Dhaka ০২:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে ঘুষ দিয়ে নিতে হয় ডাক্তারের সিরিয়াল!

চট্টগ্রামে ঘুষ দিয়ে নিতে হয় ডাক্তারের সিরিয়াল!

চট্টগ্রামে খ্যাতিমান অনেক ডাক্তার আছেন যাদের সিরিয়াল পাওয়াই যেন অর্ধেক রোগমুক্তি। কিন্তু এসব ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া এখন খুবই দুষ্কর। রোগমুক্তি তো দূরের কথা সিরিয়াল নিতে ক্ষয় হয় গায়ের অর্ধেক শক্তি। খোয়াতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এমন অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। তাদের অভিযোগ, খ্যাতিমান এসব ডাক্তার ঘিরে রয়েছে বড় ধরনের দালাল চক্র। যার প্রধান সহযোগী ওইসব ডাক্তারদের অ্যাটেনডেন্ট বা সহকারীরা। যারা ডাক্তারের ফিসের চেয়েও অধিক পরিমাণে টাকা আদায় করে সিরিয়াল দেন।

এসব ডাক্তাররা বেশির ভাগ চেম্বার করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত সিএসসিআর হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল, জিইসির মোড়ে অবস্থিত মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, বেলভিউ হাসপাতাল, পাঁচলাইশ মোড়ে অবস্থিত পার্কভিউ হাসপাতাল, চমেক হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ইপিক হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে।

শনিবার ন্যাশনাল হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম বকসের সিরিয়াল নিতে আসেন আবদুস সবুর খান। তিনি বলেন, লিভারজনিত সমস্যার জন্য চট্টগ্রামে শামীম বকসের খ্যাতি রয়েছে। তাই ওই ডাক্তারের সিরিয়াল নিতে গত মঙ্গলবার হাসপাতালে এলে তার সহকারী বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭-৮টার মধ্যে ফোন দিয়ে সিরিয়াল নিতে। কিন্তু ৭-৮টার মধ্যে ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। ৯টার দিকে ফোন রিসিভ করলেও বলেন ৮টার পর সিরিয়াল নেওয়া হয়। না। পরদিন বুধবার আবার ফোন দিয়ে সিরিয়াল নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিনও একই অবস্থা। নিরুপায় হয়ে শনিবারও ফোন করেছি কিন্তু ফোন রিসিভ হয়নি। অবশেষে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল এসে সহকারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি হাসপাতালের নিচতলায় সোহেল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু দেখা করার পর সোহেল বলেন, সিরিয়াল নিতে ১৫০০ টাকা লাগবে। শেষ পর্যন্ত ১৫০০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিই। বিকালে এসে চিকিৎসক শামীম বকসের পরামর্শ গ্রহণ করি। সেখানে ফি নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। আবদুস সবুর খান বলেন, মঙ্গলবার থেকে সিরিয়াল নিতে গিয়ে আমি অর্ধেক কাহিল হয়ে পড়ি। এমনকি লিভারজনিত সমস্যায় আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার বিকালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায়ই রোগী এভাবে ডাক্তারের সহকারী বা দালালকে টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

একইভাবে সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ হাছান চৌধুরীর অ্যাটেনডেন্টের বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার নালিশ ওঠে। শনিবার বিকালে নাজমা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, ডাক্তারের ফি এক হাজার টাকা, সিরিয়ালের জন্য সহকারীকে ঘুষ দিতে হয় এক হাজার টাকা। এরপরও বিকাল থেকে এসে বসে আছি। অথচ ডাক্তার আসবেন নাকি সন্ধ্যায়। সেখানে আরিফ নামে অন্য এক ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সিএসসিআরে কিছু ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। টাকা ছাড়া তাদের সিরিয়াল মিলে না। ফোন নাম্বার একটা দিয়ে রাখে যেখানে হাজার বার ফোন দিলে কেউ রিসিভ করে না। ডাক্তারের সিরিয়াল জোগাড় করতে করতে রোগী অর্ধেক মরে যায়। এই অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত, রোগীদের পরিবার অনেক উপকৃত হতো।
শামীমা ইসলাম নামে একজন বলেন, স্কিনের ডাক্তার জিনাত মেরাজ চৌধুরী স্বপ্নার সিরিয়াল নিতেও টাকা দিতে হয়েছে। ডক্টরের চেয়ে কম্পাউন্ডার গরম। সাবিহা ফাহমিদা বিনার অভিযোগ, বাসনা মুহুরির সিরিয়াল নিতে ৩০০ টাকা লাগে, জরুরি হলে ৫০০ টাকা। জানা গেছে, ডা. এমএ হাছান চৌধুরী প্রতিদিন চেম্বারে ৩০ জন রোগী দেখেন নতুন ও পুরনো মিলে। কিন্তু এর বাইরে আরও প্রচুর রোগী সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। অপেক্ষায় থাকলেও অনেকেরই শেষ পর্যন্ত তাকে দেখানোর সুযোগ হয় না।

অনেকের অভিযোগ, তাকে পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অন কলে ডেকে পাঠাতে হয়, তবেই তিনি রোগী দেখতে আসেন। রোগীদের অনেকেরই ক্ষোভ তার সিরিয়াল পাওয়া সোনার হরিণ হলেও অন কলে কীভাবে তাকে সহজেই পাওয়া যায়?

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. এমএ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘আমি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখি। এর আগের সময়গুলোতে আমার বিভিন্ন জায়গায় ক্লাস নিতে হয়। এর ফাঁকে আমি অন কলে রোগী দেখতে যাই। কিন্তু রোগীরা আমার সিরিয়াল না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আমাকে দেখাবে এটা রোগীদের বিষয়। সেখানে আমি কী বলতে পারি?

অন্যদিকে নিজের চেম্বারে ডা. শামীম বকসের রোগী দেখার কথা ২০ জন। তবে সিরিয়াল থাকে ৩০ জনের মতো। বাকি আরও ১০ জন রেফারেল হয়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখে থাকেন তিনি।

রোগীদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, শামীম বকসের সিরিয়াল পাওয়া সোনার হরিণ। তবে রোগীদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ শামীম বকস। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক দেখাতে চাইলে ৮-৯ মাস আগে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খুঁজি। আর এ জন্যই গুরুতর রোগী সিরিয়াল পায় না। এ জন্য তিনি রেফারেল সিস্টেমটা কার্যকর না হওয়ার কারণটাকেই দায়ী করেন।’ তার সিরিয়াল নিয়ে রোগীদের হয়রানি এবং এ নিয়ে একটি অসাধু চক্রের বাণিজ্য নিয়ে জানতে চাইলে শামীম বকস বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমার কানেও এসেছে। কিন্তু রোগীরাও আমাকে অভিযোগ দেয় না। এ রকম হয়রানি হলে আমাকে চেম্বারে এসে রোগীরা জানাতে পারবে।’ অভিযোগের বিষয়ে ডা. শামীম বকসের অ্যাটেনডেন্ট বাবলুকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সিরিয়াল দেওয়ার অভিযোগ বানোয়াট। স্যারের সুনাম ক্ষুণ্ণ ও আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটা চক্র এটি করছে।’

এ সমস্যা শুধু শামীম বকস বা ডা. এমএ হাছান চৌধুরীসহ কয়েকজনের চেম্বারে নয়, সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন ও লিভার বিশেষজ্ঞ আবদুল কাদের, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ইফতেখারুল আলম, ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক নূর মোস্তফা মহসিন, পার্কভিউ হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রফিক উদ্দিন, একুশে হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ শাহানা আক্তারসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সিরিয়াল ও সেবা পেতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

রোগী ও স্বজনদের ভাষ্য, এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঘিরে প্রতিটি হাসপাতালে ডাক্তারদের অ্যাটেনডেন্ট বা সহকারীদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট রয়েছে। ঘুষ নেওয়া বা হয়রানির বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করলে অ্যাটেনডেন্টরা একযোগ হয়ে রোগী ও স্বজনদের ওপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিৎিসকদের সেবা পাওয়া রোগীদের অধিকার। তাদের এই অধিকার চিকিৎসকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সহকারী অনিয়ম করলে বা রোগী ও স্বজনদের হয়রানি করলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও চিকিৎসকদের দায়িত্ব। বিষয়টি নিরসনে অবশ্যই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

চট্টগ্রামে ঘুষ দিয়ে নিতে হয় ডাক্তারের সিরিয়াল!

