বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না স্মার্ট কার্ড সংকটের কারণে

বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না স্মার্ট কার্ড সংকটের কারণে

মনিরুল ইসলাম মুন্না ।।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম মেট্রো এবং জেলা সার্কেল স্মার্টকার্ড ছাপা এবং সরবরাহ বন্ধ থাকায় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না । এতে আটকে রয়েছে হাজার হাজার গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিকল্প হিসেবে গ্রাহকদের প্রদান করা হয়েছে ‘প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ’ নামে একটি বৈধ কাগজ। এটির মাধ্যমে স্মার্টকার্ড (ড্রাইভিং লাইসেন্স) না আসা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন চালক।

তবে নির্দিষ্ট মেয়াদ চলে গেলে পুনরায় সার্কেল অফিসে এসে রিনিউ করতে হয় কাগজটি। যার ফলে একটি লাইসেন্সের জন্য কয়েকবার বিআরটিএ অফিসে আসতে হচ্ছে গ্রাহকদের। অন্যদিকে এ রসিদটি হারহামেশায় নকল করছে একটি চক্র।

সোমবার বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো এবং জেলা সার্কেলে গেলে এসব তথ্য জানা যায়।

বিআরটিএ সদর দফতর বলছে, প্রিন্টিংয়ের জন্য ব্যবহৃত ‘ডুয়েল ইন্টারফেজ পলিকার্বনেট’ কার্ডটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও অনুমোদন না পাওয়ায় লাইসেন্স প্রিন্ট বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন বিআরটিএ কার্যালয়ের লাইসেন্স শাখায় গিয়ে অসংখ্য আবেদনকারীর সমাগম দেখা গেছে। কেউ ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য সিরিয়ালে রয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহীতাদের সিরিয়াল দেখা গেলেও তারা কেউ লাইসেন্স পাননি। সবাইকে নতুন তারিখ দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, স্মার্ট কার্ড না আসা পর্যন্ত এভাবে আমাদের নতুন তারিখ বসিয়ে দিতে হবে।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীদের অভিযোগ, তারা বিআরটিএতে আবেদন করে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্মার্ট লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছেন। মোবাইল ফোনে এসএমএস এলেই তারা স্মার্ট লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করবেন। প্রত্যাশিত সেই এসএমএস আর আসছে না। বিআরটিএ থেকে ইস্যু করা একটি অনুমতিপত্রের মাধ্যমে তারা কাজ চালাচ্ছেন। এই অনুমতিপত্রের নকল-আসল যাচাই করার কোন সুযোগ ট্রাফিক বিভাগের নেই।

ট্রাফিক বিভাগের এক সার্জেন্ট বলেন, কাগজটি (প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ) দেখালেই আমাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না আসল নাকি নকল। আর বিআরটিএ চালকদেরকে কয়েক রকমের লাইসেন্স প্রদান করেছে, আর তাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছি। আমার অনুরোধ থাকবে- সবাই যাতে একই রকম লাইসেন্স পায়। এক এক সময় এক এক রকম যাতে না হয়।

লাইসেন্স পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন আগে বিআরটিএতে পরীক্ষা দিয়েছেন অনেকে। এরপর ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অস্থায়ী রোড পারমিট (প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ) দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১০-১১ মাস যাবৎ দুই-তিন দফা এ মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছে না বিআরটিএ। দীর্ঘ সময়ে কাগজে লেখা অস্থায়ী রোড পারমিট ছিঁড়ে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষে লাইসেন্সের খোঁজ নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু লাইসেন্স কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলছেন না।

সরোয়ার কামাল একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে কাজ করেন। তিনি একটি মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য এসেছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে লার্নার ফরমের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের (অপেশাদার চালক) আবেদন করার ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও পাননি সেই স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স।

আরেক আবেদনকারী ওয়াসিম আহমেদ বলেন, একটা কার্ড আসতে এতদিন লাগে কেন? সরকার সড়ক পরিবহনের নতুন আইন বাস্তবায়ন করলেও প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুন মাস থেকেই নতুন স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু বন্ধ রয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সীমিত আকারে কিছু স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা নগণ্য।

গত ছয় মাসে হাজারও আবদেনকারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন সংখ্যা। কবে নাগাদ নতুন স্মার্ট লাইসেন্স পাওয়া যাবে এর নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। ২০১৬ সাল থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিআরটিএ এই স্মার্ট লাইসেন্স ইস্যু করছে।

বিআরটিএ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। চুক্তিতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫ লাখ স্মার্ট লাইসেন্স তৈরি করে দেয়ার কথা এ টাইগার আইটি’র। কিন্তু ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিআরটিএ ১৪ লাখ ৫০ হাজারের মত স্মার্ট লাইসেন্স নিয়ে নেয়। ফলে পূর্বের মত গ্রাহকদের লাইসেন্স প্রদান করতে পারছে না।

বিআরটিএ সদর দফতরের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, আমাদের আগের প্রতিষ্ঠানের সাথে যেভাবে চুক্তি হয়েছে তা থেকে অল্প কিছু সংখ্যক কার্ড পাবো। আর সেগুলো থেকে আমরা জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর যারা মিশনে যাচ্ছেন, তাদের প্রদান করছি। তাছাড়া বিদেশ যাত্রীদের জরুরি ভিত্তিতে অল্প কিছু স্মার্টকার্ড দিচ্ছি।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেন, ‘স্মার্টকার্ডের অনুমতির জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কার্ড তৈরির নতুন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। শীঘ্রই এর একটি সমাধান হবে বলে মনে করছি’।