জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা ।।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বা যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তাদের একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে, যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ হয়। তাই জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। 

বুধবার সকালে গণভবনে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। 

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা ভোট চোর ছিল, রীতিমত ভোট ডাকাত ছিল, তারাই এখন গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে তাদের কাছে শুনতে হয় এসব কথা। এগুলো মাঠের কথা মাঠে থাকবে। আমরা জনতার সঙ্গে থাকব, জনতার পাশে থাকব।  

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের এদিন দেশে ফিরে আসেন। বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেসবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি ও সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার দিনের কথা স্মৃতিচারণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেদিন ফিরে এসেছিলাম, পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। এ সময় তাকে আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে অনেকে কথা বলে, ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলে। ৭৫ সালের পর থেকে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি, ভোট নিয়ে খেলা, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগেরই নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কার করে করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে গণমুখী করা হয়েছে, ভোট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’ এই স্লোগান দিয়ে, মানুষকে যে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। এটা তো আর কারো না। তারপর নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেওয়া হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে ভুয়া ভোট দিয়ে ভোটার তালিকা হতো সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, নির্বাচনী পদ্ধতিকে যতটুকু সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন, এগুলো তো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা। তারপরও কেউ আমাদের ছবক দিতে আসে গণতন্ত্রের, নির্বাচনের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের  চিন্তা করে, বাকিরা লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। সে কথা মাথায় রেখে ওই সন্ত্রাসের দল, খুনির দল, ওই যুদ্ধাপরাধীদের দল- যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই। 

তিনি বলেন, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা সরকারে এসেছি। তাদের বিশ্বাস-আস্থাটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।  

দলকে সাংগঠনিক ভাবে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি  বলেন, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় তার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে, এটিই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি, জাতির পিতার সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।  

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ না, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি। সততার পাশাপাশি উদ্দেশ্যটা যদি সৎ হয়, তাহলে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়। এই কথাটা তিনি সবসময় মনে রাখেন। লক্ষ্য একটাই, দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেওয়া। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানো একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে। ধন-সম্পদ কারো চিরদিন থাকে না। আর মরলেও মাটির নিচে কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়।  

মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজ যখন একজন ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দিই, তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়, আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং সার্থকতা আর কিছু নেই। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;