পাথর কমে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে রেললাইনে

পাথর কমে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে রেললাইনে
পাথর কমে যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে রেললাইনে

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন বিকেল ৫ টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় । শুরুতে ট্রেনের লোকোমাস্টার ঘণ্টায় ১০-২০ কিলোমিটার, পরে সীতাকুণ্ডের আগ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার বেগে চালালেন তিনি।

ট্রেনটি বারৈয়াঢালা আসার পরপরই স্পিড কমিয়ে আনা হয় ৪০ কিলোমিটারে। এ স্পিডে চললো বারৈয়ারহাট চিনকি আস্তানা পর্যন্ত।

ভাটিয়ারির বারৈয়াঢালা থেকে বারৈয়ারহাট চিনকি আস্তানা ৩৫ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ। এতটুকু পথে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ কিলোমিটার কম গতিতে চালানোর কারণ রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা।

খুব সামান্য পাথর আছে বারতাকিয়া, মিরসরাই, মস্তাননগর ও চিনকি আস্তানা রেলপথ পর্যন্ত। শুধু এখানে নয়, কুমিল্লা-আখাউড়ার মন্দবাগ, কুমিল্লার শশীদল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, রাজধানীর কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত এবং সিলেট রুটসহ দেশের বেশিরভাগ রেললাইনেই এমন অবস্থা। আর এ কারণেই ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা।

লোকো রার্নিং কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, সোনার বাংলা, সুবর্ণ ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে চলে। যে রেলপথে সমস্যা আছে অর্থাৎ পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, লোহার পাত, ভেঙে বা খোয়া যাওয়া ক্লিপ-হুক, নাট-বল্টু, ফিসপ্লেট, স্লিপারে সমস্যা থাকলে তখন ওই রুটে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লোকোমাস্টার বলেন, দেশে এমন রেললাইন আছে যেখানে শুধু পাথর নেই তা নয়, লোহার পাতও খুবই নড়বড়ে। ট্রেন চালানোর সময় মনে হয় ট্রেনটি মূল রেলপথ থেকে বাইরে চলে যাচ্ছে। ঝাঁকুনির কারণে ট্রেনের স্টিয়ারিং ধরে রাখাও দায় হয়ে যায়। এ ধরনের রেলপথের কারণে দেশে ৭০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্রেনের বগি একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত থাকার কারণে যাত্রীরা তেমন ঝাঁকুনির মধ্যে পড়েন না। সবচেয়ে বাজে অবস্থার শিকার হন লোকোমাস্টাররা। কারণ তারা ইঞ্জিনে থাকেন, রেলপথের বেহাল অবস্থা হলে ধাক্কা-ঝাঁকুনি তাদেরই বেশি সহ্য করতে হয়।

৭০ ভাগ দুর্ঘটনা এড়াতে তাই রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। অন্যথায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রেললাইনে ব্যবহৃত পাথর শতভাগ আমদানি নির্ভর। ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানি করতে হয়। দেশে একসময় পর্যাপ্ত পাথর ছিল। কিন্তু বর্তমানে নেই বললেই চলে। দেশি পাথরের চেয়ে দুই গুণ বেশি দামে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে।

২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার রেলপথে প্রতিবছর ১ কোটি ঘনফুট (সিএফটি) পাথর প্রয়োজন। সেখানে বছরে ১০ লাখ ঘনফুট পাথর দিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া লোহার পাত, ভেঙে বা খোয়া যাওয়া ক্লিপ-হুক পূরণে তেমন নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। প্রায় ৭০ শতাংশ লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে পাথরবিহীন রেললাইনের কারণে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সুবক্তগীন বলেন, প্রতি বছর ১ কোটি সিএফটি পাথর প্রয়োজন হলেও আমরা পাচ্ছি মাত্র ১০ থেকে ২০ লাখ সিএফটি, অর্থাৎ ২০ ভাগ পাচ্ছি। পুরো রেলপথে যে পরিমাণ পাথর প্রয়োজন, সেই পরিমাণ পাথর নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মূলত বাজেট কম হওয়ার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রডগেজ রেললাইন হচ্ছে। বুলেট ট্রেন আসছে। এ জন্য আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এ পরিকল্পনায় আগামী বছরের মধ্যে রেল রুটে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।