদার। মাত্র ছয়মাস আগে বাড়ির পাশে পতিত ১০ শতক জমিতে রোপন করেছিলেন বারি-৪ জাতের ৮০টি আম গাছ। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে তার বাগানের প্রতিটি গাছে ঝুঁলছে চোখ ধাঁধাঁনো সুস্বাদু জাতের সেরা আম। প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত।

চমক লাগানো আম চাষের বিষয়ে জলিল সরদার জানান, মাত্র ৬ মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের থেকে ৮০টি গাছ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

আমের চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যে মুকুল এসেছিল গাছে। বর্তমানে গাছে প্রচুর আম ধরেছে। গাছের প্রতিটি আমের আকার এবং ওজনও বেশ ভালো। খেতেও সুস্বাদু।

তিনি আরো বলেন, ‘অল্প সময়ে আম গাছে এতো আম ধরবে ভাবতেই পারেনি। জলিলের বাগানে আম দেখতে নিজ গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রামের চাষীরা প্রতিদিনই আসে। অনেকে আম বাগান করার আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করে জান জলিলের নিকট।’

এমন আম শুধু তানোরের কৃষক জলিজ সরদারে বাগানেই নয়, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে শত শত কৃষকের বাগানে সোভা পাচ্ছে এমন সুস্বাদু আম। বিশেষ করে অল্প সময়ে বাগান থেকে আম পাওয়া যাবে এমন জাতের আম বাগানের দিকে ঝুঁকছেন চাষীরা।

গত কয়েক বছরে রাজশাহী বিভাগে- রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় হাজারো চাষী বানিজ্যিক ভাবে অল্প সময়ের আম বাগান করেছেন। এতে ভালো ফল পাচ্ছেন বলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত দেশের প্রথম শংকর জাতের বারি আম-৪। দেশি নাবি জাত আশ্বিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোরিডা থেকে সংগৃহীত রঙিন আমের সংমিশ্রণে উদ্ভাবন করা হয় বারি আম-৪ জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৯৩ সালে বারি আম-৪ উদ্ভাবন করে। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রথম চাষ শুরু হয়।

একই জমিতে আম চাষের পাশা-পাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রবি শষ্য ও শাক-সবজি উৎপাদন করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন তারা।

বারি আম-৪ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানী কৃষিবিদ জহরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, দেশি নাবি জাত আশ্বিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রোরিডা থেকে সংগৃহীত রঙিন আমের সংমিশ্রণে উদ্ভাবন করা হয় বারি আম-৪ জাত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত করেন এ জাতের আম। এ জাতের আম উত্তরঞ্চলের মাটিতে চাষের উপযোগী হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সুস্বাদু এ জাতের আম শেষ সময়ে পোক্ত হয়। তাই এ আমের অন্য সব আমের চেয়ে কদর বেশি। চাষীরা বাজারে মুল্যও বেশি পান। তাই অল্প সময়ে এমন আমের বাগান করতে বেশ আগ্রহ বেড়েছে রাজশাহীঞ্চলের কৃষকদের।

কৃষিবিদ জহুরুল আরও বলেন, এ জাতের গাছ প্রতি বিঘায় ১৫০ টি পর্যন্ত রোপন করা যায়। তার মধ্যে রবি সশ্যসহ শাক সবজি চাষ করে ভালবানও হচ্ছেন চাষীরা। তাই বারি-৪ আমের গাছে দিকেই ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
চারা রোপণের এক বছরে থেকে দেড় বছরের মাথায় আম তুলতে পেরে হাসিও ফুটেছে অনেক আম চাষীর। বারি আম-৪ এর মুকুল আসে ফাল্গুন মাসে। আর আম পাকে শ্রাবণ মাসে। প্রতিটি ফলের ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় হালকা সবুজ আর পাকলে হলুদ। রসাল আঁশবিহীন আমটি উচ্চ ফলনশীল।

বিজ্ঞানী জহুরুল ইসলাম জানান, শুধু বারি আম-৪ নয়, এই অঞ্চলের চাষিরা এখন বারি আম-৮, ব্যানানা, গোরমতি জাতের বাগানও করছেন। চাষিদের সাফল্য দেখে অনেকে চলতি বছর নতুন বাগান করছেন। এভাবে আম চাষ অব্যাহত থাকলে উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানী করেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।