এবার বায়েজিদের চন্দ্রনগর পাহাড় কেটে 'পুলিশ হাউজিং'!

এবার বায়েজিদের চন্দ্রনগর পাহাড় কেটে 'পুলিশ হাউজিং'!
এবার বায়েজিদের চন্দ্রনগর পাহাড় কেটে 'পুলিশ হাউজিং'!

সোহেল মারমা ।।

চট্টগ্রামেরর বায়েজিদে সরকারি পাহাড় কেটে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পুলিশ হাউজিং নামে একটি আবাসন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে বায়েজিদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকার হাসান সাহেবের খামার বাড়ি নামে একটি পাহাড় ধীরে ধীরে কেটে সেখানে প্লট বানিয়ে ঘর তুলেছেন। ভুয়া দলিল সৃজনের মাধ্যমে থানার বর্তমান ও সাবেক আট পুলিশ কর্মকর্তা পরিবারের সদস্যদের নামে সাড়ে ৬ একর পাহাড়ি জায়গায় এই হাউজিং গড়ে তুলেছেন।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোনো পুলিশ সদস্য কিংবা তাদের স্বজনদের নামে যদি অবৈধভাবে পাহাড় দখল ও মালিকানার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তদন্ত চালানো হবে। এতে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাট্টলী সার্কেলের খুলশী ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জায়গাটি ছিল একজন অবাঙালির। পরে এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত হয়। মাঝখানে বিভিন্ন অবৈধ দখলদার ভুয়া দলিল সৃজন করে পাহাড়টি দখলে নেয়। পরে ধীরে ধীরে সুযোগ বুঝে পাহাড় কেটে সমতল করে সেখানে বাড়ি-ঘর তুলেছে।

তিনি বলেন, এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও জরিমানা হয়েছিল। আমরা গিয়ে একবার উচ্ছেদও করেছিলাম। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আবারও সেখানে বাড়িঘর তোলা হয়েছে। সম্প্রতি এটার পাশে আবার পাহাড় কাটা ও সেখানে একটি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলতে দেখা যায়। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বাড়িঘরগুলো উচ্ছেদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শীঘ্রই একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ যেখানে অবৈধ দখলের সাথে জড়িত, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছর ধরে সময়-সুযোগ বুঝে চন্দ্রনগরের সেই পাহাড়টি কেটে সমতল করা হয়েছে। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার পাহারায় এসব করা হয়েছে। জায়গাগুলোর মালিকানা পুলিশ কর্মকর্তাদের স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়ের নামে। তবে তাদের কেউ সেখানে থাকেন না। এগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে উন্নত আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেনি। তবে এ জায়গায় তৈরি ঘরগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন বসবাস করছেন। জায়গাটির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে একাধিক ঘর আছে। এসব ঘরের কোনো কোনোটায় ঝুলছে ‘টু লেট’ সাইনবোর্ড। বর্তমান পাহাড়টির আরেকটি অংশে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটাও কাটার চেষ্টায় রয়েছে দখলদাররা। ওখানে মাদ্রাসার নামে সাইনবোর্ড ও ঘর তুলতে দেখা যায়। পাহাড়টির ঢালু অংশে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে।

স্থানীয়রা জানান, অবৈধ দখলদারদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় এলাকার লোকজন পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। ইতিমধ্যে তাদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং জেল খেটেছেন। তারা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিস বিভিন্ন সময় সেখানে পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে। এটা নিয়ে জরিমানা ও মামলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, সেখানে পাহাড় কাটার দায়ে বিভিন্ন জনকে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, নতুন করে পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রমাণ পেলে তারা যত প্রভাবশালীই হোক, আমরা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বায়েজিদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম, এএসআই শরীফুল ইসলাম, এসআই অদুদ, এএসআই মনজু, এসআই রেজাউলসহ বর্তমান ও সাবেক আট পুলিশ কর্মকর্তার স্বজনদের নামে গড়ে উঠেছে এই হাউজিং।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বায়েজিদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিম ও একই থানার এএসআই শরীফুল ইসলাম এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, উল্লেখিত জায়গায় তাদের কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো জায়গা নেই।

জানা গেছে, আগ্রাবাদে মারুফ নামে এক তরুণের আত্মহত্যার পর সাদা পোশাকে অভিযানের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায় সিএমপি। বিভিন্ন থানায় একযোগে বদলি করা হয় ১২ জন এসআইকে। তাদের মধ্যে বায়েজিদ থানার এসআই গোলাম মোহাম্মদ নাসিমও রয়েছেন।

-আজাদী