বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ, প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ, প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম
বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ, প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। একই সাথে চট্টগ্রামের আরো ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া তিনি আনোয়ারায় এক মহাসমাবেশে বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সাজ সাজ রব চট্টগ্রামজুড়ে। টানেলের দুই প্রান্তে যেন অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার- পোস্টার। রঙ্গিন করে তোলা হয়েছে টানেলের প্রবেশ পথ। পতেঙ্গায় চলছে টানেলে উৎসবের আমেজ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান জানান, শনিবার চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার এ টানেল উদ্বোধন করবেন।পরদিন এ সুড়ঙ্গপথ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে আনন্দ উৎসব। অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে টানেলের দুই প্রান্ত। সংযোগ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সাজানো হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তের মাইজ্জারটেক থেকে টানেলের মুখ পর্যন্ত পুরো সড়কে রং করানো হয়েছে। রাস্তার দুই পাশেই প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়েছে। পতেঙ্গার টানেল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক সেজেছে বর্ণিল সাজে। একই সাজে সজ্জিত হয়েছে সিটি আউটার রিং রোডও। দক্ষিণের প্রবেশদ্বার শাহ আমানত সেতুতেও লেগেছে রংয়ের ছোয়া। টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের লোকজনের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।

টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, কর্ণফুলী টানেলের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের উদ্বোধন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী টানেল ক্রস করে আনোয়ারা প্রান্তে যাবেন। সেখানেও উদ্বোধনী ফলক লাগানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারায় জনসভা করবেন।

তিনি বলেন, টানেলটি শুধু দুই প্রান্তের সংযোগ করবে না, টানেলটি ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্টে নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এটি। কক্সবাজারের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হবে। এই টানেলটি নির্মাণে প্রকৌশলীরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এই টানেল সারাদেশের গর্বের প্রতীক। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের অসাধারণ কর্মনৈপুণ্য ও স্থাপত্যশৈলী আমাদেরকে উপহার দিতে যাচ্ছে। এটা আমাদের বিশাল সাফল্য, এটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটি তিন থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময়ের মধ্যে পার হতে পারবে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণকাজের যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনা রাষ্ট্রপতি শিং জিনপিং। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের উদ্বোধন করেন। এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। কর্ণফুলীর দুই তীরকে যুক্ত করা এই টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার যোগান দিয়েছে। চীন সরকারের অর্থ সহায়তা ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। মূল টানেল নির্মাণ কাজের শতভাগ খরচ বহন করছে চীন সরকার। মূল টানেল ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। যার মধ্যে টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড আছে।

প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসে টানেলের কোনো সমস্যা হবে না। টানেলে দুটো ফ্লাডগেট আছে, গত সাইক্লোনে ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে। তাছাড়া টানেলটি নদীর পৃষ্ট থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে ভূমিকম্পের প্রভাব পড়বে না। ভূমিকম্পে টানেল নিরাপদ থাকবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ মিটার থেকে ৩১ মিটার নিচ দিয়ে এ টানেল গেছে।

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। শহর-গ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে চলছে মাইকিং। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিয়মিত তৃণমূলে সভা করে জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক সমাগম ঘটানোর তৎপরতা চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরের প্রস্তুতি চলছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এবারের আগমন ঘিরে বাড়তি উদ্দীপনা বিরাজ করছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। জনসভা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নবরূপে সাজছে চট্টগ্রাম। কর্ণফুলী নদীর দুই প্রান্তে (পতেঙ্গা-চাতরি চৌমুহনী-শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত) সড়কের আশপাশের এলাকা রঙে রঙিন হচ্ছে। সড়কের বিভাজনে রঙের প্রলেপ লাগছে। সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়েছে ব্যানার-বিলবোর্ড ও তোরণ।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে স্বাগত জানাতে নেতাকর্মীরা উদগ্রীব। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নানাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরো জনসভায় পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটানো হবে। মাঠের রক্ষণাবেক্ষণ ও মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টানেল উদ্বোধন ও জনসভার বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সুন্দর ও সফল জনসভা হতে যাচ্ছে। যেটি হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে মাইকিং চলছে। মহানগর থেকেও প্রচুর লোক জনসভায় যোগ দিবেন। আমরা ইতোমধ্যে জনসভা উপলক্ষে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।’

দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও জেলায় সভা করেছেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাতে বেশি লোক আনা যায় ইতোমধ্যে সেই বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছেন নেতারা। যুবলীগের পক্ষ থেকে পৃথক টিম করে দেয়া হয়েছে। টিমের দায়িত্বশীল নেতারা আজ ও আগামীকাল সভা করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন উপজেলায় সভা করে জনসভায় উপস্থিতি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠ কয়েকদফা পরিদর্শন করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের মাঠে নির্মাণ করা হচ্ছে নৌকার আদলে সাত হাজার বর্গফুটের বড় মঞ্চ। এই মঞ্চে একসাথে ৩০০ নেতা বসতে পারবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড;