সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটা সম্ভব?, ইইউর প্রাক নির্বাচনী দলের অনুসন্ধান

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটা সম্ভব?, ইইউর প্রাক নির্বাচনী দলের অনুসন্ধান
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটা সম্ভব?, ইইউর প্রাক নির্বাচনী দলের অনুসন্ধান

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাথমিক পর্যবেক্ষক দল (ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন বা অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল) তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বুধবার (১২ জুলাই) বৈঠক করে জানার চেষ্টা করেন। এছাড়া ইইউর দলটি একইদিনে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করে জানার চেষ্টা করেন যে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটা সম্ভব।

ইইউর প্রাথমিক পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা দেশের গণমাধ্যম ও আমাদের মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত বেসরকারি। বাংলাদেশ টেলিভিশন আর ৩৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন সম্প্রচারে আছে। সাড়ে ১২শ’ দৈনিক পত্রিকা, কয়েক হাজার অনলাইন, এফএম ও কমিউনিটি রেডিও সবই বেসরকারি, বাংলাদেশ বেতার ছাড়া। বৈঠকে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ফলে অনেক সময় যে হানাহানি হয় সে জন্য সেই প্লাটফর্মের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বছরের গোড়াতে আইন সংশোধন করে বলেছে, প্রত্যেক সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মকে ইউরোপে রেজিস্টার্ড হতে হবে। আমরা ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মগুলোকে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এখানে রেজিস্টার্ড হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলে আসছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা হয়নি। এতে রাষ্ট্রে, সমাজে যে হানাহানি তৈরি হয় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন হয়, আমাদের দেশেও আইন অনুযায়ী তাই হবে, সে বিষয়টি আমি তাদেরকে জানিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের সময় সরকারের রুটিন কাজ করা ছাড়া আর কোন কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠান যেগুলো নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের সবার চাকরি নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত হয়, সেটি আমি তাদের জানিয়েছি। তবে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। আমি তাদেরকে বলেছি, আমরা চাই বিএনপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।

এদিকে, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে বুধবার বৈঠক করে বাংলাদেশের আইনি কাঠামো অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠান কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তা জানতে চেয়েছে সফররত ইইউর প্রাক নির্বাচনী দল। ইইউর দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, তারা জানতে চেয়েছে যে বর্তমান আইনি কাঠামো অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে কোনো বাধা আছে কিনা। আমরা বলেছি যে বর্তমান আইনি কাঠামো অনুযায়ী সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা নাই। আরপিও সংশোধন কেন প্রয়োজন ছিল, এটাও জানতে চেয়েছে ইইউ প্রতিনিধি দল। আমরা বলেছি যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা প্রয়োজন ছিল। এছাড়া তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট সংশোধন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আমরা বলেছি যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে শিগগিরই এই ইস্যুতে সংশোধন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা বোঝার জন্য ইইউর ৬ সদস্যের প্রাথমিক পর্যবেক্ষক দল গত রোববার থেকে বাংলাদেশে প্রাথমিক অনুসন্ধানের কাজ শুরু করছে। ইইউর দলটি বাংলাদেশে ২ সপ্তাহ অবস্থান করবে। এরই মধ্যে এই দলটি আসন্ন নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশি একাধিক রাষ্ট্রদূত, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটি, নির্বাচন কমিশনের (ইসি), ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম এবং এটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

ঢাকায় অবস্থিত ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) দূতাবাস জানিয়েছে, এই দলটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে আসন্ন ভোটের পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন। ২ সপ্তাহের পর্যবেক্ষণ শেষে ইইউর প্রাথমিক দলটি তাদের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দিবে। ওই প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলেই পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ দল বাংলাদেশে পাঠাবে ইইউ।

খালেদ /পোস্টকার্ড ;