Dhaka ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীতাকুণ্ডে শত শত শিক্ষার্থী স্কুলে যায় ভাঙা সেতু দিয়ে ,সংস্কার করা হয়নি ২০ বছরেও!

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ডিডিটি কারখানার ভেতরে অবস্থিত ডিডিটি কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার । ৪ র্থ শ্রেণিতে পড়ে সে । স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যে সেতুটি পার হতে হয় সেটি প্রথমত জরাজীর্ণ দ্বিতীয়ত নড়বড়ে। তাও আবার ভাংগা কাঠের । আস্তে আস্তে সেতু পার হচ্ছিল সে। তার মনে ভীষণ ভয়ও কাজ করছে । মাঝপথে গর্ত দেখে এগিয়ে যেতে ভয় পায় । পেছনে থাকা সহপাঠীরা এগিয়ে এলে তার মনে সাহস আসে । তাদের সঙ্গে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে সেতু পার হয় সে। এটি প্রতিদিনের চিত্র । নাদিয়ার মতো প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে আসাযাওয়া করছে প্রতিনিয়ত।  প্রতিদিন শতশত কোমলমতি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে বিদ্যালয়ের এই সেতু দিয়ে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবকেরা জানান, সীতাকুণ্ডে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স নামের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র কেমিক্যাল কারখানার ভেতরে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৪ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলেও বিদ্যালয় দুটি চালু রয়েছে। কিন্তু গত ২০ বছরে শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে এটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহিউদ্দীন বলেন, সেতুটি মাঝখানে একেবারেই ভাঙা। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাইতে কষ্ট হয়। ওঁরা (শিক্ষার্থীরা) কোন সময় ভাঙা দিয়ে পরে যায় তা নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি সংস্কারে তাঁরা একাধিকবার কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গত বছর তিন শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার পর অভিভাবকেরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কাঠ দিয়ে সেতুটি আংশিকভাবে মেরামত করেন। কিন্তু বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে আবার আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একাধিকবার কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে গেছি। তারা আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আজও নেওয়া হয়নি ।

সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। গত বছর বর্ষার সময় সেতু পার হওয়ার সময় নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় তাদের সহপাঠী লিয়াকত আলী, ফখরুল ইসলাম শামীম এবং নবম শ্রেণির ছাত্র ইমরানুল ইসলাম নোমান। বর্ষার সময় আমরা বেশি উৎকণ্ঠায় থাকি ।কারণ এ সময় খালে প্রচুর পানি থাকে ।

কথা হয় সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার দে’র সাথে । তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই কাঠের সেতু। অভিভাবকদের বারবার অনুরোধে কিছুদিন পরপরই আমরা কাঠ দিয়ে সেতুর ভাঙা অংশগুলো মেরামত করি। কিন্তু তা বেশি দিন টেকে না। বিশেষ করে বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে সেতুটি আবার ভেঙে পড়ে। এটি এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।

এ বিষয়ে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচলের সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

সীতাকুণ্ডে শত শত শিক্ষার্থী স্কুলে যায় ভাঙা সেতু দিয়ে ,সংস্কার করা হয়নি ২০ বছরেও!

আপডেটের সময় : ০৪:২৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ডিডিটি কারখানার ভেতরে অবস্থিত ডিডিটি কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার । ৪ র্থ শ্রেণিতে পড়ে সে । স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যে সেতুটি পার হতে হয় সেটি প্রথমত জরাজীর্ণ দ্বিতীয়ত নড়বড়ে। তাও আবার ভাংগা কাঠের । আস্তে আস্তে সেতু পার হচ্ছিল সে। তার মনে ভীষণ ভয়ও কাজ করছে । মাঝপথে গর্ত দেখে এগিয়ে যেতে ভয় পায় । পেছনে থাকা সহপাঠীরা এগিয়ে এলে তার মনে সাহস আসে । তাদের সঙ্গে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে সেতু পার হয় সে। এটি প্রতিদিনের চিত্র । নাদিয়ার মতো প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে আসাযাওয়া করছে প্রতিনিয়ত।  প্রতিদিন শতশত কোমলমতি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে বিদ্যালয়ের এই সেতু দিয়ে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবকেরা জানান, সীতাকুণ্ডে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স নামের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র কেমিক্যাল কারখানার ভেতরে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৪ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলেও বিদ্যালয় দুটি চালু রয়েছে। কিন্তু গত ২০ বছরে শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে এটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মহিউদ্দীন বলেন, সেতুটি মাঝখানে একেবারেই ভাঙা। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাইতে কষ্ট হয়। ওঁরা (শিক্ষার্থীরা) কোন সময় ভাঙা দিয়ে পরে যায় তা নিয়ে আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি সংস্কারে তাঁরা একাধিকবার কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গত বছর তিন শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার পর অভিভাবকেরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কাঠ দিয়ে সেতুটি আংশিকভাবে মেরামত করেন। কিন্তু বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে আবার আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একাধিকবার কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে গেছি। তারা আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আজও নেওয়া হয়নি ।

সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। গত বছর বর্ষার সময় সেতু পার হওয়ার সময় নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় তাদের সহপাঠী লিয়াকত আলী, ফখরুল ইসলাম শামীম এবং নবম শ্রেণির ছাত্র ইমরানুল ইসলাম নোমান। বর্ষার সময় আমরা বেশি উৎকণ্ঠায় থাকি ।কারণ এ সময় খালে প্রচুর পানি থাকে ।

কথা হয় সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার দে’র সাথে । তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই কাঠের সেতু। অভিভাবকদের বারবার অনুরোধে কিছুদিন পরপরই আমরা কাঠ দিয়ে সেতুর ভাঙা অংশগুলো মেরামত করি। কিন্তু তা বেশি দিন টেকে না। বিশেষ করে বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে সেতুটি আবার ভেঙে পড়ে। এটি এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।

এ বিষয়ে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচলের সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;
আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন