Dhaka ০৬:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীতাকুণ্ডে ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশী!

সীতাকুণ্ডে ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশী!

বারো বছরের নাদিয়া সোলতানা । জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিন যাবত কোন রকম চলাফেরা করতে পারছিল না। বার বার পড়ে যাচ্ছিল । স্বাভাবিক সময়ের জ্বরের মতো না এই জ্বর! প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। তিন-চার ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ১০৪ / ১০৫ ডিগ্রিতে। চিকিৎসক কয়েক ধরনের ওষুধ দিলেও কমছিল না জ্বর। শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেন। প্রায় ছয় দিন পর একটু সুস্থ হয় নাদিয়া। কিন্তু শরীরের ব্যাথা যায়না ।

শুধু নাদিয়া না জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছে সীতাকুণ্ডের অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য। কিছুদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে জ্বরের রোগী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ৮০ ভাগই জ্বরে আক্রান্ত। অনেকেই ভুগছেন ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায়।

চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের মতো জ্বরের এত রোগী অতীতে কোনো বছর পাওয়া যায়নি। পরিবারের একজন সেরে উঠতে না উঠতেই আক্রান্ত হচ্ছে আরেকজন।অনেকের জ্বর আসার কয়েকদিনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, সর্দি, কাশিসহ নানা জটিলতা।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে নারী-পুরুষের র্দীঘ লাইন। অনেকের কোলে শিশু। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে টিকিট কাটার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন তারা। লাইনে থাকা বেশির ভাগ রোগী জ্বরে আক্রান্ত।

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বেড়ে অসংখ্য রোগী ভর্তি । সবারই তিন থেকে ৬ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত। তারা ওষুধ কিনে খেলেও জ্বর ও শরীরের ব্যথা-বেদনা সহজে ছাড়ছে না। এর মধ্যে পরীক্ষায় কারো কারো ডেঙ্গু পজেটিভ হলেও বাকিরা লক্ষণ দেখে অনুমাননির্ভর ওষুধ খাচ্ছেন চিকনগুনিয়া কিংবা ভাইরাস জ্বর ভেবে।

রোগীরা জানিয়েছেন জ্বর যখন আসে, তখন তা ১০৬ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছায় । তার সাথে শরীরে অবর্ণনীয় ব্যথা-বেদনা ।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন এবার এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের জ্বর আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা, ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন ।

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা সীতাকুন্ডের ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন আক্রান্ত রোগীরা। তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআই- টিআইডির অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা হাসপাতালে আলাদা আলাদা চিকিৎসা টিম গঠন করেছি। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, কোভিট এবং নরমাল জ্বর। এবার এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের জ্বর আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডেঙ্গু নেগেটিভ হলেও চিকুনগুনিয়া লক্ষণ থাকা রোগীদেরকে সাসপেক্টেড চিকুনগুনিয়া রোগী হিসেবে ধরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি ।

সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শহরের পাশাপাশি জ্বরের প্রকোপ গ্রামেও। অনেকের তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

সীতাকুণ্ডে ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী, ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশী!

আপডেটের সময় : ১১:৪২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

বারো বছরের নাদিয়া সোলতানা । জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিন যাবত কোন রকম চলাফেরা করতে পারছিল না। বার বার পড়ে যাচ্ছিল । স্বাভাবিক সময়ের জ্বরের মতো না এই জ্বর! প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। তিন-চার ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ১০৪ / ১০৫ ডিগ্রিতে। চিকিৎসক কয়েক ধরনের ওষুধ দিলেও কমছিল না জ্বর। শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেন। প্রায় ছয় দিন পর একটু সুস্থ হয় নাদিয়া। কিন্তু শরীরের ব্যাথা যায়না ।

শুধু নাদিয়া না জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছে সীতাকুণ্ডের অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য। কিছুদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে জ্বরের রোগী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ৮০ ভাগই জ্বরে আক্রান্ত। অনেকেই ভুগছেন ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায়।

চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের মতো জ্বরের এত রোগী অতীতে কোনো বছর পাওয়া যায়নি। পরিবারের একজন সেরে উঠতে না উঠতেই আক্রান্ত হচ্ছে আরেকজন।অনেকের জ্বর আসার কয়েকদিনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, সর্দি, কাশিসহ নানা জটিলতা।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে নারী-পুরুষের র্দীঘ লাইন। অনেকের কোলে শিশু। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে টিকিট কাটার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন তারা। লাইনে থাকা বেশির ভাগ রোগী জ্বরে আক্রান্ত।

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় বেড়ে অসংখ্য রোগী ভর্তি । সবারই তিন থেকে ৬ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত। তারা ওষুধ কিনে খেলেও জ্বর ও শরীরের ব্যথা-বেদনা সহজে ছাড়ছে না। এর মধ্যে পরীক্ষায় কারো কারো ডেঙ্গু পজেটিভ হলেও বাকিরা লক্ষণ দেখে অনুমাননির্ভর ওষুধ খাচ্ছেন চিকনগুনিয়া কিংবা ভাইরাস জ্বর ভেবে।

রোগীরা জানিয়েছেন জ্বর যখন আসে, তখন তা ১০৬ ডিগ্রিতে গিয়ে পৌঁছায় । তার সাথে শরীরে অবর্ণনীয় ব্যথা-বেদনা ।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন এবার এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের জ্বর আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা, ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন ।

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা সীতাকুন্ডের ঘরে ঘরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন আক্রান্ত রোগীরা। তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীর ব্যথায় আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআই- টিআইডির অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা হাসপাতালে আলাদা আলাদা চিকিৎসা টিম গঠন করেছি। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, কোভিট এবং নরমাল জ্বর। এবার এমন কিছু রোগী তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের জ্বর আছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জয়েন্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা ফুলে গেছে। জ্বর কমলেও তাদের ফোলা এবং ব্যথা কমানো যাচ্ছে না। এ ধরনের রোগীকে তারা চিকনগুনিয়া হিসেবে ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। ডেঙ্গু নেগেটিভ হলেও চিকুনগুনিয়া লক্ষণ থাকা রোগীদেরকে সাসপেক্টেড চিকুনগুনিয়া রোগী হিসেবে ধরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি ।

সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শহরের পাশাপাশি জ্বরের প্রকোপ গ্রামেও। অনেকের তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন