বাংলাদেশ জাতীয় দলের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি : টেলর

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি : টেলর
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি : টেলর

ক্রীড়া ডেস্ক।।

ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেননি যদিও তবে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব অধ্যায়ের ইতি টেনে দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজার নামের পাশে ‘অধিনায়ক’ লিখতে গেলে আগে ‘সাবেক’ শব্দটা বসাতে হয়। একদিন ক্রিকেটার হিসেবেও সাবেক বনে যাবেন নড়াইল এক্সপ্রেস। তবে খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তিনি যা দিয়েছেন, যে উচ্চতায় তুলেছেন, সেটা চির অমøান হয়েই থাকবে। তার নেতৃত্বকাল উজ্জ্বল এক অধ্যায় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট পুরাণে। অদম্য মানসিকতার মাশরাফি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বিশ^ ক্রিকেটেও।

পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সব থেকে সফল অধিনায়ক মাশরাফি। ক্রিকেটবোদ্ধারা অবশ্য কেবল সফল বলেই ক্ষান্ত দিতে নারাজ, তাদের অনেকের চোখেই মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। ক্রিকেটবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রেন্ডন টেলরও বলেছেন একই কথা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মাশরাফিকে দেখছেন তিনি। জাতীয় দল আর ক্লাব ক্রিকেটে অনেকবারই মুখোমুখি হয়েছেন মাঠে। সব মিলে খুব কাছ থেকেই খেলোয়াড় আর অধিনায়ক মাশরাফিকে দেখেছেন টেলর। দুজনের মধ্যে একটা উপভোগ্য দ্বৈরথও ছিল।

