Dhaka ১২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীতাকুণ্ডে গণশুনানিতে ২৫ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান, জেলা প্রশাসকের অনন্য উদ্যোগ

সীতাকুণ্ডে গণশুনানিতে ২৫ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান, জেলা প্রশাসকের অনন্য উদ্যোগ

অসংখ্য মানুষের মাঝখানে বসে তাদের কথা শুনছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। এ সময় বিভিন্নজন বিভিন্ন দাবী করেন । এর মধ্যে কারো দাবি ছিল গ্রাম্য সড়ক চলাচলের অযোগ্য, কারো দাবি এলাকায় বেড়েছে মাদক ও দেহ ব্যবসা! কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোটার আইডি না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা । আবার কেউ বলছেন বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেননি তারা। তাই মাননীয় জেলা প্রশাসক যেন তাদের এসব সমস্যার সমাধান করে দেন।সব শুনে মুহুর্তেই সমাধান করার মতো সবকটি কাজ তাৎক্ষণিক শুরুর ব্যবস্থাসহ দপ্তর প্রধানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে করতালিতে মেতে উঠেন উপস্থিত জনতা। এমন একটি চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে।

মঙ্গলবার ( ১৯ আগস্ট ) বেলা সাড়ে ১১টায় এখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। এতে ঐ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার সব শ্রেণির মানুষ উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসক তাদের এলাকায় কি কি সমস্যা আছে জানতে চাইলে একের পর এক সমস্যার কথা বলতে থাকেন তারা। এভাবে ১৭ জন নারী-পুরুষ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি সমস্যা তুলে ধরে সমাধান চান।

(Clip-Group)

গণশুনানিতে অংশ গ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বর্তমান সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্মা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর রেললাইন দিয়ে হাঁটা যায় না, মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা মহিলা ও যুবতীদের ইভটিজিং করে। আবার অনেকে শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করে। এখানে প্রায় দুই লক্ষ লোকের বসবাস। কিন্তু নাগরিক সেবা বলতে কিছুই নাই। আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীরও তেমন তৎপরতা নাই। কোন ঘটনা ঘটার দীর্ঘক্ষণ পরে পুলিশ আসেন। তাই এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানান। তাছাড়া ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ- এসব বিষয় উঠে আসে গণশুনানিতে এবং রাস্তা-ঘাট, খাল-নালা উন্নয়ন বিষয়কসহ নানা কথা উঠে আসে গণশুনানিতে। একইভাবে এ ধরনের গণশুনানি প্রতি মাসে আয়োজনের অনুরোধ জানান শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা।

তারা বলেন, আগে সমস্যার সমাধানে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হতো। আজ জেলা প্রশাসক নিজে এসে কথা শুনেছেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত গণশুনানি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের বাস্তব পদক্ষেপ। ধারাবাহিকভাবে এটি অব্যাহত থাকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সুশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন ।

amar desh

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি, জনগণের সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো । জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ।

শুনানিকালে প্রধান অতিথি ডিসি বলেন, চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বর্তমানে ৩৬টিতে নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। এসব এলাকায় সমস্যা বেড়েছে। জনগণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ডিসি অফিস পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে পারেন না। তাই জনগণের দোরগোড়ায় এসে তাদেরকে সেবা পৌঁছে দিতে তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি শুরু করেছেন এবং সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা শুনে তিনি সমাধান করার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধান করাই প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। মানুষকে সেবা পেতে দৌড়াতে হবে না, প্রশাসন তাদের দোরগোড়ায় যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। বলতে গেলে এ আগস্ট মাস আমাদের বিজয়ের মাস। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয় ধরে রাখতে হবে। এ ধরনের গণশুনানি কেবল সমস্যা সমাধান নয়, বরং জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি জারুল গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি ও সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জেলে পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ। এ সময় উপজেলার অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ; 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

