দেশে শিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার ১৩% নারী : সমীক্ষা

দেশে শিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার ১৩% নারী : সমীক্ষা
দেশে শিক্ষকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার ১৩% নারী : সমীক্ষা

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

বাংলাদেশে ২০২১ সালে এক হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর এরমধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ২২৫টি। একই সময়ে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১৯২টি। আর ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা।

উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা ক্ষেত্রে, নারী ও কন্যা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষক দ্বারা, যা যথাক্রমে ১৭ ও ১৩ শতাংশ।

এক বছরের এই হিসাব উঠে এসেছে বাংলাদেশে মহিলা পরিষদের এক সমীক্ষায়। বুধবার এই সমীক্ষার তথ্য এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে 'বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০২১: ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি ও যৌতুক' শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে সারাদেশে মোট ১ হাজার ৩৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৮১০ টি এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ২২৫ টি। অন্যদিকে ধর্ষণের চেষ্টা ১৯২ টি, যৌতুকের ঘটনা ১১৪ টি এবং উত্যক্তকরা ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ৯৬ টি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যৌতুক, উত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ওই এক সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করে। ১২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্যের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করেছে মহিলা পরিষদ।

এতে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের নারী ও শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়, ১৪-১৮ বছরের কন্যারা ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও দলবদ্ধ ধর্ষণে শিকার হয়েছে যথাক্রমে ১৮, ১১ ও ৩১ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ১০-১৩ বছরের শিশুর সংখ্যা ২২ শতাংশ। যৌতুকের ক্ষেত্রে ১৮-২২ বছরের নারীরা সাধারণত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। এই হার ২২ শতাংশ।

কন্যাদের মধ্যে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই হার ৪৫%, দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ৫২% এবং উত্ত্যক্তের ক্ষেত্রে ৬৭%।

কর্মজীবী নারীদের তুলনায় গৃহিণীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য ৮৩%, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, উত্ত্যক্তকরণ, ধর্ষণের চেষ্টায় যথাক্রমে ৩৬%, ৩৭%, ১৭% এবং ৪৬% গৃহিণী নির্যাতনের শিকার হন। এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়স্কদের কন্যা এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিচিত মানুষ, বিশেষ করে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়।

লক্ষ্যণীয় যে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে তরুণদের সম্পৃক্ততা বেশি। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৬ শতাংশের বয়স ১১-৩০ বছর। দলবদ্ধ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর এবং উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১৬-৩০ বছর। কন্যা ও নারী সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে চালক দ্বারা যথাক্রমে ৫ ও ৩ শতাংশ।

অপরদিকে উত্যক্তকরন ও যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা ক্ষেত্রে, নারী ও কন্যা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষক দ্বারা, যা যথাক্রমে ১৭ ও ১৩ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, নারীরা নিজ গৃহে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ এবং ঝুঁকির মধ্যে থাকে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মূল কারণ নারীর প্রতি অধস্তন মনোভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।

সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নানা ধরণের গবেষণা করে থাকে। তবে এটা ঠিক গবেষণা নয়, সমীক্ষা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গবেষণা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার ধরণ (প্যাটার্ন) বা কোন ধরণের অপরাধ বেশি হয় তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রীনা আহমেদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান।

খালেদ / পোস্টকার্ড;