চীনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া বাকি শিক্ষার্থীদের আকুতি, 'মৃত্যুপুরী থেকে ফিরতে চাই'

চীনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া বাকি শিক্ষার্থীদের আকুতি, 'মৃত্যুপুরী থেকে ফিরতে চাই'
চীনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া বাকি শিক্ষার্থীদের আকুতি, মৃত্যুপুরী থেকে ফিরতে চাই

মোস্তফা ইমরুল কায়েস ।।

দেশে ফিরতে চায় বলে জানিয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশের ইচাং সিটিতে আটকা পড়া শিক্ষার্থীরা। এ জন্য তারা বাংলাদেশ দূতাবাসের সাহায্য কামনা করেছেন। তারা সেখানে ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন। যে খাবার দেওয়া হচ্ছে তা অপ্রতুল ও সবার হচ্ছে না বলে দাবি তাদের।

তারা বলছেন, আমরা এই মৃত্যুপুরী থেকে দেশে ফিরে যেতে চাই। এখানে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে কতদিন থাকব আমরা নিজেরাও জানি না। আমরা এতটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি কি হবে, জানি না।  শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, উহান শহরের পাশের শহর ইচাং। এই শহরটিতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে তাদের অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাদের দ্রুত দেশে ফেরত নেওয়া হোক। দেশে ফিরে তারা যেকোনো জায়গায় থাকার জন্য প্রস্তুত। তাদের চিন্তায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলেও তারা জানিয়েছে।

তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তাদের ঘরে থাকা বিভিন্ন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি ফুরিয়ে গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের যে খাবার সরবরাহ করছে তা অপ্রতুল। সবার তা হচ্ছে না। পাঁচদিন আগে অর্ডার করা খাবার বৃহস্পতিবার সরবরাহ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেটি তুলনায় কম। এদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ-তরুণী ও পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, তাদের কাউকে খাবার সংগ্রহের জন্য বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো শিক্ষার্থী এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলেই তার স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার এক শিক্ষার্থী বাইরে বের হওয়ায় তার সামনের একটি স্কলারশিপ বাতিল হয়ে গেছে। এই ভয়ে তারাও আতঙ্কে আছেন। ভয়ে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না।

চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছে, সেখানে ভারত, উজবেকিস্তান, আমেরিকা, ব্রিটেন, মরক্কো, তাদের শিক্ষার্থীদের ফেরত নিয়েছে। এ ছাড়াও ফ্রান্স, মৌরিতানিয়া ও নর্থসুদান শুক্রবার থেকে শিক্ষার্থীদের ফেরত নিতে শুরু করেছে। অথচ আমাদের দেশের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে মেয়েদের ডরমেটরিতে থাকা অন্য দেশগুলো তাদের মেয়েদের ফেরত নিয়েছে। যে কজন আফ্রিকান মেয়ে রয়েছেন তারাও দ্রুত দেশে চলে যাবেন। শুধু বাঙালি মেয়েরাই ডরমেটরিতে রয়েছেন।

আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসএ) সাবেক এক নেতা বলেন, আক্রান্তের আগেই যদি আমাদের এখান থেকে সরানোর একটা ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ভালো হতো। দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হলে ভালো হতো। যে হারে আমাদের শহরে বাড়ছে তাতে আমাদের আক্রান্তের শঙ্কা বাড়ছে। এ কারণে আমরা খুব দুচিন্তায় আছি। দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইউচ্যাটে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে অনেক অভিযোগ আসা শুরু করায় দূতাবাসের ফাস্ট অফিসার খাইরুল বাশার কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে দ্রুত বের হয় যান। আমরা কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে কিন্তু সেটা তো চ‚ড়ান্ত হচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্যান্টিন চালু করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই খাবারগুলো পুরোপুরি চাইনিজ মেন্যু। যার সঙ্গে তারা অভ্যস্ত না। যারা নতুন এসেছে (প্রায় ১০০) ও পুরাতন তারাও না। প্রত্যেক হোস্টেলে তারা বাঙালি খাবার রান্না করে খান। ক্যান্টিনে যে খাবার দিচ্ছে তা মানসম্মত না। তারা বলছেন, এই অবস্থায় আমরা কদিন এভাবে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকব তা নিয়ে সন্দিহান। দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে খাবার ও পানি সঙ্কটের যে অভিযোগ করা হয়েছে তাকে অযৌক্তিক দাবি করেছেন বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব খাইরুল বাশার। তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়টির কো অডিনেটরের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে এবং তিনি তাকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা সকালে খাবার অর্ডার করলে দুপুরে তারা তা পৌঁছে দিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা তাদের ডরমেটরিতে খাবার রান্না করে খেতে চায়। দূতাবাসের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খোলার বিষয়টি তিনি একেবারেই অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তথ্যের প্রয়োজনে কেউ গ্রুপে জয়েন করতে পারে, আবার ত্যাগও করতে পারে। আর ইচাংয়ের ব্যাপারে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো গ্রুপ খোলা হয়নি।

শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আর দূতাবাস যদি বাস্তবায়ন না করে তাহলে কী কারও চাকরি থাকবে? ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি উহানে আছেন, যারা দেশে ফিরতে চান। সরকারও তাদের ফেরাতে চায়। কিন্তু চার্টার করা প্লেন পেলে সেটা সম্ভব।