সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে, এলাকা ছাড়ল ৫০টি পরিবার 

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে, এলাকা ছাড়ল ৫০টি পরিবার 
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে, এলাকা ছাড়ল ৫০টি পরিবার 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট এবং সিসি ক্যামেরা বসিয়ে পুরো এলাকা কঠোর নজরদারিতে রেখেছে প্রশাসন। সেখানে সিসিটিভি স্থাপনের পর থেকেই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়া আরো ১৫ পরিবার পাহাড়ের দখল ছেড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে গেছে।

শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তারা ট্রাক, পিকআপসহ নানান পরিবহনে সরঞ্জাম নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এ পর্যন্ত গত ১০ দিনে অন্তত ৫৫টি পরিবার আলীনগর পাহাড়ের অবৈধ দখল ছেড়েছেন বলে প্রশাসন জানিয়েছে।এছাড়া প্রস্তুতি নিচ্ছে আরাে অনেক পরিবার। এদিকে, জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের নিরাপত্তার জন্য এখন সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ।

সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তল্লাশি করে তবেই যেতে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যানবাহনের কাগজপত্র না থাকলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় জঙ্গল সলিমপুরগামী ও সেখান থেকে বের হওয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটক করে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করা হয়। সলিমপুর গমনের উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করা হয় এবং বহিরাগত সন্দেহজনক লোকজনকে সলিমপুর প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এসময় বিভিন্ন কারণে ৩৮টি মামলায় ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযানে নেতৃত্ব দেন আগ্রাবাদ সার্কেল এসিল্যান্ড ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন সরকার। এসময় তিনি ২৫ মামলায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।

এর আগে, সিসি ক্যামেরা বসানোর পর থেকে রাতভর অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হুসাইন মোহাম্মদ। এসময় জঙ্গল সলিমপুরগামী সকল যানবাহন চেক করেন ও লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। অভিযানে জেলা পুলিশ ও সিএমপি এবং র‍্যাবের সদস্যরা সহায়তা করে।

চান্দগাঁও সার্কেল এসিল্যান্ড ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জঙ্গল সলিমপুরে যেন আর কোন অবৈধ বসতি গড়ে না উঠে এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড ও ভূমিদস্যুতা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শিফটে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। এসময় ৬৩ মামলায় মোট ৫১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে সকাল ৬টা থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শিফটে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ সার্বক্ষণিক প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে থাকছে সমগ্র জঙ্গল সলিমপুর।

এর আগে, গত ৭ আগস্ট সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরের পাহাড়, টিলা, বনভূমি এবং এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষাকল্পে হাইকোর্ট এক নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বৈধ জমির মালিকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সেখানে খাসজমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং বৈধ ভূমির মালিকদের ২০ আগস্টের মধ্যে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি যারা অবৈধ উপায়ে সেখানে পাহাড়-টিলা দখল করে কেটে বসত ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদেরকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অবশ্যই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের আলীনগর পাহাড়ের সকল অবৈধ বাসিন্দাকে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে এলাকা ছাড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ নির্দেশনা মেনে ইতিমধ্যেই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার আলীনগর থেকে ১০টি পরিবার তাদের বসতি ভেঙে আসবাবপত্র নিয়ে চলে গেছেন। এর আগেও আরাে ৪০টির মতাে পরিবার আলীনগর ছেড়েছিল। তবে এখনাে সেখানে হাজার হাজার পরিবার রয়ে গেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বলে সংশ্লিষ্টরা। জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে প্রবেশ মুখে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়েছে প্রশাসন। এলাকার মুখে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করে সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ। তারা এখানে আসা প্রত্যেকটি যানবাহনের নথিপত্র তল্লাশি করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কাউকে অপ্রয়ােজনে যেতে দিচ্ছেন না।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাবার সময় আলীনগরের বাসিন্দা মনির আলম বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এখানে ছিলাম । সেই ২০১২ সালে বাড়ী করেছিলাম। সরকারি নির্দেশের কারনে ঘরবাড়ী ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছি। যদি সরকার পুনর্বাসন করে তাহলে আমরা যেন জায়গা পাই সে অনুরােধ জানান তিনি।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকা ছাড়ার জন্য সরকার ৩০ আগস্ট পর্যন্ত যে সময় দিয়েছে তাতে আর সময় বেশি হাতে নেই। তাই অনেকেই ঘর-বাড়ি তুলে নিয়ে যাবার প্রক্রিয়া করছেন। আবার অনেকে আদৌ ছেড়ে গেলে আর আসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, এলাকার বেশিরভাগ মানুষই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলীনগর ছাড়তে রাজি। তবে এসব সাধারণ মানুষকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফায়দা লুটা ভূমিদস্যু চক্র তাদেরকে এলাকা না ছাড়ার জন্য নানান কুপরামর্শ এমনকি আবারাে মহাসড়ক অবরােধসহ কর্মসূচি পালনের জন্য উৎসাহিত করছে। সব মিলিয়ে সেখানে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে একাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে ।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, আমরা পালাক্রমে সেখানে দায়িত্ব পালন করছি। এলাকার নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছি আমরা।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাে. শাহাদাত হােসেন বলেন, আলীনগরে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের পথে। এ লক্ষেই সেখানকার অবৈধ বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা হবে। আমরা ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছি তাদেরকে চলে যাবার জন্য। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে গেছেন। আর আমরা সেখানে নিরাপত্তাও জোরদার করেছি। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। পালাক্রমে প্রতি ৬ ঘণ্টা পর পর একজন ম্যাজিস্ট্রেট সিএমপি ও জেলার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত এসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সমগ্র জঙ্গল সলিমপুর নজরদারিতে রাখতেই ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;