বঙ্গবন্ধু টানেলের বড় বিপদ জলোচ্ছ্বাস, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এই প্রকল্প! 

বঙ্গবন্ধু টানেলের বড় বিপদ জলোচ্ছ্বাস, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এই প্রকল্প! 
বঙ্গবন্ধু টানেলের বড় বিপদ জলোচ্ছ্বাস, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এই প্রকল্প! 

ইব্রাহিম খলিল, দৈনিক সময়ের আলো ।।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের জন্য ওঁৎ পেতে আছে নতুন এক বড় বিপদ। তা হচ্ছে সাগরের জলোচ্ছ্বাস, যা চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থেকে নেভাল একাডেমির রেডকিন চত্বর পর্যন্ত প্রায় ১১০০ মিটার উন্মুক্ত উপকূল দিয়ে আঘাত হানতে পারে।

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই মেগা প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই স্বপ্নের এই টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করবেÑ এমন আশাবাদ প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর।

প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপদের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ মিটার পর্যন্ত বেশি জলোচ্ছ্বাসের রেকর্ড রয়েছে, যা মাথায় রেখে আউটার রিং রোড তৈরি করা হয়েছে। এই রিং রোড সাগরের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ মিটার বেশি জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে পারবে।

কিন্তু পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে নেভাল একাডেমির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের রেডকিন চত্বর পর্যন্ত কোনো বাঁধ নেই। ওয়েস্ট পয়েন্টসহ পুরো এলাকাটি উন্মুক্ত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস হলে মোহনার এই অংশ দিয়ে পানি ঢুকে টানেল প্লাবিত করবে। এতে যে বিপর্যয় দেখা দেবে তা সামলানো সম্ভব হবে না। ওয়েস্ট পয়েন্টসহ উন্মুক্ত স্থানটিকে টানেলের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি পতেঙ্গা এলাকার গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কের ইন্টারসেকশন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করার সময়ই টানেলের জন্য নতুন এই হুমকির বিষয়টি উঠে আসে।

এতে বলা হয়, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণকালে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। এতে সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে নগরী রক্ষা পাবে। এই বাঁধ নির্মাণকালে বিগত ১০০ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

এ অবস্থায় টানেল নিরাপদ করতে আউটার রিং রোডের সুউচ্চ বাঁধকে রেডকিন চত্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান পাড়ের মতো করে বাঁধটি না করে পতেঙ্গা থেকে কোনাকুনি রেডকিন চত্বর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করার চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। এর ফলে ওয়েস্ট পয়েন্ট এলাকাটি বাঁধের ভেতরে চলে আসার পাশাপাশি সাগর থেকে বিপুল পরিমাণ ভূমিও পুনরুদ্ধার (রিক্লেইম) হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মিত হলে উন্মুক্ত স্থানটি সুরক্ষিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে টানেল প্লাবিত হওয়ার কোনো শঙ্কা থাকবে না। টানেলের স্বার্থেই জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আউটার রিং রোডের ইন্টারসেকশন নিয়ে কাজ করছি আমরা। বিষয়টি খুবই জরুরি। একই সঙ্গে ওয়েস্ট পয়েন্টের উন্মুক্ত স্থানটিও বড় হুমকি বলে আমাদের মনে হচ্ছে। তাই এই স্থানটিকেও বাঁধের ভেতরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেজন্য আমরা নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে আউটার রিং রোডের বিদ্যমান প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। রিভাইজড প্ল্যান দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

টানেল প্রকল্পের তথ্যমতে, যানজট নিরসন ও শিল্পের সম্প্রসারণে চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এটা প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম। প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে উপমহাদেশের প্রথম এই টানেল নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে ঋণ হিসেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থের জোগান হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। নগরীর পতেঙ্গা থেকে শুরু হওয়া প্রথম সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় গত বছরের ৬ অক্টোবর। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে সংযোগ সড়ক থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু। প্রকল্প ঘিরে ইতোমধ্যে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা এলাকায় বিশেষ অর্থনীতি অঞ্চলসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। - সময়ের আলো ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;