Dhaka ১২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রেন চলাচল বন্ধ , প্রত্যাহারের আহ্বান মন্ত্রণালয়ের

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুই জোড়া নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা (লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)। নিজেদের দাবিতে অনড় রেলওয়ের রানিং স্টাফরা, যার ফলে গতকাল সোমবার গভীর রাত থেকে সারাদেশে বন্ধ হয়ে পড়েছে ট্রেন চলাচল। মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে (গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটের পর থেকে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। গতকাল রাত ১২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার সাথে এই ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে (রেল ধর্মঘটে) আমরা অটল আছি। রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে, সেগুলো আমরা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য জন্য আমাদের লোকোমাস্টারসহ গার্ডদের বলেছি।

তবে রাত ১২টার পর চট্টগ্রাম থেকে কোনো ইঞ্জিন বের হয়নি। সারাদেশ থেকেও একই অবস্থা। আমরা সারাদিন পাহাড়তলীতে আমাদের কার্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং করেছি। রাতের খাবারের বিরতি দিয়ে আমাদের মিটিং শুরু হয়েছে। রাতে রেল ভবন থেকে আমাদেরকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আমাদের দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। কিনু্ত আমাদের লোকজন কেউ মানছেনা। এখন নেতারা যদি ট্রেন চালানোর জন্য বলতে আসে–তাদের উপর ক্ষিপ্ত হবেন। সবাই খুব ক্ষুব্ধ।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার আগ পর্যন্ত সবগুলো ট্রেন ঠিক সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে গেছে। একইভাবে ঢাকা–সিলেটসহ অন্যান্য জেলা থেকে সব ট্রেন যথাসময়ে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে। তবে ট্রেন চালক, গার্ড ও টিটিইদের ‘রেল বন্ধ’ আন্দোলনে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

অন্যদিকে স্টাফদের কর্মবিরতি শুরুর পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া তিন ট্রেন হলো কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলাপুর রেলস্টেশন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, সবশেষ তিনটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের পর একে একে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। তবে তিনটি ট্রেনই যাত্রীতে বোঝাই ছিল।

রানিং স্টাফদের দাবির বিষয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো মতামতের ভিত্তিতে গতকাল রেল ভবনে একটি সভা ডেকেছিল রেলপথ মন্ত্রাণালয়। কিন্তু দাবির বিষয়ে অনড় থাকায় গতকাল সোমবারের সভায় যোগ দেননি রেলের রানিং স্টাফরা। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার থেকে (গতকাল রাত ১২টা–০১ মিনিটের পর থেকে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পূর্বঘোষিত যে ঘোষণা ছিল, তা বহাল রেখেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গতকাল রাতে বলেন, আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের সভা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের কোনো কর্মচারী সভায় অংশগ্রহণ করেননি। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের দাবি মানা হবে না। আমাদের কাছে আরও সময় চাওয়া হবে, সেজন্যই আমরা আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মঙ্গলবার (গতকাল রাত ১২টা–০১ মিনিট থেকে) থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছি। ‘রাত ১২টার পর কোনো ট্রেন আমরা পরিচালনা করিনি। তবে রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়ে যাবে, সেগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে’। আমাদের রানিং স্টাফরা কেউ মঙ্গলবার থেকে ট্রেন চালাবে না।

আন্দোলনে যুক্ত থাকা নেতারা জানিয়েছেন, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।

ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান :

ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সংবাদ মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা (চলমান ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী) ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে সারাদেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশংকা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি–দাওয়া/চাহিদা পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি–দাওয়াগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে পত্র যোগাযোগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও অব্যাহত আছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ইতোমধ্যে তাদের রানিং অ্যালাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া মাইলেজ অ্যালাউন্স পাবার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে। এ অবস্থায় পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবাদান অব্যাহত রেখে ট্রেন পরিচালনা করাই রেলওয়ের মূল কাজ। সে লক্ষ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের যেকোনো সমস্যা ও দাবি–দাওয়ার বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। রানিং স্টাফদের দাবি–দাওয়া আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এ অবস্থায়, যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ নেবেন বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।

কারা রেলের রানিং স্টাফ, কী দাবি তাদের :

লোকামাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার, গার্ড এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। সারাদেশে রেলওয়ের মোট ২ হাজার ৩৬ জন রানিং স্টাফ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে আছে এক হাজার ৩৬ জন কাজ করেন। তারা ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ সুবিধা পাচ্ছিলেন। অর্থাৎ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো।

মাইলেজ কী : দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।

দুশ্চিন্তায় রেলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা :

এদিকে রেল বন্ধের হুঁশিয়ারিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। এরমধ্যেই ২৮ জানুয়ারির সব ট্রেনের টিকিট টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–কক্সবাজার রুটের পর্যটক এক্সপ্রেসের সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম–সিলেট রুটের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সব টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটের টিকেট বিক্রিও শেষ পর্যায়ে। সারাদেশের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট কিনেছেন হাজার হাজার যাত্রী। মঙ্গলবার সরকারি–বেসরকারি অফিস–আদালত খোলা থাকায় যাত্রীদের অনেকেই অফিসের নানা কাজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কিনেছেন। কিন্তু রেলের রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। আজাদী

