মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন, তদন্ত শুরু

মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন, তদন্ত শুরু
মেজর সিনহা হত্যা ঘটনায় তদন্ত কমিটি পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি পুনর্গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরিবর্তন করা হয়েছে কমিটির আহ্বায়ককে। ৩ জনের কমিটিকে শক্তিশালী করতে আরও এক সদস্য বাড়িয়ে ৪ জনের কমিটি করা হয়েছে।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে নতুন কমিটির বিষয়টি জানানো হয়।

কমিটির নতুন আহ্বায়ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) যুগ্মসচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে।

অন্য সদস্যরা হলেন- সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি (জিওসি, ১০ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, কক্সবাজার এরিয়া মনোনীত), চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপপুলিশ পরিদর্শকের উপযুক্ত প্রতিনিধি এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি।

এর আগের কমিটিতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকেই আহ্বায়ক করা হয়েছিল। তার সঙ্গে দু’জন সদস্য রাখা হয়েছিল কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধিকে। নতুন কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন কমিটির শেষ সদস্য হিসেবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে পদাধিকারবলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে।

কমিটির কার্যপরিধি বর্ণায় অবশ্য কোনো পরির্বতন আসেনি। আগের মতোই নির্দেশনায় বলা হয়, কমিটি ওই ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস বের করবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়সহ সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন ৭ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ খান।

ঘটনার পর পুলিশের দাবি, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে এক সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।

পুলিশ বলছে, তারা গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কিছু গাঁজা ও দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ নিহত সেনা কর্মকর্তার পিস্তলটি জব্দ করেছে।

ঘটনার তদন্ত শুরু

তদন্তে গঠিত কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান কক্সবাজারে এসে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এক সমন্বয় সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে বলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দু:খজনক ঘটনাটির একটি নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। তবে, কিভাবে এগিয়ে নিবেন তদন্ত কমিটির সেসব বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পুনর্গঠিত এই তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এই কমিটিতে রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের মনোনীত একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছে। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শকের মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

শুক্রবার (৩১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা পুনর্গঠন করা হয়েছে। ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে।

এই ঘটনার পর ২ আগস্ট কক্সবাজারে আসেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. জাকির হোসেন। সোমবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ পরিদর্শন করেন ডিআইজি। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে কিছুই বলেন নি।

এদিকে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তার নিজ বাসভবনে ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টা নিয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।