সীতাকুণ্ডে গণশুনানিতে ২৫ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান, জেলা প্রশাসকের অনন্য উদ্যোগ

আপডেটের সময় : ০৪:৩৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

অসংখ্য মানুষের মাঝখানে বসে তাদের কথা শুনছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। এ সময় বিভিন্নজন বিভিন্ন দাবী করেন । এর মধ্যে কারো দাবি ছিল গ্রাম্য সড়ক চলাচলের অযোগ্য, কারো দাবি এলাকায় বেড়েছে মাদক ও দেহ ব্যবসা! কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোটার আইডি না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা । আবার কেউ বলছেন বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেননি তারা। তাই মাননীয় জেলা প্রশাসক যেন তাদের এসব সমস্যার সমাধান করে দেন।সব শুনে মুহুর্তেই সমাধান করার মতো সবকটি কাজ তাৎক্ষণিক শুরুর ব্যবস্থাসহ দপ্তর প্রধানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে করতালিতে মেতে উঠেন উপস্থিত জনতা। এমন একটি চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে।

মঙ্গলবার ( ১৯ আগস্ট ) বেলা সাড়ে ১১টায় এখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। এতে ঐ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার সব শ্রেণির মানুষ উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসক তাদের এলাকায় কি কি সমস্যা আছে জানতে চাইলে একের পর এক সমস্যার কথা বলতে থাকেন তারা। এভাবে ১৭ জন নারী-পুরুষ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি সমস্যা তুলে ধরে সমাধান চান।

(Clip-Group)

গণশুনানিতে অংশ গ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বর্তমান সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্মা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর রেললাইন দিয়ে হাঁটা যায় না, মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা মহিলা ও যুবতীদের ইভটিজিং করে। আবার অনেকে শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করে। এখানে প্রায় দুই লক্ষ লোকের বসবাস। কিন্তু নাগরিক সেবা বলতে কিছুই নাই। আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীরও তেমন তৎপরতা নাই। কোন ঘটনা ঘটার দীর্ঘক্ষণ পরে পুলিশ আসেন। তাই এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানান। তাছাড়া ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, আইনশৃঙ্খলা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ- এসব বিষয় উঠে আসে গণশুনানিতে এবং রাস্তা-ঘাট, খাল-নালা উন্নয়ন বিষয়কসহ নানা কথা উঠে আসে গণশুনানিতে। একইভাবে এ ধরনের গণশুনানি প্রতি মাসে আয়োজনের অনুরোধ জানান শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা।

তারা বলেন, আগে সমস্যার সমাধানে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হতো। আজ জেলা প্রশাসক নিজে এসে কথা শুনেছেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত গণশুনানি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের বাস্তব পদক্ষেপ। ধারাবাহিকভাবে এটি অব্যাহত থাকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সুশাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন ।

amar desh

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি, জনগণের সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো । জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ।

শুনানিকালে প্রধান অতিথি ডিসি বলেন, চট্টগ্রাম জেলার ১৯১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বর্তমানে ৩৬টিতে নেই কোনো জনপ্রতিনিধি। এসব এলাকায় সমস্যা বেড়েছে। জনগণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ ডিসি অফিস পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাতে পারেন না। তাই জনগণের দোরগোড়ায় এসে তাদেরকে সেবা পৌঁছে দিতে তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে গণশুনানি শুরু করেছেন এবং সরাসরি জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা শুনে তিনি সমাধান করার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধান করাই প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। মানুষকে সেবা পেতে দৌড়াতে হবে না, প্রশাসন তাদের দোরগোড়ায় যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। বলতে গেলে এ আগস্ট মাস আমাদের বিজয়ের মাস। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয় ধরে রাখতে হবে। এ ধরনের গণশুনানি কেবল সমস্যা সমাধান নয়, বরং জনগণ ও প্রশাসনের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি জারুল গাছের চারা রোপণ করেন। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি ও সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ জেলে পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ। এ সময় উপজেলার অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ; 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন