চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহের ভারে কাউন্সিলর প্রার্থীর দলীয় সমর্থন তুলে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ!

চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহের ভারে কাউন্সিলর প্রার্থীর দলীয় সমর্থন তুলে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের মধ্যে ‘চট্টগ্রামের কোন নেতা কোন অপকর্মে জড়িত, কোন নেতা কি ধরণের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সে সম্পর্কে জানেন চট্টগ্রামের নেতারাই। কিন্তু এই চট্টগ্রামের সাংগঠনিক নেতৃত্ব না জানিয়ে, তাদের মতামত না নিয়ে এমন সব ব্যক্তিদের প্রতি দল সমর্থন দিয়েছে যারা পতিতা ব্যবসা, মাদক, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং পরিচালনার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত। এমনকি কোনো সময়, কোনো কালেই মূল সংগঠন আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনেরও কোনো পর্যায়ের নেতা ছিলেন- এমন ব্যক্তিদেরও ভুয়া দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন যারা দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক পর্যন্ত রাখেনি। কিছু এলাকা আছে, যেখানে সংসদ সদস্যের সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকায় অনেক ভালো ও অভিজ্ঞ প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর প্রভাবে দলটিতে একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহ করেছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছেন। এবং তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা নির্বাচন করবেন। এমন পরিস্থিতিতে হয় দলীয় সমর্থন পরিবর্তন করতে হবে না হয় সমর্থন তুলে নিয়ে উন্মুক্ত করে দিতে হবে’।

নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র এক নেতা এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ৪১ টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৭ টি ওয়ার্ডে গড়ে ৪ জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন যারা দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থন প্রত্যাহার না হলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির কোনো মতামত না নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় ইতোমধ্যে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়ও দল সমর্থিত কাউন্সিলরপ্রার্থীদের জন্য কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটিগুলো শুধুমাত্র দল মনোনীত একক মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী কমিটি গঠন করে কাজ করবে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, থানা কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এসরারুল হক, সাবের আহম্মদ, ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, দিদারুল আলম মাসুম, আবুল হাসনাত বেলাল ও নুর মোস্তফা টিনু। এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর দাবানলে পুড়তে যাওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচন সমন্বয়কারী হিসেবে দলের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের সমর্থনের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার পরিণতি ভালো হবে না মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এতেও এখন পর্যন্ত কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিদ্রোহী কাউন্সিলরপ্রার্থীদের নিয়ে সভা করার কথা রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের। এতেও কাজ না হলে মনোনয়নপ্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করে ১০ মার্চ দলীয় সমর্থন তুলে নিয়ে উন্মুক্তভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিতে পারে দলটি। ফলে দলের যে ৫৫ জন কাউন্সিলর সমর্থন পেয়েছিলেন তারাও সাধারণ প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করতে হবে। এতে করে সঠিক ও উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের মতে, দলীয় সমর্থন তুলে নিয়ে উন্মুক্ত নির্বাচনের সুযোগ দিলে যে সমস্ত অপরাধী, প্রশ্নবিদ্ধ কথিত নেতারা দলের উপর ভর করে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন তাদের সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হবে। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিই জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তবে, আ’লীগের অনেকে বলছেন, এভাবে উন্মুক্ত করে দিলে ভোট ভাগাভাগির শংকা বাড়বে। ফলে বিএনপি ও অন্যান্য যারা নির্দলীয় প্রার্থী হয়েছেন তারা নির্বাচনের ফসল ঘরে তুলবে। এই ধরণের সুযোগ সৃষ্টি না করে প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীদের সমর্থন তুলে নিয়ে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় সমর্থন প্রদানের নির্দেশনা আসলে আরো ভালো হবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একেবারে উন্মুক্তভাবে নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের ছেড়ে না দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দলীয় প্রার্থীদের বাদ দিয়ে ভালো কাউকে সমর্থন দেয়া। এতে বিদ্রোহের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। অনেকগুলো ওয়ার্ডে একজন খারাপ মানুষকে ঠেকাতে একই দল থেকে একাধিকজন মনোনয়ন জমা দিয়েছে। এই সংখ্যাও কমে যাবে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।