খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির পথে, নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনে

খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির পথে, নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনে
খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির পথে, নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনে

মোস্তফা ইমরুল কায়েস ।।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ মাসেই প্যারোলে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন । মুক্তি পাওয়ার পরই তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। মূলত তার উন্নত চিকিৎসার জন্যই প্যারোলে এ মুক্তির উদ্যোগ। এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনও করা হয়েছে। আর দুটি ধাপ সম্পন্ন হলেই মিলবে এ মুক্তি। খালেদা জিয়া বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদার মুক্তির জন্য তারা বারবার আন্দোলন করেছেন। কিন্তু কিছুতেই সাড়া দেয়নি সরকার। ফলে তারা এবার ভিন্ন পথে হাঁঁটতে শুরু করেছেন। দলের ব্যানারে নয়। মুক্তি চাওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কয়েক মাস আগে থেকেই তার এই প্রক্রিয়াটিতে কাজ করছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার। পাশাপাশি আছেন খালেদার আপন ভাগিনা চিকিৎসক মামুন। তিনি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করেন।

সর্বশেষ তথ্য হলো, ১১ জানুয়ারি পরিবারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিদ্যালয়ে তার উন্নত চিকিৎসা দরকার জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদনে এখনও সাড়া দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারের গ্রিন সিগনাল পেলেই সেই আবেদনে সাড়া মিলবে। এরপর বিএসএমএমইউ দেওয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট কপি চলে যাবে কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তবে হাসপাতালে আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ। এবার কারাগার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তা চলে গেলেই মিলবে প্যারোলে মুক্তি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুধু আইনি প্রক্রিয়া বাকি। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেট ও স্থানাস্তরের সুপারিশ নিয়েই খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠানো হতে পারে।

দলীয় সূত্র জানায়, খালেদাকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন প্রক্রিয়াগুলোতে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার নানাভাবে সহায়তা করছেন। আর চিকিৎসার দিকটি দেখছেন তার ভাগিনা মামুন। খালেদার মুক্তির জন্য আবেদনপত্রে তাকে লন্ডনের কোথায় চিকিৎসা করানো হবে, কার কাছে তিনি থাকবেন এবং কেন লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। লন্ডনের চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সেখানে তার ছেলে, ছেলের বৌ ও নাতিপুতিরা রয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, তার প্যারোলে মুক্তি নিতে (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষের কাছে করা আবেদনে বলা হয়েছে, দিন দিন খালেদার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। এ কারণে তার যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি তাকে বিদেশে নিতে যে ব্যয় হবে তা পরিবার বহন করবে এবং তাদের দায়িত্বে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে আবেদনপত্রে। তবে কতদিন তার প্যারোলে মুক্তি মিলবে তা এখন জানা যাচ্ছে না। সরকার সেটি নির্ধারণ করবে।

শুক্রবার বিকালে গুলশানে খালেদার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের নেতারা। বৈঠকে লন্ডন থেকে তারেক জিয়া স্কাইপিতে যুক্ত হন ও দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাকে কী প্রক্রিয়ায় বিদেশে নিতে হবে এবং কতদিন রাখা যাবে এবং প্যারোলে মুক্তি পরবর্তী কি কি করণীয়, নানা বিষয় আলোচনা হয়েছে। ফখরুল বলেছেন, অন্য কোনো রাজনীতি না করে মানবিক কারণেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া জরুরি। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তার ফোনালাপ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনি (ওবায়দুল কাদের) কী বলেছেন, এটা উনাকে জিজ্ঞাসা করলে বেটার হবে। এখন প্রশ্ন একটাই যে, এই মুহূর্তে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার পরিবার থেকেই আবেদন জানানো হয়েছে।

সরকারের এখন আর এগুলো নিয়ে বা অন্য কোনো রাজনীতি না করে সম্পূর্ণ মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। শুক্রবার গুলশানে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, তার প্যারোলে মুক্তির পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আবার আবেদন করবেন তার আইনজীবীরা। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, হাইকোর্ট দেশের জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে আমরা এবার জামিনের আবেদন যদি করি অবশ্যই আমরা জামিন লাভ করব।

অন্যদিকে শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির দলের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন, আলাপ হয়েছে। তাদের দলের পক্ষ থেকে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন। আমি যেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করি। এ ছাড়া কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে তারা লিখিত কোনো আবেদন পাননি। তারা (বিএনপি) শুধু মুখে মুখেই বলছেন, কিন্তু লিখিত কোনো আবেদন করেননি। এটা দুর্নীতির মামলা। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকার বিবেচনা করতে পারত।

এদিক খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার একটি অনলাইন পত্রিকাকে বলেন, তার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহনসহ তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আবেদনে। আবেদনটি বিবেচনা করা হবে বলে আশা করছে পরিবার।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অসুস্থ বলে দাবি করে আসছে পরিবার ও তার দলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন থেকে তাকে কারাবিধি অনুযায়ী হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি হাসপাতালটিতে কেবিন ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন। তার পরিবারের দাবি, খালেদার দাঁত ও জিহ্বার চিকিৎসা হচ্ছে কিন্তু ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। সেটি দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। বিষয়টি তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছেন। কিন্তু কয়েক মাস থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

আর এসব করা হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। দল ব্যর্থ হওয়ায় পর পরিবারের পক্ষ থেকে এবার আবেদন করা হয়েছে। তবে এই আবেদনের ফল কতভাগ মিলবে তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। আবেদনে সরকার সাড়া দিলেই তাকে নেওয়া হবে লন্ডনে।

বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তাকে আটকের পর থেকেই আন্দোলন করে আসছিল। চলতি বছর তাকে মুক্তি দিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আসছিল। প্রথম দিকে সরকার রাজি থাকলেও পরে সেটি আর হয়নি। কিন্তু ঢাকা সিটি নির্বাচনের পর থেকে সুর কিছুটা বদলাচ্ছে। এরই মাঝে খালেদার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে লন্ডনে নিতে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, এই প্রথম তারা তাকে বিদেশে চিকিৎসার করানোর জন্য আবেদন করলেন।