Dhaka ১০:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেলা প্রশাসকের জন্য রাতারাতি লাখো টাকার অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ 

যদিও রাস্তার কাজের জন্য অনেক সময় অনেক তদবিরে কাজ হবনা। মানুষের পায়ের নীচে মাটি চলে যায়। আর সে জায়গায় এবার একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যাতে কাদামাটি না মাড়াতে হয়, রাতারাতি তৈরি করে দেওয়া হলো একটি সড়ক। ১৩ হাজার ইট, ২০ ট্রাকভর্তি বালু, আর ৩৩ জন শ্রমিকের ঘামে রাত পোহানোর আগেই হয়ে গেছে ২০০ ফুট লম্বা এই সড়ক।

বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমনই এক ‘আলাদীনের চেরাগ-সদৃশ’ ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিদ্যালয়ের ‘জয়ন্তী কর্নার’ ও ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ উদ্বোধনের জন্য স্কুলে আসার আগেরদিন স্কুল মাঠ ছিল কাদায় ভরা। কিন্তু প্রশাসনের এক রাতের জাদুতে তৈরি হয় সড়কটি, যাতে ডিসির গাড়ি সরাসরি মঞ্চের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সড়ক তৈরিতে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর এই পুরো ঘটনা ঘিরে পুরো বাঁশখালীজুড়ে প্রশ্ন, প্রশাসনের হাতে এখন ‘আলাদীনের চেরাগ’ কীভাবে এল?

স্থানীয়রা বলছেন, এই দেশে অনেক সময় রাস্তার জন্য শুধু সাধারণ মানুষ নয়, জনপ্রতিনিধিদেরও পায়ের জুতো খসে যায়। আর সেখানে ডিসিকে যেন কাদামাটি মাড়াতে না হয় সেজন্য রাতারাতি হয়ে গেল একটি সড়ক। যদিও এটি অস্থায়ী সড়ক বলে মনে করছেন অনেকে।

তাদের আক্ষেপ, কাদামাটি, জলাবদ্ধ মাঠ পেরিয়েই হাজার খানেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন স্কুল ভবনে প্রবেশ করছিল। সেটা এতদিন কেন ইউএনওর নজরে আসেনি!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর কথা, ‘আমরা প্রতিদিন কাদামাটির মধ্য দিয়েই স্কুলে আসতাম। অনেক সময় জুতো ভিজে যেতো, সেই ভিজে জুতো নিয়েই সারাদিন ক্লাস করতাম। আমাদের কষ্ট কারো চোখে পড়েনি। আর ডিসি স্যারকে একদিনের কষ্ট থেকে রেহাই দিতে রাতারাতি রাস্তা বানানো হলো, সেটা দেখে অবাক হয়েছি।’

অন্য এক ছাত্রী বলেছে, ‘সারা বছর আমরা কাদার পথে হাঁটছি, কখনও কেউ দেখেনি। ডিসির জন্য একরাতে রাস্তা হলো, এটাই আমাদের জন্য এক ধরনের তামাশা মনে হয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোতোষ দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিসি মহোদয়ের গাড়ি যাতে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্যই মাঠে অস্থায়ী সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রশাসন করেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়। আমার স্কুলকে এ বিষয়ে জড়াবেন না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই সড়ক শুধু ডিসি মহোদয়ের জন্য নয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্যও করা হয়েছে।’

তবে ডিসির আগমন ঘিরেই কেন রাতারাতি সড়ক সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তিনি বলছেন, একটি প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

জেলা প্রশাসকের জন্য রাতারাতি লাখো টাকার অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ 

আপডেটের সময় : ০১:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

যদিও রাস্তার কাজের জন্য অনেক সময় অনেক তদবিরে কাজ হবনা। মানুষের পায়ের নীচে মাটি চলে যায়। আর সে জায়গায় এবার একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যাতে কাদামাটি না মাড়াতে হয়, রাতারাতি তৈরি করে দেওয়া হলো একটি সড়ক। ১৩ হাজার ইট, ২০ ট্রাকভর্তি বালু, আর ৩৩ জন শ্রমিকের ঘামে রাত পোহানোর আগেই হয়ে গেছে ২০০ ফুট লম্বা এই সড়ক।

বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমনই এক ‘আলাদীনের চেরাগ-সদৃশ’ ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বিদ্যালয়ের ‘জয়ন্তী কর্নার’ ও ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’ উদ্বোধনের জন্য স্কুলে আসার আগেরদিন স্কুল মাঠ ছিল কাদায় ভরা। কিন্তু প্রশাসনের এক রাতের জাদুতে তৈরি হয় সড়কটি, যাতে ডিসির গাড়ি সরাসরি মঞ্চের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সড়ক তৈরিতে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আর এই পুরো ঘটনা ঘিরে পুরো বাঁশখালীজুড়ে প্রশ্ন, প্রশাসনের হাতে এখন ‘আলাদীনের চেরাগ’ কীভাবে এল?

স্থানীয়রা বলছেন, এই দেশে অনেক সময় রাস্তার জন্য শুধু সাধারণ মানুষ নয়, জনপ্রতিনিধিদেরও পায়ের জুতো খসে যায়। আর সেখানে ডিসিকে যেন কাদামাটি মাড়াতে না হয় সেজন্য রাতারাতি হয়ে গেল একটি সড়ক। যদিও এটি অস্থায়ী সড়ক বলে মনে করছেন অনেকে।

তাদের আক্ষেপ, কাদামাটি, জলাবদ্ধ মাঠ পেরিয়েই হাজার খানেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন স্কুল ভবনে প্রবেশ করছিল। সেটা এতদিন কেন ইউএনওর নজরে আসেনি!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর কথা, ‘আমরা প্রতিদিন কাদামাটির মধ্য দিয়েই স্কুলে আসতাম। অনেক সময় জুতো ভিজে যেতো, সেই ভিজে জুতো নিয়েই সারাদিন ক্লাস করতাম। আমাদের কষ্ট কারো চোখে পড়েনি। আর ডিসি স্যারকে একদিনের কষ্ট থেকে রেহাই দিতে রাতারাতি রাস্তা বানানো হলো, সেটা দেখে অবাক হয়েছি।’

অন্য এক ছাত্রী বলেছে, ‘সারা বছর আমরা কাদার পথে হাঁটছি, কখনও কেউ দেখেনি। ডিসির জন্য একরাতে রাস্তা হলো, এটাই আমাদের জন্য এক ধরনের তামাশা মনে হয়।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোতোষ দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিসি মহোদয়ের গাড়ি যাতে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্যই মাঠে অস্থায়ী সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রশাসন করেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নয়। আমার স্কুলকে এ বিষয়ে জড়াবেন না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই সড়ক শুধু ডিসি মহোদয়ের জন্য নয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্যও করা হয়েছে।’

তবে ডিসির আগমন ঘিরেই কেন রাতারাতি সড়ক সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তিনি বলছেন, একটি প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

 

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন