সড়ক পরিবহন আইন ও প্রাসঙ্গিক কথা - শুক্কুর চৌধুরী

সড়ক পরিবহন আইন ও প্রাসঙ্গিক কথা - শুক্কুর চৌধুরী

সম্প্রতি ঘোষিত সড়ক পরিবহন আইন সাধারণ গনমানুষের কাছে বেশ সময়োপযোগী ও যথাযথ মনে হয়েছে। এটা ব্যাক্তিগত ও অনেকের সাথে আলাপ আলোচনার সুবাদে পর্যবেক্ষনী মতামত। হ্যাঁ এবিষয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের ভিন্নমত বা দ্বিমত থাকতেই পারে। এবং তা ব্যাক্ত করার গনতান্ত্রিক অধিকার ও তাদের অবশ্যই আছে।

স্বাভাবিক নিয়মে তারা ভিন্নমত ব্যাক্ত করবেন, সরকারের কাছে তাদের মতামত দাবী বিধিমত জানাবেন, আলাপ আলোচনা করবেনা এবং সবধরণের চেষ্টা ব্যার্থ হলে নমনীয় প্রতিবাদ, প্রতীকী ধর্মঘট বা স্বল্পমেয়াদি কর্মবিরতি পালন করবেন। তাও ব্যার্থ হলে চুড়ান্ত আন্দোলন করবেন। পাশাপাশি তারা আইনী প্রক্রিয়ায় আদালতে আবেদন করে ও নিজেদের বক্তব্যের যৌক্তিকতা উপস্থাপন করে আইনের সুরাহা চাইবেন। এটাই তো কাম্য।

দূর্ভাগ্যজনক ভাবে লক্ষ্যণীয় যে আজ সকাল হতেই দেখা যাচ্ছে গনপরিবহন হঠাৎ করেই বন্ধ রয়েছে। এদিকে অফিস আদালত ব্যাবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গমনেচ্ছুদের ( এই সময়ে পিএসসি পরীক্ষা চলছে, যার ভোগান্তি বর্ণনাতীত) অবর্ননীয় ভোগান্তির দৃশ্য অসহনীয়। তারপর ও ভেবেছি উনারা হয়তো একটু চাপ প্রয়োগ করে দাবী দাওয়া আদায়ের জন্য স্বল্পকালস্থায়ী এই উদ্যোগ নিয়ে থাকবেন।

বাস্তবতা হল দেখা গেছে বাস ট্রাক লরী বন্ধ থাকলেও যথারীতি রিক্সা, সিএনজি টেক্সী টেম্পু ও ব্যাক্তিগত গাড়ী, মোটরসাইকেল চলাচল করছে( সকাল সাড়ে আটটা অব্দি)। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই দেখা গেল কিছু পরিবহন শ্রমিক মোড়ে মোড়ে সমবেত হয়ে রিক্সা ব্যাতীত সকল প্রকার গাড়ী চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। যারা বাধা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের কোন লেতাকেই দেখলাম না। প্রায় সবাই ১৫ হতে ২৫ বছর বয়সী তরুন। যাদের ভাবভঙ্গিতে উগ্রতা ও অসৌজন্যতা প্রকট ! নিকট অতীতে ও ছাত্র আন্দোলনের পর পাল্টা পরিবহন ধর্মঘটের কালে বাড়াবাড়ি আমরা ভুলে যাইনি !

কেউ ব্যাক্তি বা গোষ্টিগতভাবে গনতান্ত্রিক নিয়েমে প্রতিবাদ জানাতে বা কর্মবিরতি পালন করতেই পারেন। কিন্তুু অন্যদের ভয়, হুমকিধামকি দিয়ে বাধা দেবার অধিকার তো কারোই নাই.! এই বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সক্রিয় ভুমিকা নেয়া প্রয়োজন মনে করি। একই সাথে আপনাদের উদেশ্য ও আন্দোলনের আওতাভুক্ত কারা, কি কি করনীয় বিস্তারিত জনগণকে জানানো উচিত!

দেখা গেছে গতকাল হতে আইনের মাঠ পর্যায়ে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বেশ নমনীয় ও সহনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, হচ্ছে ( গনমাধ্যমের সুত্রে দেখা ও জানা)। যা অবশ্যই ভাল দিক যে রয়ে সয়ে সচেতন করার প্রচেষ্টা দেখলাম। অপর পক্ষে পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই আইনের ভুল ভাল ব্যাখ্য ছড়াতে দেখা যাচ্ছে। উনারা কি আইনটি বুঝেন নাই? নাকি বুঝেশুনেই অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন.? এবিষয়ে সরকার ও গনমাধ্যমের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো উচিত মনে করি।

আমাদের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিনয়ের সাথে এই আইনের বিষয়ে মতামত প্রার্থনা করছি। এবং তা যেন ইনিয়ে বিনিয়ে না হয়ে স্পষ্ট, সরাসরি ও খোলামেলা হয়। আপনারা অতীতে সরকারে ছিলেন, আগামীতে ও আসবেন। তাই এবিষয়ে আপনারা কি মনে করেন? আইনটা সঠিক না বেঠিক? সব ক্ষেত্রেই দলীয় সাময়িক স্বার্থের কথা না ভেবে জাতীয় স্বার্থ তথা গনমানুষের কথাই ভাবা অপরিহার্য মনে করি।

পরিশেষে আইনের সঠিক ব্যাখ্যা সবাই জানার, বুঝার, অনুধাবনের মাধ্যমে আত্নউপলব্দি হবে। আলোচনার মাধ্যমে সকল বিভ্রান্তি সমস্যা দুরীভুত হবে বলেই আশাবাদী হতে চাই। কোন অবস্থাতেই জনদুর্ভোগ প্রত্যাশিত নয়।

 

- শুক্কুর চৌধুরী

কবি , লেখক ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা