মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, বিশ্বনবীর দাওয়াত ও দ্বীনপ্রচার

মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, বিশ্বনবীর দাওয়াত ও দ্বীনপ্রচার
মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, বিশ্বনবীর দাওয়াত ও দ্বীনপ্রচার

উবায়দুল হক খান ।।

মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তারা পথভ্রষ্ট মানব জাতিকে সত্যের পথে, হেদায়াতের পথে আন করেছেন। এ হেদায়াতের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করেছে।
দাওয়াতের ময়দানে তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। মূলত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি মুহূর্ত ইসলামের দাওয়াত ও প্রচার-প্রসারেই ব্যয় হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তাকে এ আদেশ দিয়েছেন ‘হে রাসুল! আপনার প্রতি যা অহি আসে লোকদের কাছে পৌঁছে দিন।’ (সুরা মায়েদা : ৬৭)রাসুল (সা.)-এর দাওয়াতের সূচনা নবুওয়ত লাভের পর রাসুল (সা.)-এর সহধর্মিণী হজরত খাদিজা (রা.)-এর গৃহে থাকা অবস্থায় সুরা মুদ্দাসসিরের প্রথম দুটি আয়াতÑ ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন এবং ভীতি প্রদর্শন করুন’ নাজিল হলে নবীজি আপন দায়িত্ব পালন এবং মানুষকে সত্যের দাওয়াত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু শিরক-বিদআত ও কুফরের অন্ধকারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মানুষের মাঝে তাওহিদ ও রেসালাতের দাওয়াত দেওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। তাই রাসুল (সা.) প্রথমে এমন লোকদের দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা করলেন, যারা ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ এবং তার সঙ্গে ওঠা-বসার মাধ্যমে তার স্বভাব চরিত্র এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সব বিষয়ে সম্যক অবগত ছিলেন। তাই সর্বপ্রথম তার সহধর্মিণী হজরত খাদিজা (রা.), বয়স্কদের মধ্যে হজরত আবু বকর (রা.), বালকদের মধ্যে হজরত আলী (রা.) প্রমুখ ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেন।
অতঃপর রাসুল (সা.) ও তার সাহাবাগণ যাদের মধ্যে সততা ও মঙ্গলের নিদর্শন দেখতে পেতেন তাদের অতি সঙ্গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। সতর্কতার সঙ্গে এ ধারায় প্রায় তিন বছর ইসলামের দাওয়াতের কাজ চলল। ততদিন কুরাইশ বংশের প্রায় ৪২ জনের একটি জামাত ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হয়।
প্রকাশ্যে দাওয়াতের সূচনা
এরপর যখন রিসালাতের আহŸান গ্রহণকারীদের একটি জামাত তৈরি হয়ে গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা নবীকে (সা.) প্রকাশ্যে মানুষের মাঝে সত্যের বাণী প্রচারের নির্দেশ প্রদান করলেনÑ ‘আপনি মুশরিকদের পরওয়া না করে আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হিজর : ৯৪)। আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে নবী (সা.) জনসাধারণের মাঝে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন।
আরবদের চিরাচরিত নিয়ম ছিল শত্রæদের অতর্কিত আক্রমণ কিংবা অন্য কোনো ভীষণ বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলে তারা পাহাড়ের চ‚ড়ায় আরোহণ করে উচ্চঃস্বরে ‘ওয়া সাবাহা!’ বলে চিৎকার করত। আর এ আওয়াজ শোনামাত্রই সবাই ঘটনাস্থলে সমবেত হতো। একদিন নবীজি (সা.) সাফা পাহাড়ের চ‚ড়ায় চড়ে আরবদের প্রথা অনুযায়ী তাদের বিপদ সংকেত ‘ওয়া সাবাহা!’ বলে ডাক দিলেন। তার এ গুরুগম্ভীর আহŸানে সাড়া দিয়ে সমবেত হলো। উপস্থিত লোকদের সম্বোধন করে রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে কুরাশগণ! আমি যদি তোমাদের বলি, পাহাড়ের পিছনে শত্রæদের এক শক্তিশালী বাহিনী তোমাদের ওপর আক্রমণ করার জন্য এবং তোমাদের ধন-সম্পদ, সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহলে কি তোমরা বিশ^াস করবে?’
তারা সমস্বরে বলে উঠলÑ ‘নিশ্চয়ই আমরা আপনার কথা বিশ^াস করব। কেননা আমরা আপনাকে কখনও মিথ্যা বলতে শুনিনি, আপনি আমাদের ‘আল আমিন’। আপনি যা বলবেন তা অবশ্যই সত্য।’ রাসুল (সা.) গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘তবে শোন! আমি তোমাদের এক ভয়াবহ আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করছি, তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান না আন, আল্লাহ তায়ালাকে এক বলে বিশ^াস না কর, তাহলে অতি সত্ত¡র সেই আজাব তোমাদের ওপর আপতিত হবে।’
তার এ বক্তব্য শুনে শিরক ও পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত মক্কাবাসী ধিক ধিক করে উঠল। রাসুল (সা.)-এর চাচা আবু লাহাব বলে ফেললÑ ‘মুহাম্মদ তোমার অমঙ্গল হোক! এ জন্যই আমাদের সমবেত করেছিলে?’ এ বলে গালাগালি করতে করতে আবু লাহব ও সমবেত লোকেরা চলে গেল।
এ দাওয়াতের ফলে তাৎক্ষণিক কোনো সুফল দেখা না গেলেও মক্কার ঘরে ঘরে রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা ও উপদেশ সম্পর্কে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। হাটে-ঘাটে ও পথে-প্রান্তরে সর্বত্রই একই আলোচনা হতে লাগল, ফলে বিরোধ ও অস্বীকৃতির মধ্য দিয়েই ইসলামের বাণী দিকে দিকে প্রচারিত হতে লাগল। সময় চলার সঙ্গে সঙ্গে নবীজির একত্ববাদের দাওয়াত পৃথিবীব্যাপী ছড়িতে পড়তে লাগল, দলে দলে মানুষজন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করল। (আর-রাহিকুল মাখতুম : ৮৪-৮৬ পৃ)