পরকীয়ার জেরে প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে করাত দিয়ে কাটলো স্ত্রী, গ্রেফতার ২ 

পরকীয়ার জেরে প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে করাত দিয়ে কাটলো স্ত্রী, গ্রেফতার ২ 
পরকীয়ার জেরে প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে করাত দিয়ে কাটলো স্ত্রী, গ্রেফতার ২ 

গাজীপুর প্রতিনিধি ।।

পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামী সুমন মোল্লার লাশ করাত দিয়ে কেটে ছিন্নভিন্ন করেছিল আরিফা বেগম (২৪)। সুমনের হাত, পা ও মাথা কেটে আলাদা করে বস্তায় ভরে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়। তার আগে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরে বালিশচাপা দিয়ে সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল স্ত্রীরূপী ভয়ঙ্কর নারী আরিফা ও তার পরকীয়া প্রেমিক তনয় সরকার (৩১)।

ঘটনাটি গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর এলাকার। অবশেষে রোববার অনেকটা ‘ক্লু’লেস এই নৃশংস হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত স্ত্রী আরিফা ও তার প্রেমিক তনয়কে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি)। দুজনকেই তাদের ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৯ মে রাজধানীর দক্ষিণখানে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় স্ত্রী তার প্রেমিক একটি মসজিদের ষাটোর্ধ্ব ইমাম আব্দুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তার স্বামী আজহারুলকে হত্যার পর লাশ কেটে ছয় টুকরো করে। সেই লাশের টুকরোগুলো ফেলা হয় মসজিদেরই সেপটিক ট্যাঙ্কে। প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের কাশিমপুরে সুমন মোল্লার সঙ্গেও।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, মহানগরীর কাশিমপুর সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার জনৈক জামাল উদ্দিনের বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে গত ২১ এপ্রিল অজ্ঞাতনামা যুবকের অর্ধগলিত হাত, পা ও মাথাবিহীন মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে ক্লুলেস হত্যার রহস্য খুঁজতে থাকে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা করা হয় আরিফা ও তনয়কে। এক পর্যায়ে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে নিহতের পরিচয়সহ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, নিহত সুমন মোল্লা ও আরিফা প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে তারা দ্বিতীয় বিয়ে করে। একই গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে আরিফার সঙ্গে সুমনের বিয়ের আগেই গোপন প্রেমের সম্পর্ক ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বী তনয় সরকারের। বিয়ের পর বিষয়টি আরিফার স্বামী সুমন মোল্লা জেনে গেলে স্ত্রীকে মারধর করেন এবং তনয়কেও শাসান। বিষয়টি নিয়ে মাঝেমধ্যেই স্ত্রী আরিফার সঙ্গে সুমনের ঝগড়া-বিবাদ হতো। তনয়কেও সুমন মারধর করেন। এক পর্যায়ে স্ত্রী আরিফা তার প্রেমিক তনয়কে নিয়ে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ১৯ এপ্রিল রাতে সুমনকে স্ত্রী আরিফা দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে। এরপর তার প্রেমিক তনয়কে নিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে সুমনকে হত্যা করে। শেষে ঘরের দরজা বন্ধ করে তারা বের হয়ে যায়। দুই দিন পর মৃতদেহ গুম করার জন্য দোকান থেকে নতুন করাত কিনে ও চাপাতি দিয়ে দুজনে মিলে নিহত সুমনের হাত, পা, মাথা ও পেট কেটে ফেলে। সে রাতেই শুধু পেটের অংশ পাশ্ববর্তী বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে এবং দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন পাঁচটি অংশ পলিথিনে মুড়িয়ে চক্রবর্তী তেঁতুইবাড়ী মৌজার মিল সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে ওই ময়লার ভাগাড় থেকে বিচ্ছিন্ন পাঁচটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত সুমন মোল্লা বাগেরহাটের চিতলমারীর গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। এ ছাড়া আরিফা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার নারায়ণপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে। সুমন তার স্ত্রী আরিফাকে নিয়ে কাশিমপুর সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট এলাকার মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। একই বাড়িতেই ভাড়া থাকত আরিফার প্রেমিক তনয় সরকার। তনয় ফরিদপুরের মধুখালীর নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে।