ঘুংঘুর সম্মাননা-২০২২ পেলেন ড. নূরুন্নবী

ঘুংঘুর সম্মাননা-২০২২ পেলেন ড. নূরুন্নবী
ঘুংঘুর সম্মাননা-২০২২ পেলেন ড. নূরুন্নবী

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

‘যে চেতনা ও দেশপ্রেম নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই চেতনায় আজও লিখে যাচ্ছেন ড. নূরুন্নবী। তিনি একটি আলােকিত প্রজন্ম গড়ার পথিকৃৎ। তাঁকে ঘুংঘুর সম্মাননা২০২২ দিতে পেরে লিটল ম্যাগাজিন ‘ঘুংঘুর’ নিজেদের ধন্য মনে করছে। এমন অনেক অভিব্যক্তিই প্রকাশ করেছেন অনুষ্ঠানের সুধীজন।

নিউইয়র্কে ১ আগস্ট সােমবার দিনটি এভাবেই অংকিত হয় অভিবাসী বাঙালিদের মানসপটে। অনুষ্ঠানটি ছিল জ্যাকসন হাইটসের 'নবান্ন পাটি হলে' 'ঘুংঘর' নিউইয়র্ক বইমেলা সংখ্যা ২০২২-এর প্রকাশনা ও সম্মাননা প্রদান উপলক্ষে। বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী শিরিন বকুলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে ছিল ‘ঘুংঘুর’-এর মােড়ক উন্মােচন ও তা নিয়ে কথা। আর দ্বিতীয় পর্বে ছিল ‘ঘুংঘুর সম্মাননা ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘুংঘুর-এর সম্পাদক ও বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন কবির। তিনি ঘুংঘুর-এর এ নয় বছরের পথচলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, 'ঘুংঘুর'ই একমাত্র লিটল ম্যাগাজিন, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংখ্যা প্রকাশ করেছে। আরও করার পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগােচ্ছে। তিনি বলেন, আজ আমরা একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানাতে পেরে সতনিই গর্বিত ও আনন্দিত। এই পর্বে ঘুংঘুর ও লিটল ম্যাগাজিনের পথচলা নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার। তিনি সাহিত্যে লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা ও আজকের কর্পোরেট শাসিত সাহিত্য বাজার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। ঘুংঘুর নিয়ে আলােকপাত করেন চলতি সংখ্যার অতিথি সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক আবেদীন কাদের। তিনি এ সংখ্যায় প্রকাশিত ভালাে ও মন্দ লেখাগুলাে নিয়ে কথা বলেন।

প্রথম পর্বে সাহিত্য ও চিত্রকলা নিয়ে কথা বলেন নন্দিত টিভি তারকা ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াত। তিনি বলেন, আমরা সৃজনে বিশ্বাস করি। আমরা জানার আগ্রহ নিয়ে পড়ি। সেই আলাে প্রজন্মের মাঝে ছড়ানাের জন্য কাজ করেই এগােতে চাই। সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের লেখা 'বাবা বলতেন' কবিতাটি আবৃত্তি করেন, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গােপন সাহা।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক কবি মিশুক সেলিম। নিউইয়র্কের সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য একাডেমি'র পথচলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক মােশাররফ হােসেন। এই সার্বিক আয়ােজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবক-শিল্পপতি ও ৩১তম নিউইয়র্ক বইমেলার আহ্বায়ক গােলাম ফারুক ভূঁইয়া।

এরপরই শুরু হয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি। প্রথমেই সূচনা বক্তব্য দেন ‘ঘুংঘুর সম্পাদনা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস।

ফকির ইলিয়াস তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই মহান জীবনে ড. নুরুন্নবীর পথচলাকে আমি তিনটি পর্বে যদি ভাগ করি তবে তা হচ্ছে, তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ,  রাষ্ট্র মানুষ ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর সংগ্রাম এবং তাঁর লেখালেখি। তিনি একজন বীর মুক্তিযােদ্ধা।এই উত্তর আমেরিকায় আসার পরেও তিনি বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল বাতিলের বিরুদ্ধে, ঘাতক দালালদের বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম সারিতে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই টমাস কিটিং নামে একজন মার্কিন আইনজীবিকে গণআদালতের মঞ্চে ঢাকায় আমরা পাঠিয়েছিলাম।

ফকির ইলিয়াস উল্লেখ করেন, তাঁর ধ্যান ও চেতনা থেকে অনেক তাত্ত্বিক কথাই আমরা পেয়েছি, যা আমাদের সংগ্রামকে শাণিত করেছে।