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

ট্রেন চলাচল বন্ধ , প্রত্যাহারের আহ্বান মন্ত্রণালয়ের

আপডেটের সময় : ০৬:০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা (লোকো মাস্টার, গার্ড, টিটিই)। নিজেদের দাবিতে অনড় রেলওয়ের রানিং স্টাফরা, যার ফলে গতকাল সোমবার গভীর রাত থেকে সারাদেশে বন্ধ হয়ে পড়েছে ট্রেন চলাচল। মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে (গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটের পর থেকে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। গতকাল রাত ১২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার সাথে এই ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচিতে (রেল ধর্মঘটে) আমরা অটল আছি। রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে, সেগুলো আমরা যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য জন্য আমাদের লোকোমাস্টারসহ গার্ডদের বলেছি।

তবে রাত ১২টার পর চট্টগ্রাম থেকে কোনো ইঞ্জিন বের হয়নি। সারাদেশ থেকেও একই অবস্থা। আমরা সারাদিন পাহাড়তলীতে আমাদের কার্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং করেছি। রাতের খাবারের বিরতি দিয়ে আমাদের মিটিং শুরু হয়েছে। রাতে রেল ভবন থেকে আমাদেরকে অনুরোধ করা হচ্ছে। আমাদের দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। কিনু্ত আমাদের লোকজন কেউ মানছেনা। এখন নেতারা যদি ট্রেন চালানোর জন্য বলতে আসে–তাদের উপর ক্ষিপ্ত হবেন। সবাই খুব ক্ষুব্ধ।

চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার আগ পর্যন্ত সবগুলো ট্রেন ঠিক সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে গেছে। একইভাবে ঢাকা–সিলেটসহ অন্যান্য জেলা থেকে সব ট্রেন যথাসময়ে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে। তবে ট্রেন চালক, গার্ড ও টিটিইদের ‘রেল বন্ধ’ আন্দোলনে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

অন্যদিকে স্টাফদের কর্মবিরতি শুরুর পর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়া তিন ট্রেন হলো কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমলাপুর রেলস্টেশন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, সবশেষ তিনটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ের পর একে একে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। তবে তিনটি ট্রেনই যাত্রীতে বোঝাই ছিল।

রানিং স্টাফদের দাবির বিষয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো মতামতের ভিত্তিতে গতকাল রেল ভবনে একটি সভা ডেকেছিল রেলপথ মন্ত্রাণালয়। কিন্তু দাবির বিষয়ে অনড় থাকায় গতকাল সোমবারের সভায় যোগ দেননি রেলের রানিং স্টাফরা। একই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার থেকে (গতকাল রাত ১২টা–০১ মিনিটের পর থেকে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পূর্বঘোষিত যে ঘোষণা ছিল, তা বহাল রেখেছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গতকাল রাতে বলেন, আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের সভা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের কোনো কর্মচারী সভায় অংশগ্রহণ করেননি। আমরা জানতে পেরেছি আমাদের দাবি মানা হবে না। আমাদের কাছে আরও সময় চাওয়া হবে, সেজন্যই আমরা আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মঙ্গলবার (গতকাল রাত ১২টা–০১ মিনিট থেকে) থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছি। ‘রাত ১২টার পর কোনো ট্রেন আমরা পরিচালনা করিনি। তবে রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন ছেড়ে যাবে, সেগুলো নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে’। আমাদের রানিং স্টাফরা কেউ মঙ্গলবার থেকে ট্রেন চালাবে না।

আন্দোলনে যুক্ত থাকা নেতারা জানিয়েছেন, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।

ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান :

ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সংবাদ মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা (চলমান ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী) ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে সারাদেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশংকা রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি–দাওয়া/চাহিদা পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি–দাওয়াগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে পত্র যোগাযোগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও অব্যাহত আছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ইতোমধ্যে তাদের রানিং অ্যালাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া মাইলেজ অ্যালাউন্স পাবার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে। এ অবস্থায় পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আহ্বান জানানো হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবাদান অব্যাহত রেখে ট্রেন পরিচালনা করাই রেলওয়ের মূল কাজ। সে লক্ষ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের যেকোনো সমস্যা ও দাবি–দাওয়ার বিষয় সমাধানে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। রানিং স্টাফদের দাবি–দাওয়া আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এ অবস্থায়, যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ নেবেন বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।

কারা রেলের রানিং স্টাফ, কী দাবি তাদের :

লোকামাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার, সাব লোকো মাস্টার, গার্ড এবং টিটিইরা রেলের রানিং স্টাফ। সারাদেশে রেলওয়ের মোট ২ হাজার ৩৬ জন রানিং স্টাফ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে বর্তমানে আছে এক হাজার ৩৬ জন কাজ করেন। তারা ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ সুবিধা পাচ্ছিলেন। অর্থাৎ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো।

মাইলেজ কী : দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।

দুশ্চিন্তায় রেলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা :

এদিকে রেল বন্ধের হুঁশিয়ারিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। এরমধ্যেই ২৮ জানুয়ারির সব ট্রেনের টিকিট টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা–কক্সবাজার রুটের পর্যটক এক্সপ্রেসের সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম–সিলেট রুটের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সব টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটের টিকেট বিক্রিও শেষ পর্যায়ে। সারাদেশের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট কিনেছেন হাজার হাজার যাত্রী। মঙ্গলবার সরকারি–বেসরকারি অফিস–আদালত খোলা থাকায় যাত্রীদের অনেকেই অফিসের নানা কাজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কিনেছেন। কিন্তু রেলের রানিং স্টাফদের ধর্মঘটের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। আজাদী

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন