বাংলাদেশী ড. নিনা পেনসিলভানিয়ায় অডিটর জেনারেল পদে ডেমোক্রেটিক পাটির প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী

বাংলাদেশী ড. নিনা পেনসিলভানিয়ায় অডিটর জেনারেল পদে ডেমোক্রেটিক পাটির প্রাথমিক নির্বাচনে জয়ী

শেখ খোরশান, যুক্তরাষ্ট্র ।।

২৩৫ বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক পাটির প্রাথমিক নির্বাচনে অডিটর জেনারেল পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ড. নিনা আহমেদ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজ্য পর্যায়ের একটি সম্মানজনক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচিত হলেন।
এ ছাড়া পেনসিলভানিয়া রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ এবং নারী অডিটর জেনারেল পদে প্রার্থিতার জন্য ডেমোক্রেটিক পাটি থেকে নির্বাচিত হলেন।
গত ২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সর্বশেষ ভোট গণনার পর নিনা আহমেদ পেয়েছেন ৪,৯৪,২৫২ ভোট (৩৪.৫৭%)।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাইকেল ল্যাম্ব পেয়েছেন ৩,৯৮,৭৭৫ ভোট (২৭.৯০%)।
পোস্টাল ব্যালটের কিছু ভোট এখনও বাকি থাকলেও ড. নিনাকে ১১ জুন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
প্রায় ৯৭ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা নিনা আহমেদকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাইকেল ল্যাম্ব অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নিনা আহমেদ ১০ জুন রাতে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এ বিজয় আমেরিকায় চলমান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে জড়িতদের বিজয়।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন হিসেবে আমি গর্বিত।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমেরিকায় সদা সরব নিনা আহমেদ বলেন, “আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে এ বিজয় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এখন অপেক্ষার পালা আগামী নভেম্বরের প্রধান নির্বাচন পর্যন্ত।”
করোনার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত আমেরিকায় নিনা আহমেদের নির্বাচিত হওয়া মোটেই সহজ ছিল না।
পেনসিলভানিয়ায় ডেমোক্রেট দলের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ডেমোক্রেট শ্বেতাঙ্গদের চরম বিরোধিতায় পড়েন তিনি।
রাজ্যের অনগ্রসর কমিউনিটির নানা শ্রমিক সংগঠন তাকে সমর্থন করে।
দলের রাজ্য পর্যায়ের বড় বড় নেতাদের বৈরিতার কারণে দৃশ্যত তার নির্বাচিত হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আসছে নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার পর রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ অডিটর জেনারেলের দায়িত্ব গ্রহণের আশা ব্যক্ত করেন ড. নিনা আহমেদ।
নিনা আহমেদের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও ডা. ইবরুল চৌধূরী বলেন, আমেরিকার ২৩৫ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশীদের এ অর্জন আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেবে।
তারা জানান, নিনা আহমেদের নির্বাচিত হওয়া কঠিন ছিল। দলের শক্তিশালী পক্ষটি তার বিরোধিতা করেছে। নিনা আহমেদ মুসলমান, গাত্রবর্ণে শ্বেতাঙ্গ নয়। শুধু রাজ্যের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাজের সম্পর্কের কারণেই তার এ বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে জিয়াউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞানী নিনা আহমেদ একজন নারীবাদী ও প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশী-আমেরিকান।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে তিনি একজন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
নিনা আহমেদ প্রার্থিতা ঘোষণা করে বলেছিলেন, “অডিটর জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হলে আমি সরকারি অফিসে যৌন হয়রানি বন্ধের বিষয়ে গুরুত্ব দেব। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করব এবং অডিটর জেনারেলের অফিসের ক্ষমতা ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ডেটা ও রিসোর্স সরবরাহ করে এনআরএ’র সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অস্ত্র সুরক্ষা আইন পাস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যা নারী ও অন্য বর্ণের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”
এর আগে নিনা আহমেদ ফিলাডেলফিয়া নগরের মেয়র জিম কেনির অধীনে পাবলিক এনগেজমেন্টের ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী কমিশন, ব্ল্যাকমেল এনগেজমেন্ট অফিস ও যুব কমিশনের তদারকি করেছেন এবং এলজিবিটি বিষয়ক কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
তিনি এশীয় আমেরিকান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জবাসীর বিষয়ে বারাক ওবামার উপদেষ্টা কমিশন এবং এশিয়ান আমেরিকান বিষয়ক মেয়র নাটারের কমিশনেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিনা ও তার স্বামী আহসান ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন ফিলাডেলফিয়ায়। তার দুই কন্যা জোয়া ও প্রিয়া।
ঢাকার অধীবাসী নিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় দেশে বেড়ে ওঠেন এবং ২১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
তিনি জানান, আমেরিকান টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখে দেখেই তার ইংরেজি উচ্চারণে উন্নতি হয়েছিল। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। পরে আণবিক জীববিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য অর্জন করেন। পেশার বাইরে নিনা একজন সফল নাগরিক নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।