কবি ফকির ইলিয়াস ড. নুরুন্নবীর সহধর্মিণী ড. জিনাত নবীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই সাহসী নারী ছায়ার মতাে পাশে থেকে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েই চলেছেন। ড. নবীর পরিচিতি উপস্থাপনকালে সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, ড. নবী আজীবনের মুক্তিযােদ্ধা। তিনি এই সংগ্রাম আজও করেই যাচ্ছেন তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে। তাঁর এ পর্যন্ত ১৭টি বই বেরিয়েছে।এগুলাে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়েছে। তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বুক হিসেবে পঠিত হচ্ছে। তিনি প্রজন্মের কাছে সত্য ও আলােকিত কথাগুলােই জানিয়ে যাচ্ছেন লেখনীর মাধ্যমে। উত্তর প্রজন্ম জানতে পারছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক না-জানা কথা।

অনুষ্ঠানে ড. নবীর সংগ্রামী জীবন ও সাহিত্য নিয়ে কথা বলেন, বিশিষ্ট ছড়াকার ও লেখক লুৎফর রহমান রিটন।

গত বছর ঘুংঘুর সম্মাননা প্রাপ্ত বিশিষ্ট শিল্পী বীর মুক্তিযােদ্ধা তাজুল ইমাম বক্তব্য রাখেন ড. নবীর জীবন ও আদর্শ নিয়ে। তিনি বলেন, এই গুণী ও ত্যাগী মানুষটির কাছে আমরা সবাই ঋণী। এই সমাজ ও প্রজন্ম বিনির্মাণে ড. নবী যে ত্যাগ ও চেতনা বিলিয়ে গিয়েছেন- তা কালে কালে স্মরণ করা হবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিশিষ্ট চিন্তক বেলাল বেগ। এরপরেই শুরু হয় সম্মাননা প্রদান পর্ব।

গীতিকার ও শবদজন ইশতিয়াক রুপু ফুলের তােড়া তুলে দেন ড. নূরুন্নবীর হাতে। তার পরেই বেলাল বেগ, তাজুল ইমাম, লুৎফর রহমান রিটনসহ অন্য অতিথিরা সম্মাননা পদক তুলে দেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও লেখক মুক্তিযােদ্ধা ড. নূরুন্নবীর হাতে। এ সময় এক আবেগঘন আবহ তৈরি হয়।

সংবর্ধনা ও সম্মানায় অনুভুতিব্যক্তকালে ড. নবী বলেন, আমার পিতা আমাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলেন। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার সাহস দিয়েছিলেন। আমি সেই আলােকেই জীবন পরিচালিত করেছি।

তিনি ড. জিনাত নবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি তাঁর কাছে বিশেষভাবে ঋণী। তাঁর সমর্থন ও সাহায্য ছাড়া আমার এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।

তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা সকলে এবং ঘুংঘুর আমাকে যে সম্মান দিল- তা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় দিন হয়েই থাকবে। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আগত লেখক সাহিত্যিক, জার্মানি ও ঢাকা থেকে আগত লেখক-প্রকাশকসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন এ আয়ােজনে।

উল্লেখ্য, এর আগে 'ঘুংঘুর সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট চিন্তক বেলাল বেগ, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ও শিল্পী তাজুল ইমাম। আরও উল্লেখ্য, ড. নবী এর আগে একুশে পদক পেয়েছেন এবং তিনি মার্কিন মূলধারার রাজনীতির একজন হিসেবে নিউজার্সির প্লেইন্সবরাে সিটির কাউন্সিল নির্বাচিত হয়ে পঞ্চম মেয়াদের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। নৈশভােজের মাধ্যমে তিন ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয়ে ছিলেন শব্দজন খালেদ সরফুদ্দীন, লেখক আৰু সাঈদ রতন, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি সৈয়দ মামুনুর রশীদ, কবি আহমেদ ছহুল, কবি মাসুম আহমদ প্রমুখ।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও ছিলেন সমাজসেবক-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্টপােষক গােলাম ফারুক ভূঁইয়া, অভিনেতা-চলচ্চিত্র নির্মাতা তৌকির আহমেদ, বিজ্ঞানী ড. জিনাত নবী, শহীদ সন্তান ফাহিম রেজা নূর, অঙ্কুর প্রকাশনীর মেজবাহউদ্দিন প্রমুখ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;