বিশ্ব এইডস দিবস আজ, এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে, অধিকাংশই প্রবাসী

বিশ্ব এইডস দিবস আজ, এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে, অধিকাংশই প্রবাসী

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

ক্রমাগত বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে এইডস (একোয়ার্ড ইমমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) রোগীর সংখ্যা। দিনকে দিন বাংলাদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এ রোগীর সংখ্যা। শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই গত একবছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭১ জন। যার মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ।  চট্টগ্রামের এইচআইভি সংক্রমিত পুরুষের মধ্যে অধিকাংশ সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, ম্যালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ফেরত বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার সূত্র।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের এন্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার (এআরটি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,  এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর ৪২১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২০১৮ সালে ছিল ৩৫০ জন। নতুনভাবে চট্টগ্রামে নভেম্বর ২০১৮ থেকে অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে ৭১ জন। তার মধ্যে ২১৯ জন পুরুষ ও ১৬০ জন মহিলা। এছাড়াও শিশু ছেলে রয়েছে ২৬ জন ও মেয়েশিশু রয়েছে ১৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গ রয়েছে ২ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অ্যান্টি রিক্ট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারের আউটডোর মেডিকেল অফিসার সঞ্জয় প্রসাদ দাশ  বলেন, আমাদের চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ প্রবাসে থাকার সময় এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়ে দেশে আসেন। স্ত্রীর সাথে এইচআভি সংক্রমিত গোপন রেখে শারীরিক মিলনের ফলে স্ত্রীও ওই রোগে সংক্রমিত হচ্ছে। এমনকি পিতামাতার কারণে নবজাতক শিশু সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছে।

আজ ১ ডিসম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে পহেলা ডিসেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‌’এইডস নির্মূলে প্রয়োজন জনগণের অংশ গ্রহণ’। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হচ্ছে। সরকারের জাতীয় এইডস/এসডিটি কর্মসূচির ২০১৮ সালের তথ্য মতে, বিশ্বে এইচআইভির সংক্রমণ কমছে,  তবে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর নতুন করে ৮৬৯ জন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। আর এক বছরে মারা গেছে ১৪৮ জন। দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৫ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ২২ জন। দেশে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ আছে ১৩ হাজারের মতো। কিন্তু তাদের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এইচআইভি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহে এইচআইভি প্রবেশ করার সাথে সাথেই শরীরে এইডস এর লক্ষণ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের কতদিন পর একজন ব্যক্তির মধ্যে এইডস এর লক্ষণ দেখা যাবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপর। এইচআইভি সংক্রমণের শুরু থেকে এইডস হওয়া পর্যন্ত সময়ের ব্যাপ্তি সাধারণত ৬ মাস থেকে বেশ কয়েক বৎসর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বৎসর পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়কালে এইচআইভি সংক্রমিত একজন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে এইচআইভি ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখনো সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক ০১ ভাগের নিচে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এইডস একটি মরণব্যাধি। আবার একজন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্যকে সংক্রমিত করে না। তাই এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে আমাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন না করে তাকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সহযোগিতা করতে হবে।