আপডেটের সময় : ০৫:১৫:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

চট্টগ্রামে খ্যাতিমান অনেক ডাক্তার আছেন যাদের সিরিয়াল পাওয়াই যেন অর্ধেক রোগমুক্তি। কিন্তু এসব ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া এখন খুবই দুষ্কর। রোগমুক্তি তো দূরের কথা সিরিয়াল নিতে ক্ষয় হয় গায়ের অর্ধেক শক্তি। খোয়াতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এমন অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। তাদের অভিযোগ, খ্যাতিমান এসব ডাক্তার ঘিরে রয়েছে বড় ধরনের দালাল চক্র। যার প্রধান সহযোগী ওইসব ডাক্তারদের অ্যাটেনডেন্ট বা সহকারীরা। যারা ডাক্তারের ফিসের চেয়েও অধিক পরিমাণে টাকা আদায় করে সিরিয়াল দেন।

এসব ডাক্তাররা বেশির ভাগ চেম্বার করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত সিএসসিআর হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল, জিইসির মোড়ে অবস্থিত মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, বেলভিউ হাসপাতাল, পাঁচলাইশ মোড়ে অবস্থিত পার্কভিউ হাসপাতাল, চমেক হাসপাতালের সামনে অবস্থিত ইপিক হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে।

শনিবার ন্যাশনাল হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম বকসের সিরিয়াল নিতে আসেন আবদুস সবুর খান। তিনি বলেন, লিভারজনিত সমস্যার জন্য চট্টগ্রামে শামীম বকসের খ্যাতি রয়েছে। তাই ওই ডাক্তারের সিরিয়াল নিতে গত মঙ্গলবার হাসপাতালে এলে তার সহকারী বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭-৮টার মধ্যে ফোন দিয়ে সিরিয়াল নিতে। কিন্তু ৭-৮টার মধ্যে ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। ৯টার দিকে ফোন রিসিভ করলেও বলেন ৮টার পর সিরিয়াল নেওয়া হয়। না। পরদিন বুধবার আবার ফোন দিয়ে সিরিয়াল নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিনও একই অবস্থা। নিরুপায় হয়ে শনিবারও ফোন করেছি কিন্তু ফোন রিসিভ হয়নি। অবশেষে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল এসে সহকারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি হাসপাতালের নিচতলায় সোহেল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু দেখা করার পর সোহেল বলেন, সিরিয়াল নিতে ১৫০০ টাকা লাগবে। শেষ পর্যন্ত ১৫০০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিই। বিকালে এসে চিকিৎসক শামীম বকসের পরামর্শ গ্রহণ করি। সেখানে ফি নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। আবদুস সবুর খান বলেন, মঙ্গলবার থেকে সিরিয়াল নিতে গিয়ে আমি অর্ধেক কাহিল হয়ে পড়ি। এমনকি লিভারজনিত সমস্যায় আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার বিকালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায়ই রোগী এভাবে ডাক্তারের সহকারী বা দালালকে টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

একইভাবে সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ হাছান চৌধুরীর অ্যাটেনডেন্টের বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার নালিশ ওঠে। শনিবার বিকালে নাজমা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, ডাক্তারের ফি এক হাজার টাকা, সিরিয়ালের জন্য সহকারীকে ঘুষ দিতে হয় এক হাজার টাকা। এরপরও বিকাল থেকে এসে বসে আছি। অথচ ডাক্তার আসবেন নাকি সন্ধ্যায়। সেখানে আরিফ নামে অন্য এক ব্যক্তি নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, সিএসসিআরে কিছু ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। টাকা ছাড়া তাদের সিরিয়াল মিলে না। ফোন নাম্বার একটা দিয়ে রাখে যেখানে হাজার বার ফোন দিলে কেউ রিসিভ করে না। ডাক্তারের সিরিয়াল জোগাড় করতে করতে রোগী অর্ধেক মরে যায়। এই অনিয়মগুলোর বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত, রোগীদের পরিবার অনেক উপকৃত হতো।
শামীমা ইসলাম নামে একজন বলেন, স্কিনের ডাক্তার জিনাত মেরাজ চৌধুরী স্বপ্নার সিরিয়াল নিতেও টাকা দিতে হয়েছে। ডক্টরের চেয়ে কম্পাউন্ডার গরম। সাবিহা ফাহমিদা বিনার অভিযোগ, বাসনা মুহুরির সিরিয়াল নিতে ৩০০ টাকা লাগে, জরুরি হলে ৫০০ টাকা। জানা গেছে, ডা. এমএ হাছান চৌধুরী প্রতিদিন চেম্বারে ৩০ জন রোগী দেখেন নতুন ও পুরনো মিলে। কিন্তু এর বাইরে আরও প্রচুর রোগী সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। অপেক্ষায় থাকলেও অনেকেরই শেষ পর্যন্ত তাকে দেখানোর সুযোগ হয় না।

