যেকোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

যেকোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

যেকোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সকলকে আমি এটুকুই বলব, যেকোনো পরিস্থিতি সহনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কে কী বলল না বলল তা শোনার থেকে কতটুকু আমরা দেশের জন্য করতে পারলাম, সেটাই আমাদের চিন্তায় থাকবে। তা হলেই আমরা  সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব। সঠিক কাজ করতে পারব। বিজয় দিবসে বুধবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই নির্দেশনা দেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা উঠানোর চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে চলবে। আমরা এখন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ আছি বলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অবহেলার চোখে দেখব, তা নয়। কারণ মনে রাখতে হবে, সকলে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে একই সঙ্গে রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই এদেশের মাটিতে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে সমান অধিকার নিয়েই বাস করবে। যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সকলেরই থাকবে। সেই চেতনায় আমরা বিশ^াস করি। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে থাকে। নবী করিমও (সা.) আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, আজকে যে শিশুটি এই মুহূর্তে জন্মাবে, তার ভবিষ্যৎটা কী হবে, সেটা বিবেচনা করেই আমাদের কর্মসূচি আমরা নিয়েছি। এটা তো আওয়ামী লীগের দায়িত্ব, আওয়ামী লীগের কর্তব্য। জাতির পিতা আমাদের সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের সংগঠনটাকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
১৯৭৫-এর পর জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এখন ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেবে বঙ্গবন্ধুর নামে, সেই ঘোষণা দিয়েছে। মুজিব শতবর্ষে বাঙালি জাতির জন্য এটা একটা বড় উপহার।

তিনি বলেন, আজকের এই বিজয়ের মুহূর্তে আমি স্মরণ করি যে সকল রাষ্ট্র বিশেষ করে ভারত, ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল এবং ভারতের জনগণকে। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ ছাড়া সোভিয়েত রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলো যুগোসøাভিয়া, মার্শাল টিটোসহ প্রত্যেকে আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছিল। যে সমস্ত রাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, সেই দেশের জনগণ কিন্তু আমাদের পক্ষে ছিল।

সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা জাতির পিতার সংগ্রামমুখর জীবন তুলে ধরেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারানোর কথা তুলে ধরে বলেন, কাজেই আমি জানি হারানোর বেদনা কত কঠিন। অনেকের তো লাশও পাইনি।

জাতির পিতাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বহু নেতাকর্মীকে হত্যার কথা ‍উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্যাতন তো চলছে। অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সবকিছু আমরা দেখেছি।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশে করোনার টিকা আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের চুক্তিও হয়ে গেছে। ডবিøউএইচও এরই মধ্যে অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে। কাজেই আমরা আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি এটা পেয়ে যাব।

এ সভায় সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় নিজের কষ্টের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খুব কষ্ট লাগছে, দুঃখ লাগছে। সবাই ওখানে বসে আছেন, আর আমি দূরে জেলখানার মতো আরেকটা বন্দিশিবিরে বসে আছি। এই বন্দিশিবির কতদিন। আসলে সারাবিশে^^ই তো একই অবস্থা। কাজেই এখান থেকে কীভাবে মুক্তি আসবে সেটাই বড় কথা।

গণভবন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমÐলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বীক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহাম্মদ মন্নাফি।