বঙ্গবন্ধু টানেলের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন, দুটি টিউবের একটির বোরিং শেষ 

বঙ্গবন্ধু টানেলের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন, দুটি টিউবের একটির বোরিং শেষ 
বঙ্গবন্ধু টানেলের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন,দুটি টিউবের একটির বোরিং শেষ 

নিজস্ব প্রতিবেদন ।। 

বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউবের একটির বোরিং শেষ হয়েছে। এতে করে নদীর এপারের সাথে ওপারের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এখন টিউবটিকে যান চলাচলের উপযোগী করার পাশাপাশি অপর টিউবটির নির্মাণ কাজ চলবে। ইতোমধ্যে টানেলের ৫৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই টানেলের তলদেশ দিয়ে গাড়ি চালানোর লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন ধারণা বাস্তবায়নে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকাকে উন্নয়নের মূল ধারায় আনতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণ মেগা প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এবং চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরবিসি) টানেল নির্মাণ করছে। করোনার কারণে নির্ধারিত সময় থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও গত ২ আগস্ট টানেলটির বাম লেইনের টিউবের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি দুই মিটার করে সেগমেন্ট এবং রিং বসিয়ে বোরিং করে নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলটি কর্ণফুলী নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করেছে। মূল কাঠামো ২৪৫০ মিটার দীর্ঘ। টানেলের ব্যাস ১১.৮ মিটার। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মূল টানেলের সাথে উভয় প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। নদীর তলদেশে এর গভীরতা হবে ১৮ থেকে ৩১ মিটার। চার লেনের টানেলের একেকটি টিউব ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট চওড়া এবং উচ্চতায় হবে ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট।

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালে ‘কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ বা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। বাকি টাকার যোগান সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে। দেশে নদীর তলদেশে নির্মিত এটিই প্রথম টানেল।

চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়ান শহরে প্রস্তুতকৃত টানেলের সেগমেন্ট এনে টানেল নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীর তলদেশে বোরিং করার পর ৮টি সেগমেন্টে দুই মিটারের একটি রিং তৈরি করে স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত বোরিং করা সম্ভব হয়। এভাবে বোরিং করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত টিউব তৈরি করা হয়েছে।

আরো আগে এটি করা সম্ভব হতো উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, করোনার জন্য টানেল নির্মাণে জড়িত বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের অনেকেই চীনে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন। সেগমেন্ট তৈরিও ব্যাহত হয়েছে। এতে করে টানেল নির্মাণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবুও ভালোয় ভালোয় নদীর তলদেশে একটি টিউবের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন দ্বিতীয় টিউবের বোরিং শুরু হবে। পাশাপাশি এই টিউবটিকে যান চলাচলের উপযোগী করার অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ চৌধুরী গতকাল বলেন, একটি টিউবের বোরিং শেষ হয়েছে। তবে এতে টিউব তৈরি হয়েছে বলা যাবে না। আরো বহু কাজ বাকি। তবে এপার থেকে ওপার পর্যন্ত নদীর তলদেশে টিউবের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। টানেলের ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থায় কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই টানেল দিয়ে ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলাচল করার কথা রয়েছে। শুধু গাড়ি চলাচল নয়, বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার অঞ্চলকে উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।