অনেকের অভিযোগ, তাকে পেতে হলে প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অন কলে ডেকে পাঠাতে হয়, তবেই তিনি রোগী দেখতে আসেন। রোগীদের অনেকেরই ক্ষোভ তার সিরিয়াল পাওয়া সোনার হরিণ হলেও অন কলে কীভাবে তাকে সহজেই পাওয়া যায়?

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. এমএ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘আমি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখি। এর আগের সময়গুলোতে আমার বিভিন্ন জায়গায় ক্লাস নিতে হয়। এর ফাঁকে আমি অন কলে রোগী দেখতে যাই। কিন্তু রোগীরা আমার সিরিয়াল না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আমাকে দেখাবে এটা রোগীদের বিষয়। সেখানে আমি কী বলতে পারি?

অন্যদিকে নিজের চেম্বারে ডা. শামীম বকসের রোগী দেখার কথা ২০ জন। তবে সিরিয়াল থাকে ৩০ জনের মতো। বাকি আরও ১০ জন রেফারেল হয়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগী দেখে থাকেন তিনি।

রোগীদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, শামীম বকসের সিরিয়াল পাওয়া সোনার হরিণ। তবে রোগীদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ শামীম বকস। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক দেখাতে চাইলে ৮-৯ মাস আগে সিরিয়াল পাওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের দেশে সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খুঁজি। আর এ জন্যই গুরুতর রোগী সিরিয়াল পায় না। এ জন্য তিনি রেফারেল সিস্টেমটা কার্যকর না হওয়ার কারণটাকেই দায়ী করেন।’ তার সিরিয়াল নিয়ে রোগীদের হয়রানি এবং এ নিয়ে একটি অসাধু চক্রের বাণিজ্য নিয়ে জানতে চাইলে শামীম বকস বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমার কানেও এসেছে। কিন্তু রোগীরাও আমাকে অভিযোগ দেয় না। এ রকম হয়রানি হলে আমাকে চেম্বারে এসে রোগীরা জানাতে পারবে।’ অভিযোগের বিষয়ে ডা. শামীম বকসের অ্যাটেনডেন্ট বাবলুকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সিরিয়াল দেওয়ার অভিযোগ বানোয়াট। স্যারের সুনাম ক্ষুণ্ণ ও আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটা চক্র এটি করছে।’

এ সমস্যা শুধু শামীম বকস বা ডা. এমএ হাছান চৌধুরীসহ কয়েকজনের চেম্বারে নয়, সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিসিন ও লিভার বিশেষজ্ঞ আবদুল কাদের, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ইফতেখারুল আলম, ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক নূর মোস্তফা মহসিন, পার্কভিউ হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রফিক উদ্দিন, একুশে হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ শাহানা আক্তারসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সিরিয়াল ও সেবা পেতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

রোগী ও স্বজনদের ভাষ্য, এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঘিরে প্রতিটি হাসপাতালে ডাক্তারদের অ্যাটেনডেন্ট বা সহকারীদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট রয়েছে। ঘুষ নেওয়া বা হয়রানির বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করলে অ্যাটেনডেন্টরা একযোগ হয়ে রোগী ও স্বজনদের ওপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিৎিসকদের সেবা পাওয়া রোগীদের অধিকার। তাদের এই অধিকার চিকিৎসকদেরই নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সহকারী অনিয়ম করলে বা রোগী ও স্বজনদের হয়রানি করলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও চিকিৎসকদের দায়িত্ব। বিষয়টি নিরসনে অবশ্যই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন