বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে, বিদেশেও আছে মশার যন্ত্রণা!

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে, বিদেশেও আছে মশার যন্ত্রণা!
বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে, বিদেশেও আছে মশার যন্ত্রণা!

শাহনেওয়াজ ।।

বাংলাদেশ আর কখনো দেখেনি মশার কামড়ে এত মৃত্যু । গত শনিবার পিলে চমকানোর মতো মৃত্যুর খবর আসে। ওই সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয় দেশজুড়ে। আর সেই সংখ্যাটি ছিল চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ অর্থাৎ ২১ জন। এর আগে অবশ্য ১৯ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ছোট একটি মশা, তা দেখে এখন শুধু বাংলাদেশ নয়-উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। 

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। আর সেই মশা হচ্ছে এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। কেন ডেঙ্গুর এ প্রকোপ-তার কারণ সম্পর্কে সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত করেছে। বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মম-লীয় ও উপগ্রীষ্মম-লীয় জলবায়ুতে ডেঙ্গুর এ প্রাদুর্ভাব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৪৪ হাজার, ফিলিপাইনে ৪০ হাজার, শ্রীলঙ্কায় ৩৭ হাজার, ভিয়েতনামে ৩২ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, আফগানিস্তান, লাওস, কম্বোডিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, মালদ্বীপসহ অন্তত ১০০টি দেশে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। 

চৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে ১৯৪৪ সালে ডা. আলবার্ট সাবিন নামে একজন চিকিৎসক প্রথম ডেঙ্গুকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে একই সময় জাপান, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে এই রোগ প্রথম শনাক্ত হয়। ১৯৫০ সালে এশিয়ার থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দেয়। এর পরই ১৯৫৩ সালে আমেরিকাতেও এই রোগ ধরা পড়ে।  

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে কলকাতায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় ডেঙ্গুকে ঢাকা ফিভার নামে নামকরণ করা হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারিভাবে ডেঙ্গুকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে। একই সঙ্গে প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রচলিত নিয়মে এই রোগটির নাম প্রথমে ছিল ডুঙ্গা। পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তিত হয়ে নাম হয় ডেঙ্গু। 

এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশে এই টিকা বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরে প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে। তবে এই টিকা নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কোনো ধরনের মন্তব্য না করলেও, শুধু এটুকু বলেছে, এই রোগ এড়াতে মশার কামড় প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। 

ইতিমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবিলা করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো ও শোয়ার সময় ফুলহাতা শার্ট পরিধানের পরামর্শ দিয়েছেন। 

থেমে নেই টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা। বর্তমানে ২০টি দেশে ডেঙ্গুর দুটি টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। দুটি টিকার মধ্যে একটি হচ্ছে ফ্রান্সের, অপরটি জাপানের। জাপানের কিউডেঙ্গা বিভিন্ন দেশ অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের ডিভি১-ডিভি৪ প্রস্তুতের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেট্রাভেক্স ডিভি-টিভি ০০৩ এখন তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি টিকা, যার নাম কোভাভ্যাক্স ডেনডি প্রস্তুতের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জাপানের আরও একটি শেষ পর্যায়ে পরীক্ষা চলছে। ভারতের প্যানাসিয়া বায়োটিক তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ খুব শিগগির শুরু হবে। স্পেনের টিকা প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে। -সময়ের আলো ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;