চট্টগ্রামে করোনার উৎস কি খুলশীর সুপার শপ ‘বাস্কেট’ ?

চট্টগ্রামে করোনার উৎস কি খুলশীর সুপার শপ ‘বাস্কেট’ ?
চট্টগ্রামে করোনার উৎস কি খুলশীর সুপার শপ ‘বাস্কেট’ ?

ফারুক মুনির ।।

করোনা ভাইরাস শনাক্তের ঘটনায় যেমন তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে নানান প্রশ্নের। এক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার পর একে একে ১১টি বাড়ি লকডাউন করলো প্রশাসন। এরপর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল ১২ মার্চ করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের মেয়ে এবং মেয়ের শাশুড়ি সৌদি আরব থেকে ওমরা করে আসার সময় করোনাভাইরাস সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ওমরা ফেরতদের কারও শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, টেস্টেও আসলো নেগেটিভ। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে করোনার উৎস কী? এর মধ্যেই প্রকাশ পেল করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের এক ছেলের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে।

সীতাকুণ্ডের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে ওই ছেলের নমুনা পরীক্ষায় ফল এসেছে ‘পজিটিভ’। এতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, ছেলেই কি তাহলে বাহক। সন্দেহের দানা আরও প্রকট হয়ে দেখা দিল, যখন জানা গেল সেই ছেলে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে অবস্থিত সুপারশপ ‘দি বাস্কেটে’ কর্মরত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের হিসেবে ৩০ জনেরও বেশি বিদেশি নাগরিক মার্চে চট্টগ্রাম এসে খুলশীতে বসবাস করছেন। যাদের সবাই হয় সুপারশপ ‘বাস্কেট’, না হয় ‘খুলশী মার্ট’ কিংবা অন্য সুপারস্টোরে কেনাকাটা করে থাকেন। নতুন করে প্রশ্ন উঠছে করোনা কি কোন বিদেশি থেকে ছড়িয়েছে?

সেই প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা বাস্কেট সুপারস্টোরের মালিকসহ সব স্টাফকে ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। যে যেখানে আছেন তাদের সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের নির্দেশনা লোকাল প্রশাসনকে দিয়ে দিয়েছি। দ্রুত তাদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা আমরা করছি।’

বাস্কেটের পরিচালক নাজমুল হোসাইন সীতাকুণ্ডের ৯ নম্বর ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বিএমএ গেইট এলাকার ইসহাক চেয়ারম্যানের পুত্র। ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার এলাকায় বাস্কেটের দুজন স্টাফ আছেন। তাদের একজনের সর্দি-কাশি আছে। বাকিটা টেস্ট করানোর পর বোঝা যাবে। সোমবার (৬ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস্কেটের ৬ জন স্টাফ সীতাকুণ্ডের অধিবাসী। সীতাকুণ্ড প্রশাসন ওই ৬ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে তারা কাজ করছে।

বাস্কেট সুপার শপের পরিচালক নামজুল হোসাইন বলেন, ‘এটি জাতীয় দূর্যোগ। কোথা থেকে ছড়ালো সেটা তো আর নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রশাসন যা ভালো মনে করবে সে সিদ্ধান্ত নেবে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। আপাতত আমাদের সব স্টাফ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। এর মধ্যে তাদের মধ্যে লক্ষণ দেখা না গেলে, টেস্টে পজেটিভ না আসলে আমরা সময়মতো প্রতিষ্ঠান রান করবো।’

এদিকে পেশায় ব্যবসায়ী তেমনি একজন নিয়মিত গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাস্কেটে প্রচুর বিদেশীর আসা যাওয়া আছে। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকেও মার্চ মাসে প্রচুর বিদেশি নাগরিক চট্টগ্রামে এসেছেন, যাদের বেশিরভাগই খুলশী এলাকায় বসবাস করেন। তাদের থেকে ছড়ানোটাই সহজ সমীকরণ। কারণ সৌদি থেকে ওমরা করে আসা মহিলাটা বয়স্ক। যদি তাদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতো। তবে ওই বৃদ্ধার শরীরে অবশ্যই লক্ষণ প্রকাশ পেতো।’

বাস্কেটের গ্রাহক ও নগর পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা সুপারশপে যাই সময় বাঁচাতে এবং যথাযথ মানের পণ্যটি সংগ্রহ করতে। কিন্তু বাস্কেটের বিক্রয় কর্মী করোনাভাইরাস পজিটিভ আসায় আমিসহ আমার সার্কেলের সবাই আতঙ্কিত। এখন আমাদের সন্দেহ হচ্ছে কোন বিদেশি নাগরিক থেকে যদি করোনা ছড়ায়, তবে তা হবে আরো বড় দুঃসংবাদ। এক্ষেত্রে বাস্কেটকে ধরে নিতে হবে চট্টগ্রামের জন্য করোনার হটস্পট। আর যদি এটা নিশ্চিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর অনেক পেশার অনেক মানুষের শরীরে।’

তবে বাস্কেট বা খুলশীকে এখনই ‘হটস্পট’ ভাবতে চাইছেন না চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, ‘ওমরাফেরত দুই নারীর শরীরে করোনাভাইরাস না পেলেও তারা তা বহন করতে পারেন। হয়তো তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে করোনা তাদের কাবু করতে পারেনি। কিন্তু তাদের সংস্পর্শে আশা অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছে। আমরা আরো কিছু টেস্ট করার পর সমীকরণটা মেলানো যাবে।’