বাবার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামের আদালতে সন্তানরা

বাবার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামের আদালতে সন্তানরা
বাবার ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামের আদালতে সন্তানরা

আদালত ডেস্ক ।।

ছোট ছেলের হাত-পা বেঁধে স্ত্রী রোকসানাকে পারিবারিক কলহের জেরেই গলা কেটে হত্যা করে স্বামী জয়নাল। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান তিনি।

সকালে কুমিল্লার কান্দির পাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খবর শুনে সেখানে ছুটে যান তার চার সন্তান। এ সময় তারা মাতৃ হত্যার বিচার দাবি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নেজাম।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এলাকায় চার সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন রোকসানা-জয়নাল দম্পতি। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সব সময় ঝগড়া লেগে থাকত। ঝগড়ার পর সালিশের মাধ্যমে বারবার তাদের এক করেন দিতেন আত্মীয়-স্বজনরা।

২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ও তুমুল ঝগড়া হয় নিহত রোকসানা ও তার স্বামী জয়নালের মধ্যে। ঝগড়া করে রোকসানা পার্শ্ববর্তী বোনের বাসায় চলে যান। পরে বোন লাভলী ও তার স্বামী বুঝিয়ে তাকে আবার স্বামীর ঘরে পাঠায়। এরপর দুই জনের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বামী জয়নাল ছোট ছেলে হাত আর পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে ঘরে থাকা একটি ছুরি দিয়ে গলা কেটে রোকসানাকে হত্যা করে তার জয়নাল। হত্যার পর থেকেই পলাতক থাকে সে।

এ ঘটনায় নিহতের বোনের স্বামী মাহমুদ জলির বাদী হয়ে নগরীর বাকলিয়া থানায় জয়নালকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন নানা ভাবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হলে ও কোনোভাবেই তার হদিশ পাওয়ার যাচ্ছিল না। সে ধরা না পড়ার জন্য গত ছয় মাস ধরে কোনো ধরনের মোবইল ব্যবহার করেনি বলে ও জানায় পুলিশ। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে কুমিল্লার কান্দির পাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। কুমিল্লায় একটি হোটেলে কাজ করত বলে জানায় পুলিশ।

জয়নালকে আদালতে তোলা হলে সেখানে উপস্থিত হয় তার চার সন্তান। পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে তামান্না আকতার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এ সময় সে সময় সংবাদকে জানায়, ’আমার মাকে যেভাবে হত্যা করেছে আমার বাবারও সেই অবস্থা চাই আমি। ফাঁসি চাই বাবার।

এ সময় নিহত রোকসানার বোন লাভলী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, বিয়ের পর থেকে একবিন্দু সুখ জয়নাল আমার বোনকে দেয়নি। সারাদিনই ঝগড়া লেগে থাকত দুই জনের মধ্যে। চার সন্তানের কথা একটু ও ভাবেনি সে। আমার বোনের সন্তানদের এতিম করে দিল জয়নাল।

বর্তমানে এই চার সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে জানান লাভলী। এ সময় জয়নালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।

রোকসানার বোনের স্বামী মাহমুদ জলিল জানান, আইপিএলের জুয়া খেলে অনেক টাকা হারিয়েছে জয়নাল। বার বার তাকে বলার পর ও সে কোন কথা শোনেনি। বর্তমানে এই চার সন্তানকে নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে ও জানান তিনি।