করোনাভাইরাস মহামারীতে এখন ঘরবন্দি সময় কাটছে জিম্বাবুইয়ান কিপার-ব্যাটসম্যানের। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শেষ সিরিজে জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া টেলরের চোখে মাশরাফি সত্যিকারের এক প্রতিদ্ব›দ্বী। জিম্বাবুয়ের সাবেক এই অধিনায়ক মাশরাফির গুণকীর্তনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য সেটা তুলে ধরা হলো
হ আপনি দিনে কতবার হাত ধুচ্ছেন?
টেলর : আমরা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমার মনে হয়, আমি এখন দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ বার হাত ধুয়ে ফেলছি। আমরা বিষয়টাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছি। আশা করছি এই অভ্যাসটা চিরকাল থাকবে। আপনার হাত সবকিছু স্পর্শ করছে, সুতরাং এই বিষয়টাকে (হাত ধোয়া) সম্মান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হ  এই বিরতি কি কোনোভাবে আপনার সঙ্গিনীকে সহায়তা করার সুযোগ দিচ্ছে?
টেলর : এটা ভিন্ন বিষয়। এটা উপলব্ধি করতে হবে যে আপনার রুটিনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এখন আপনি সবসময় একে অন্যের মধ্যে অবস্থান করছেন। তবে এতে কোনো ভুল নেই, এটা সম্পর্কের মধ্যে অন্যরকম একটা গতি আনবে। সঙ্গিনীর সঙ্গে বেশি সময় কাটানো বেশ উপভোগ্য যখন আমি সবসময় সফরে ব্যস্ত থাকতাম, তখনকার মতো নয়। রান্নাবান্নার কাজে আগের থেকে বেশি সময় দিচ্ছি, যদিও তিনিই সংসারটাকে ভালোভাবে চালিয়ে নিচ্ছেন।
হ   প্রথমবার কোনোকিছু রান্না করার চেষ্টা করেছেন কি?
টেলর : আমি খুব বাজে বাবুর্চি। তবে এটা এমন একটা বিষয়, বিগত দুই সপ্তাহে যা আমি বেশ উপভোগ করেছি। বাচ্চাদের জন্য বেশিরভাগ সন্ধ্যায় আমরা বারবিকিউ করেছি। তারাও শিখতে শুরু করেছে। এটা মজার। একসঙ্গে কীভাবে সময়টাকে উপভোগ করতে হয়, এই পরিস্থিতি আমাদের সেই শিক্ষাও দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি আরও ভালো হয়ে উঠছি, যদিও আমার স্ত্রীই (রান্নার) বিষয়টা পুরোপুরি দেখভাল করছেন।
হ অনলাইনে কোন সিনেমা আর অনুষ্ঠানগুলো দেখছেন?
টেলর : টাইগার কিং দেখছি আমি, নেটফ্লিক্সে এটা বেশ হিট হয়েছে। টিভিতে প্রচারিত পুরনো ক্রিকেট ভিডিওগুলো এখন বেশ উপভোগ করছি আমি। কারণ লাইভ কোনো খেলা নেই। এখানে অনেক ভালো জিনিস আছে, যেগুলো আমি বিগত দশ বছরে দেখিনি।
হ  কোন কোন সতীর্থের সঙ্গে কথা হচ্ছে আপনার?
টেলর : এই সময়টা আমাকে শেখাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে কীভাবে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়, যাদের আমি অনেকদিন দেখিনি। আমি কাউন্টি-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলাটা উপভোগ করছি, যেখানে আমি দারুণ তিনটি বছর কাটিয়েছি। অ্যালেক্স হেলস, লুক ফ্লেচার, স্টিভ মুলালি এবং হ্যারি গুনারি আমার আজীবনের বন্ধু। বর্তমানে দুবাইয়ে থাকা গ্রায়েম ক্রেমার, দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা চার্লস কভেন্ট্রিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার বিষয়টাও বেশ উপভোগ করছি আমি। ফোনে প্রতিদিন আমি তাদের একেক জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি।
হ পুরনো ক্রিকেটের কথা বললেন, এই ঘরবন্দি জীবনে আগের কোন ম্যাচের ভিডিওটা আপনি পুরোপুরি দেখতে চাইবেন?
টেলর : আমি অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৩৮ রানের ম্যাচটা দেখেছি। যেটাকে ইতিহাসের সেরা ওয়ানডে বলেই গণ্য করা হয়, বিশ^কাপের (২০১৯) ফাইনালটাও খুব সম্ভবত তেমনই একটা ম্যাচ। এটা খুব আগের নয়, তবে এটি দেখাও দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা ছিল।
হ বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি, যেটাতে শেষ বলে মাশরাফি মর্তুজাকে ছক্কা মেরে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, সেটা কেমন ছিল?
টেলর : অসাধারণ। এটা ১৪ বছর আগের কথা!
আমি সদ্যই বাংলাদেশ সফর থেকে ফিরেছি, যেখানে মাশরাফি অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেছে। কী দুর্দান্ত এক নেতা ছিলেন তিনি! অধিনায়কত্ব থেকে তিনি যেভাবে বিদায় নিয়েছেন, সেটা বেশ ভালো লেগেছে। আশা করি তিনি আরও কিছু ম্যাচ খেলবেন এবং সেরা অবস্থানে থেকেই শেষ করবেন। সন্দেহ নেই, তিনি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। একজন সত্যিকারের প্রতিদ্ব›দ্বী। তার সঙ্গে দারুণ একটা দ্বৈরথ ছিল। তিনি কয়েকবার আমাকে আউট করেছেন। তিনি সবসময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন।
২০০৬ সালের সেই ম্যাচটা আমি ইউটিউবে জুড়ে রেখেছি বিগত কয়েক বছরে এটা অনেকবার দেখেছি। এটা দুর্দান্ত এক ম্যাচ ছিল। আমার মনে আছে, একটা হ্যাটট্রিক হয়েছিল এবং জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৭ রান প্রয়োজন ছিল আমাদের। প্রয়োজনটা মেটাতে পারাটা ছিল দুর্দান্ত এক কীর্তি এবং এটা সিরিজে সমতা ফেরাতে আমাদের সহায়তা করেছিল এবং আমরা সিরিজ জয়ের পথে এগিয়ে গিয়েছিলাম।