চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তালাবদ্ধ ঘরে ‘আইসিইউ’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তালাবদ্ধ ঘরে ‘আইসিইউ’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তালাবদ্ধ ঘরে ‘আইসিইউ’

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া ।।

তিন বছর ধরে তালাবদ্ধ কক্ষে পড়ে আছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পরিপূর্ণ সুবিধার ৮টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) বেড । কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা জটিলতার কারণে আইসিইউ স্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে করোনা মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ স্থাপনের জন্য বেড, মনিটর ও ভ্যান্টিলেটর পাঠানো হয়। ১০ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি নতুন সরঞ্জামের আইসিইউ ইউনিট। অথচ আইসিইউ স্থাপনে কোনো প্রকার আইনগত বাধা নেই বলে দাবি করছেন আইনজীবীরা। বরং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার সংকটেই আইসিইউ স্থাপন করতে না পারার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সচেতন নাগরিক কমিটি টিআইবি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘তিন বছর আগে কেনা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ সামগ্রী নিয়ে সরবরাহকারীর সাথে স্বাস্থ্য দপ্তরের সমস্যা হয়। এটি নিয়ে দুর্নীতির মামলাও হয়। কিন্তু আদালত আইসিইউ স্থাপনে বাধা বা যন্ত্রপাতি জব্দ করেনি। তাই এটি স্থাপনে আন্তরিকতা থাকলে তা আটকে থাকতো না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতা, দক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভেন্টিলেটর, কার্ডিয়াক মনিটরসহ যে ৮টি আইসিইউ বেড পড়ে আছে সেগুলোর দাম ৬ কোটি টাকা। কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ ও মামলা জটিলতার কারণে এগুলো স্থাপন করা যাচ্ছে না বলে দাবি করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য সচিবের কাছে চিঠি লিখে এসব বেড স্থাপনের অনুমতি চেয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্ববাধায়ক অসীম কুমার নাথ। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে মৌখিকভাবে দ্রুততার সাথে নতুন ও পুরাতন বেড, মনিটর ও ভ্যান্টিলেটর দিয়ে আইসিইউ স্থাপনের নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘সরকার যে ১০টি আইসিইউ বেড জেনারেল হাসপাতালকে দিয়েছে সেগুলোসহ মোট ২০টি আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ আগামী রোববারের মধ্যে শেষ হতে পারে। আজকে (শুক্রবার) বিদ্যুতের কাজ চলছে। কালকের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ভ্যান্টিলেটর সুবিধা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত সকল রোগীর ভ্যান্টিলেটরের প্রয়োজন হয় না। হাইফ্লো-অক্সিজেন, রেস্পিরেটরসহ বিভিন্ন রকম পদ্ধতি আছে। এছাড়া আমাদের কাছে যে ১০টি ভ্যান্টিলেটর আছে, তাতে ডিভাইডার ব্যবহার করে আমরা ২০ আইসিইউ বেডে ভ্যান্টিলেটর সুবিধা দিতে পারবো।’

আইসিইউ স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘আমাদের এখন ইলেকট্রিকের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হওয়ার পরে টাইলসের কাজ শুরু হবে। এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় টাইলস পাওয়া যাচ্ছে না। টাইলস এনে মিস্ত্রিকে দিয়ে সেগুলো লাগাতে যতদিন সময় লাগবে, ততদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নগরীর ভ্যান্টিলেটরসহ আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা রোগীর (কোভিড-১৯) চিকিৎসার জন্য পর্যায়ক্রমে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা একজোট হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ২০ আইসিইউ বেডসহ ১০০ শয্যার বিশেষায়িত ‘করোনা হাসপাতালে’ রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ২৫ এপ্রিল এটি চালু করার কথা। যদিও এ হাসপাতাল প্রস্তুত করতে সময় লাগবে আরও অনেক বেশি লাগবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ৩৩ জন রোগীর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে ৫ বছর বয়সী শিশু, ৫০ বছর বয়সী মহিলা ও ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ আইসিইউ না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।