Dhaka ১১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুনে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা এবং অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বেড়েছে !

চলতি জুনে দেশে ধর্ষণ ও গণপিটুনিতে হত্যা এবং অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বেড়েছে। কমেনি দলবদ্ধ ধর্ষণসহ নারীর প্রতি নির্যাতনও। বেড়েছে শারীরিক নির্যাতন, নিগ্রহ। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যাও কমেনি।

সোমবার মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) দেওয়া জুন মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। দেশের শীর্ষ ২০টির বেশি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমএসএফ।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী এ মাসে ৩৬৩টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা গত মাসের তুলনায় ৫টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৬৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী। গত মে মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৫৯টি।

চলতি মাসে ধর্ষণের শিকার ৬৩ জনের মধ্যে ১৯ শিশু ও ২৩ কিশোরী রয়েছে। অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ শিশু, ৭ জন কিশোরী ও ৮ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১ জন কিশোরী ও ৩ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৭টি, যৌন হয়রানি ৩৯টি, শারীরিক নির্যাতনের ৫১টি ঘটনা ঘটেছে।

এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুন মাসে অন্তত ৪১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ২ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ৩ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জনকে খুনের অভিযোগে, ২ জনকে চুরির অভিযোগে এবং আরও দুজনকে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের অভিযোগে হত্যা করা হয়। অপরদিকে হত্যার অভিযোগে ১ জন, ৫ জনকে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ৩ জনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৭ জনকে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হওয়ার অভিযোগে, ৪ জনকে ডাকাতির অভিযোগে এবং চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত বিষয়ে সন্দেহজনককেভাবে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী শাহদীন মালিক বলেন, দেশে মব সৃষ্টি করে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এতে মানুষও হত্যা করা হচ্ছে। এসব ঘটনা আসলে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ফল। সরকারের ভেতরে নানা মতের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মতের পার্থক্যের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

গত মে মাসে গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছিল বলে এমএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তুলনা এ মাসে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘মব সৃষ্টির পেছনে আসলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে আমাদের মনে হয়। মব সৃষ্টি করা বেআইনি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু এই বিষয় থেকে নিবৃত্ত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয় না। প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী কেউ কিছু বলেন না এ বিষয়ে। বরং সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবকে আমরা বলতে শুনি যে এগুলো মব নয় প্রেশার গ্রুপ। এভাবে তো অন্যায়কে উসকে দেওয়া হয়।’
এমএসএফ মনে করে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, বরং পরিচয় জানার বিষয়টি জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, এসব অপরাধীর চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

এমএসএফ বলছে, জুন মাসে ৪৯টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এমএসএফ বলছে, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। অল্পসংখ্যক ঘটনা ছাড়া সব কটি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। মে মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫৫ জন। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলা কাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভীতিকর বলেই মনে করেন শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটতে পারে যে হয়তো হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সম্পর্কে থানাগুলো তথ্য নিচ্ছে না বা আত্মীয়স্বজনেরা তথ্য দিতেও পারছে না। তবে এভাবে লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই তুলে ধরে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
ট্যাগ:
লেখক তথ্য সম্পর্কে

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সীতাকুণ্ডে মারা গেলেন শিক্ষক

জুনে ধর্ষণ-গণপিটুনিতে হত্যা এবং অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বেড়েছে !

আপডেটের সময় : ০৩:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

চলতি জুনে দেশে ধর্ষণ ও গণপিটুনিতে হত্যা এবং অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বেড়েছে। কমেনি দলবদ্ধ ধর্ষণসহ নারীর প্রতি নির্যাতনও। বেড়েছে শারীরিক নির্যাতন, নিগ্রহ। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যাও কমেনি।

সোমবার মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) দেওয়া জুন মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। দেশের শীর্ষ ২০টির বেশি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করেছে এমএসএফ।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী এ মাসে ৩৬৩টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা গত মাসের তুলনায় ৫টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৬৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী। গত মে মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৫৯টি।

চলতি মাসে ধর্ষণের শিকার ৬৩ জনের মধ্যে ১৯ শিশু ও ২৩ কিশোরী রয়েছে। অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ শিশু, ৭ জন কিশোরী ও ৮ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১ জন কিশোরী ও ৩ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৭টি, যৌন হয়রানি ৩৯টি, শারীরিক নির্যাতনের ৫১টি ঘটনা ঘটেছে।

এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুন মাসে অন্তত ৪১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছে। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ২ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ৩ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জনকে খুনের অভিযোগে, ২ জনকে চুরির অভিযোগে এবং আরও দুজনকে শিশু নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের অভিযোগে হত্যা করা হয়। অপরদিকে হত্যার অভিযোগে ১ জন, ৫ জনকে ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ৩ জনকে যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৭ জনকে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হওয়ার অভিযোগে, ৪ জনকে ডাকাতির অভিযোগে এবং চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত বিষয়ে সন্দেহজনককেভাবে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী শাহদীন মালিক বলেন, দেশে মব সৃষ্টি করে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এতে মানুষও হত্যা করা হচ্ছে। এসব ঘটনা আসলে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ফল। সরকারের ভেতরে নানা মতের মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মতের পার্থক্যের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

গত মে মাসে গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছিল বলে এমএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তুলনা এ মাসে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘মব সৃষ্টির পেছনে আসলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে আমাদের মনে হয়। মব সৃষ্টি করা বেআইনি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু এই বিষয় থেকে নিবৃত্ত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয় না। প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী কেউ কিছু বলেন না এ বিষয়ে। বরং সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবকে আমরা বলতে শুনি যে এগুলো মব নয় প্রেশার গ্রুপ। এভাবে তো অন্যায়কে উসকে দেওয়া হয়।’
এমএসএফ মনে করে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, বরং পরিচয় জানার বিষয়টি জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, এসব অপরাধীর চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

এমএসএফ বলছে, জুন মাসে ৪৯টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এমএসএফ বলছে, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। অল্পসংখ্যক ঘটনা ছাড়া সব কটি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। মে মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫৫ জন। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলা কাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভীতিকর বলেই মনে করেন শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটতে পারে যে হয়তো হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সম্পর্কে থানাগুলো তথ্য নিচ্ছে না বা আত্মীয়স্বজনেরা তথ্য দিতেও পারছে না। তবে এভাবে লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই তুলে ধরে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন