সাড়ে সাত ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের তুলার গুদামে লাগা আগুন

সাড়ে সাত ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের তুলার গুদামে লাগা আগুন
সাড়ে সাত ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের তুলার গুদামে লাগা আগুন

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সাড়ে সাত ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় তুলার গুদামে লাগা আগুন । আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহার করায় ঘটনাস্থলে পাশে থাকা সব জলাশয়ের পানি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে । তাই আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিরা এলাকায় নেমসন কনটেইনার ডিপোর বাইরে ওই তুলার গুদামে আগুন লাগে। শুরুতেই গুদামের পাশে থাকা খালের পানি দিয়ে আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করেছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এরপর ঘটনাস্থলের পাশে থাকা নেমসন কনটেইনার ডিপোর ভেতরে জলাধার থেকে পানি ছিটাতে থাকে। এই দুটি উৎসর পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসকে পানির অন্য উৎস খুঁজতে হয়। এই মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। এর মধ্যে একাধিক গাড়ি দিয়ে অন্তত আধা কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে তুলার গুদামে আগুনে পানি ছিঁটিয়ে যাচ্ছেন ।

স্থানীয়রা জানান, এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের মালিকানাধীন গুদামটি ইউনিটেক্স লিমিটেড ভাড়া নেয়। তাঁদের নিজস্ব সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে অনেক তুলা মজুত করা হয়।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেছেন , কারখানাটি এস এল স্টিলের মালিক গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি এটি গুদাম হিসেবে ব্যবহার করলেও এর জন্য পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স কিংবা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।

অবশ্য এসএল স্টিল সূত্রে জানা যায় , গুদামটি বর্তমানে ইউনিট্যাক্সের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এটি তাঁরাই তুলার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাই আমাদের ট্রেড লাইসেন্স কিংবা অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপপরিচালক আবদুল হালিম বলেন, এমনিতে তুলা দাহ্য পদার্থ। তুলায় আগুন লাগলে মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার ওপর পানির সংকট। পানির সংকুলান করতে তাঁরা দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে থাকা দুটি পুকুর থেকে পানি আনছেন। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এখন আগুনের তীব্রতা আগের থেকে কিছুটা কমেছে।

অন্যদিকে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, খালে অল্প পরিমাণ পানি ছিল। তাঁরা পানির পাম্প লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যে পানি কমে যায়। পরে তাঁরা একাধিক স্থানে পাম্প নিয়ে গিয়ে পানি ছিটিয়েছেন। তাতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন তাঁরা। একইসাথে গ্রামের পুকুরেও পাইপ লাগানো হয় ৷ বর্তমানে এ দুটি উৎস থেকে আগুন নেভাতে পানির যোগান দেয়া হচ্ছে। যা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কাজ করা যাবে বলে আশা করছি। তবে ঠিক কতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না।

তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, এমনিতেই অতিরিক্ত তাপে তুলায় আগুন ধরার আশঙ্কা থাকে। তার ওপর গুদামটি সাধারণ টিন দিয়ে করা। এখন শোনা যাচ্ছে সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার কারণে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখানে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি আছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গুদামটির মালিক এসএল স্টিল করপোরেশনের মালিক লোকমান হোসেন। তিনি গুদামটি ভাড়া দিয়েছেন ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড নামে একটি সুতা তৈরির কারখানায় কর্তৃপক্ষের কাছে। তুলাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, তুলা যেখানে গুদামজাত করা ছিল তার পাশেই ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিল গুদাম মালিক লোকমান হোসেনের লোকজন। সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের স্ফুলিঙ্গ উড়ে এসে তুলার মধ্যে পড়ে। এতে আগুন ধরে যায়। বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিটেক্স গ্রুপের পরিচালক (স্টেইট) ফারহান আহমেদ বলেন, এখনি কিছু বলতে পারছি না। একটু পরে আমরা মিডিয়ায় ব্রিফ করব। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;