Dhaka ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২ বছরে মারা গেছেন ৮ পর্যটক

বন বিভাগের গাফিলতি , সীতাকুণ্ড ঝরনায় আবারো পর্যটকের মৃত্যু

অবশেষে সীতাকুণ্ডের ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে দেয়া হচ্ছে নির্দেশনা , লেকে নামলে ৫০০ টাকা জরিমানা

পর্যটকদের মৃত্যুর মিছিল থামছে না চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে । সর্বশেষ শনি ও রোববার পরপর দুই দিনে দুই পর্যটকের মৃত্যুর পর স্পটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। তাছাড়া চোখে পড়েছে বন বিভাগের গাফিলতি । কেননা গত বছরের ১৭ এপ্রিল সহস্রধারা–২ ঝরনায় এক তরুণের মৃত্যুর পর পর্যটকদের নিরাপত্তায় বন বিভাগকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এক বছরেও তাঁরা পরামর্শ বাস্তবায়ন করেনি বন বিভাগ। যে কারণে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়েই চলছে ।

গত দুই বছরে সীতাকুণ্ডের এই ঝরনাগুলোয় আট পর্যটক মারা গেছেন। তার মধ্যে ২০২৩ সালের ২ জুলাই ঝরঝরি ঝরনায় এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। তার দুই মাসের মাথায় ২৮ অক্টোবর সহস্রধারা–২ ঝরনায় আরও এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর ৯ দিনের মাথায় ৯ সেপ্টেম্বর বিলাসী ঝরনায় সেলফি তুলতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ৪ অক্টোবর রূপসী ঝরনায় একসঙ্গে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার আবারও ওই ঝরনাটিতে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১৭ এপ্রিল ও গতকাল সহস্রধারা–২ ঝরনায় দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন চাকরিজীবী আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন স্কুল – কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

সর্বশেষ রোববার ( ১৪ জুন ) দুপুরে উপজেলার বারইয়াঢালা ইউনিয়নের বড় দারোগাহাটের পাশে মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের রূপসী ঝরনায় কূপে ডুবে মারা যান কলেজছাত্র মো. আসিফ উদ্দিন (২৪)।
এবং এর আগেরদিন শনিবার ( ১৪ জুন ) বিকেলে সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা-২ ঝরনার হ্রদে ডুবে এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন আনোয়ারের (১৭) মৃত্যু হয়। সে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সীতাকুণ্ডে মোট ৭টি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো- ঝরঝরি, মধুখায়া, সহস্ররধারা-২, সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা, অগ্নিকুণ্ড ও বিলাসী। এসবের মধ্যে উপজেলার ছোটদারোগারহাট লবণাক্ষে অবস্থিত সহস্ররধারা-২, ইকোপার্কে অবস্থিত সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা ও অগ্নিকুণ্ড এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা বেশি থাকে। যাবার পথের অবস্থার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে সুন্দর অবস্থানে রয়েছে সহস্ররধারা-২ ঝরনা। ফলে এখানেই দর্শনার্থীর এখানে বেশি আসেন। এই ঝরনায় যাতায়াতের পথে রয়েছে আরেকটি পাহাড়ি লেক। বর্ষায় লেকের পানি বেশি হওয়ায় নৌকা ব্যবহার করে তা পার হয়ে ঝরনায় যান দর্শনার্থীরা। এতে নৌকা উল্টে এবং এই লেকে নামলে তাতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ।

ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনায় পর্যটকদের হতাহতের পাঁচটি কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে পর্যটকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, পর্যটন স্পটে নিরাপত্তার অভাব, অভিভাবকদের উদাসীনতা, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা ও পর্যটন স্পটে মাদক গ্রহণ করা।

গত বছর সহস্রধারা-২ ঝরনায় আরেক পর্যটকের মৃত্যুর পর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল— বিপজ্জনক স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন, সাঁতার না জানা পর্যটকদের পানিতে নামতে না দেওয়া এবং ইজারাদারের লোকবল বাড়ানো।

কিন্তু এসব পরামর্শের অনেকই বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন। সোমবার দুপুরে সহস্রধারা-২ ঝরনায় গিয়ে সাঁতার কাটার নিষেধাজ্ঞার ফেস্টুন দেখা গেলেও, হ্রদের গভীরতা বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করার কোনো নির্দেশনা দেখা যায়নি।

বন বিভাগের বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, পর্যটকেরা ঝরনায় গিয়ে অনেক সময় কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করেন। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইজারাদাররা এ বছর লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া ও গাইডের ব্যবস্থা করেছেন, যা গত বছর ছিল না।

তবে সহস্রধারা ঝরনার ইজারাদার ওহিদুল ইসলাম শরীফ বলেন, আমরা পর্যটকদের সাঁতার কাটতে নিরুৎসাহিত করি, কিন্তু তারা শুনতে চান না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

