করোনা ভাইরাস সফল কিউবার ‘আলফা টু-বি’

করোনা ভাইরাস সফল কিউবার ‘আলফা টু-বি’
করোনা ভাইরাস সফল কিউবার ‘আলফা টু-বি’

স্বাস্থ্য ডেস্ক ।।

করোনার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওষুধ আবিষ্কার হলেও এবার ইন্টারফেরন আলফা টু-বি' নামে পরিচিত কিউবার এক ওষুধ করোনা মুক্তিতে ব্যাপক কাজ করছে। চীনের চিকিৎসকরা এই ওষুধ করোনা আক্রান্তদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে। তা ব্যবহার করে এক হাজার পাঁচশোরও বেশি আক্রান্ত রোগিকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা।

১৯৮৬ সালের দিকে কিউবার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (সিআইজিবি) এই ওষুধটি আবিষ্কার করে। জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই ওষুধটির ব্যবহার চালু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার কিউবার রোগী সুস্থ হয়েছেন।

এটি এইচআইভি এইডস, হেপাটাইটিস-বি ও সি, হার্পিস জোস্টার বা শিংলস, ডেঙ্গু ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। এই ওষুধটি মানবদেহের ইন্টারফেরনের প্রাকৃতিক উৎপাদন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো জোরদার করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর।

ওষুধটির আবিষ্কার হয় কিউবায়। চীনের জিলিন প্রদেশে অবস্থিত চ্যাংচুন হেবার বায়োলজিক্যাল টেকনোলজিতে এটির উৎপাদন হয়। জৈবপ্রযুক্তিতে দুই সমাজতান্ত্রিক দেশের মধ্যে এক চুক্তির অংশ হিসেবে এটি যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে।

এটি দক্ষিণ কোরিয়ার হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছে। আট হাজার সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ৭২ জন মারা গেছেন। জার্মানিও মহামারির সঙ্গে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিভাইরালগুলো চ্যাংহবারের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে। সেখানেও এই ভাইরাসে সংক্রমিত তিন হাজার একশ ৫৬ জনের মধ্যে কেবল তিনজন মারা গেছেন।

এরই মধ্যে এর‌ কার্যকারিতা জানার পর জনপ্রিয় হয়ে যায় 'ইন্টারফেরন আলফা টু-বি'। মূলত এর পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঐ ওষুধের অর্ডার পেতে থাকে।

চলতি মাসের ১৪ তারিখে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়কিউবা ফারমা গ্রুপের সভাপতি এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ বলেন, সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক দেশ থেকে এই ওষুধ বিক্রির অনুরোধ পাওয়ার পরেই এর উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে চলেছে।

তিনি আশ্বস্ত করেন যে, সিআইজিবির হাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মিটাতে পারবে।

এরই মধ্যে কিউবা ইতালিতে একটি চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে 'ইন্টারফেরন আলফা টু-বি'র একটি চালানও পাঠিয়েছে। করোনা মোকাবেলায় ইতালিকে সহায়তা করতেই মূলত ওষুধ আর চিতিৎসক তারা পাঠিয়েছেন।

চীনের পরই এই মারণ ভাইরাস সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ইতালিতে। দেশটিতে এক হাজার ছয়শ ৬৬ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার।

এদিকে, সবার অনুরোধ রাখতে চলেছে কিউবা। দেশটির ওষুধ শিল্প ইন্টারফেরন আলফা টু-বিসহ করোনার চিকিৎসা করা যায় এমন ২২ ধরনের ওষুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করার গ্যারান্টিও দিয়েছে।

এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলার ওষুধ সরবরাহ করার জন্য অনেক দেশেই অনুরোধ করছে। আমরা ওষুধ সরবরাহ করবো। কারণ আমাদের প্রয়োজনীয় সামর্থ্য রয়েছে। এতে দেশে ওষুধ সঙ্কটে পড়বে না।

কিউবার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির (সিআইজিবি) পরিচালক বলেন, ওষুধটির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। মজুদের পরিমাণ বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের হাতে চীনে সংক্রমিত সকল রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ওষুধ রয়েছে।