জাহাজ থেকেই ফেরত যাবে সীতাকুণ্ডে আসা ১৭ চীনা নাবিক

জাহাজ থেকেই ফেরত যাবে সীতাকুণ্ডে আসা ১৭ চীনা নাবিক
জাহাজ থেকেই ফেরত যাবে সীতাকুণ্ডে আসা ১৭ চীনা নাবিক

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি ।।

সীতাকুণ্ড সাগর উপকূলে চীন থেকে ভাঙার জন্য আনা এক জাহাজে ৩ দিন ধরে আটকা পড়ে আছেন ১৭ চীনা নাবিক। তাদের তীরে নামতে দেয়নি উপজেলা প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাপানের পতাকাবাহী ইউনি হারভেস্ট নামের কার্গো জাহাজটির ওজন প্রায় ৯ হাজার ২০০ মেট্রিকটন। জাহাজটি এসেছে চীন থেকে। এটি ২০ জানুয়ারি চীনের উইফং বন্দর থেকে রওয়ানা দেয় এবং গত শনিবার বিকালে একে কাটার জন্য সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লালবেগ শিপইয়ার্ডে রাখা হয়। কিন্তু এতে থাকা চীনা নাবিকদের প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আতঙ্কে নিচে নামতে দেওয়া হয়নি। বিকেলে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে নাবিকদের করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। তবে তাদের শিপিং এজেন্টের মাধ্যমে সে দেশে আবার পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তবে জাহাজটির আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ১৭ চীনা নাবিকের শরীরে কোনো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নেই।

জাহাজটির আমদানিকারক লালবেগ শিপইয়ার্ডে মালিক আবুল হাসেম আবদুল্লাহ বলেন, ‘চীন থেকে জাহাজটি কাটতে আনার পর যথানিয়মে ইয়ার্ডে সৈকতায়ন করা হয়। পরে জাহাজ থেকে অন্যান্য দেশের নাবিকরা নেমে গেলেও ১৭ চীনা নাবিক এতে আটকা পড়েছেন। আমরা তাদেরকে সে দেশে পাঠানো ব্যবস্থা করছি। এখনো বিমানের টিকিট পাওয়া যায়নি। তাই পাঠানো হচ্ছে না। বাকী নাবিক গুলোর ছিল ঘানার।

তিনি বলেন, তাদের শিপিং এজেন্টের মাধ্যমেই পাঠাতে হবে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আর এস শিপিং এজেন্টের মাধ্যমেই আমি জাহাজটি কিনেছি। এটি এসেছে ঘানা থেকে। কিন্তু জাহাজের ১৭ নাবিক চীনের। তাই এতো আতংক।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, ‘জাহাজ সৈকতায়ন করার আগে নাবিকদের তথ্য দেওয়ার নিয়ম থাকলেও শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ তা কাউকে অবহিত করেনি। ‘কিন্তু পরবর্তীতে আমরা জানার পর পুনরায় পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করেছি। এতে দেখা যায় নাবিকদের কারোই করোনাভাইরাসের লক্ষণ নেই। নাবিকরা জাহাজে ছিলেন ২১ দিনের মতো। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ১৪ দিনে দেখা যায়।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আর এস শিপিং এজেন্টের মালিক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। কাগজপত্র ঠিক হলে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নাবিকরা বহিনোঙ্গরে আসার পর মেডিকেল টিম তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তাদের করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। এরপরও শিপইয়ার্ডে জাহাজ নোঙ্গর করার পর কিছূ ফরমালিটিস আছে সেগুলো না করায়। এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারী চীনের চারটি বন্দর ঘুরে একটি কার্গো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসায় বহির্নোঙ্গরে মেডিকেল টিম পাঠিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চেকআপ করা হয়েছে প্রত্যেক ক্রুকে। তবে আশার কথা হলো, ২৪ জন ক্রুর মধ্যে কারোরই করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

বন্দর সূত্র মতে, চীনের তিয়াং জিং, কিংডাও, লিয়ানইউগান ও ডালিয়া সমুদ্র বন্দর খেকে মালামাল নিয়ে সর্বশেষ সিংগাপুর সমুদ্রবন্দর হয়ে লিবিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ সেভশী নেহা-২ বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসে। সাধারণ কার্গো জাহাজটি স্ক্র্যাপ ও স্টিল পণ্য নিয়ে নোঙ্গর করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে। এটিতে ২৪জন ক্রু রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ২২জন, নেপালের ১জন এবং রাশিয়ার ১জন ক্রু রয়েছেন। মেডিকেল টিমের তথ্যমতে ক্রুরা সকলেই সুস্থ রয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের উপ-সংরক্ষক ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেছিলেন, চীন থেকে জাহাজটি আসায় আমরা বিশেষ গুরুত্বের সাথে সব ক্রুকে পরীক্ষা করার জন্য মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি। তবে কারো কাছে কোন ধরনের সমস্যা বা আশংকা পাওয়া যায়নি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমরা একটি মেডিকেল ভ্যাসেল অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছি। বহির্নোঙ্গরে বা জাহাজে কাউকে অসুস্থ পেলে বন্দর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্তকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে, বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজ আসার আগেই ঘোষণা দিতে হবে করোনাভাইরাসমুক্ত। বন্দরের রেডিও কন্ট্রোল বিষয়টি নিশ্চিত করে ফ্রেশ অ্যরাইভাল বুকে লিপিবদ্ধ করে রাখবে। ৩০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষের নৌ-বিভাগের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন জহিরুল ইসলাম কতৃক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে স্থানীয় শিপিং এজেন্টদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, প্রতিদিন গড়ে ১০টি জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এরমধ্যে নিয়মিত চীন থেকে আসা জাহাজ থাকছে ২-৩টি। প্রতি জাহাজে ৩৫-৪০জন ক্যাপ্টেন-প্রকৌশলী থাকেন। তাদের অনেকেই জাহাজ থেকে নেমে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করছে। কিন্তু থার্মাল স্ক্যানার বা এই কোনো ধরনের মেডিকেল চেকআপ ছাড়াই তারা বন্দর থেকে নগরে প্রবেশ করতো। চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে এখন থেকে বহির্নোঙ্গরেই চেকআপ করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের সন্দেহ থাকা সব জাহাজের ক্রুদের।