২ বছরে মারা গেছেন ৮ পর্যটক

বন বিভাগের গাফিলতি , সীতাকুণ্ড ঝরনায় আবারো পর্যটকের মৃত্যু

আপডেটের সময় : ০৪:৩৫:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

পর্যটকদের মৃত্যুর মিছিল থামছে না চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে । সর্বশেষ শনি ও রোববার পরপর দুই দিনে দুই পর্যটকের মৃত্যুর পর স্পটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। তাছাড়া চোখে পড়েছে বন বিভাগের গাফিলতি । কেননা গত বছরের ১৭ এপ্রিল সহস্রধারা–২ ঝরনায় এক তরুণের মৃত্যুর পর পর্যটকদের নিরাপত্তায় বন বিভাগকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এক বছরেও তাঁরা পরামর্শ বাস্তবায়ন করেনি বন বিভাগ। যে কারণে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়েই চলছে ।

গত দুই বছরে সীতাকুণ্ডের এই ঝরনাগুলোয় আট পর্যটক মারা গেছেন। তার মধ্যে ২০২৩ সালের ২ জুলাই ঝরঝরি ঝরনায় এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। তার দুই মাসের মাথায় ২৮ অক্টোবর সহস্রধারা–২ ঝরনায় আরও এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর ৯ দিনের মাথায় ৯ সেপ্টেম্বর বিলাসী ঝরনায় সেলফি তুলতে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ৪ অক্টোবর রূপসী ঝরনায় একসঙ্গে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার আবারও ওই ঝরনাটিতে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১৭ এপ্রিল ও গতকাল সহস্রধারা–২ ঝরনায় দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন চাকরিজীবী আর বাকিরা সবাই বিভিন্ন স্কুল – কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

সর্বশেষ রোববার ( ১৪ জুন ) দুপুরে উপজেলার বারইয়াঢালা ইউনিয়নের বড় দারোগাহাটের পাশে মিরসরাইয়ের ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের রূপসী ঝরনায় কূপে ডুবে মারা যান কলেজছাত্র মো. আসিফ উদ্দিন (২৪)।
এবং এর আগেরদিন শনিবার ( ১৪ জুন ) বিকেলে সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা-২ ঝরনার হ্রদে ডুবে এসএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন আনোয়ারের (১৭) মৃত্যু হয়। সে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সীতাকুণ্ডে মোট ৭টি ঝরনা রয়েছে। এগুলো হলো- ঝরঝরি, মধুখায়া, সহস্ররধারা-২, সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা, অগ্নিকুণ্ড ও বিলাসী। এসবের মধ্যে উপজেলার ছোটদারোগারহাট লবণাক্ষে অবস্থিত সহস্ররধারা-২, ইকোপার্কে অবস্থিত সহস্ররধারা-১, সুপ্তধারা ও অগ্নিকুণ্ড এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা বেশি থাকে। যাবার পথের অবস্থার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে সুন্দর অবস্থানে রয়েছে সহস্ররধারা-২ ঝরনা। ফলে এখানেই দর্শনার্থীর এখানে বেশি আসেন। এই ঝরনায় যাতায়াতের পথে রয়েছে আরেকটি পাহাড়ি লেক। বর্ষায় লেকের পানি বেশি হওয়ায় নৌকা ব্যবহার করে তা পার হয়ে ঝরনায় যান দর্শনার্থীরা। এতে নৌকা উল্টে এবং এই লেকে নামলে তাতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ।

ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনায় পর্যটকদের হতাহতের পাঁচটি কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে পর্যটকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, পর্যটন স্পটে নিরাপত্তার অভাব, অভিভাবকদের উদাসীনতা, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা ও পর্যটন স্পটে মাদক গ্রহণ করা।

গত বছর সহস্রধারা-২ ঝরনায় আরেক পর্যটকের মৃত্যুর পর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বন বিভাগকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল— বিপজ্জনক স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন, সাঁতার না জানা পর্যটকদের পানিতে নামতে না দেওয়া এবং ইজারাদারের লোকবল বাড়ানো।

কিন্তু এসব পরামর্শের অনেকই বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারাই স্বীকার করছেন। সোমবার দুপুরে সহস্রধারা-২ ঝরনায় গিয়ে সাঁতার কাটার নিষেধাজ্ঞার ফেস্টুন দেখা গেলেও, হ্রদের গভীরতা বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করার কোনো নির্দেশনা দেখা যায়নি।

বন বিভাগের বারইয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, পর্যটকেরা ঝরনায় গিয়ে অনেক সময় কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করেন। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইজারাদাররা এ বছর লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া ও গাইডের ব্যবস্থা করেছেন, যা গত বছর ছিল না।

তবে সহস্রধারা ঝরনার ইজারাদার ওহিদুল ইসলাম শরীফ বলেন, আমরা পর্যটকদের সাঁতার কাটতে নিরুৎসাহিত করি, কিন্তু তারা শুনতে চান না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন