সীতাকুণ্ডের যে সকল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গ্রিন সনদ নিতে পারেনি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন।
শনিবার ( ২৬ জুলাই ) দুপুরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর সাগর উপকূলে অবস্থিত কবির স্টিল শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, হংকং কনভেনশন অনুসরণ করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইতিমধ্যে ১৬টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং সনদপত্রও পেয়েছে তারা। তবে বেশিরভাগ ইয়ার্ড এখনও নিয়মনীতি অনুসরণ করতে পারেনি। বিষয়টি আরো সহজ করতে সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলেও ইয়ার্ড ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা। এছাড়া গ্রিণ সনদ নেয়ার সময়সীমা আরও বাড়ানো যায় কিনা, তাও নিয়েও সরকার চেষ্টা করবে বলে জানান তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিপব্রেকিং ইয়ার্ড যেভাবে চলে এসেছে, সেখান থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। তবে দেখতে হবে কতগুলো কারখানা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিকে থাকার মতো রয়েছে। কারখানায় কী কী সমস্যা রয়েছে, সেটি নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কারখানার খাতের সঙ্গে জড়িত শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করব।
উপদেষ্টা বলেন, যখন সীতাকুণ্ডের মতো ছোট্ট একটি জায়গায় ১১৩টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড হয়, তখন বিপদসংকুল হয়। এসব জাহাজভাঙা কারখানার কোনো জায়গায় স্থানান্তর করা যায় কি না, দেখতে হবে। ছোট ও মাঝারি সাইজের জাহাজ এসব কারখানায় আনা গেলেও বড় জাহাজ এখানে আনা যাবে না। এত দিন বিষয়টাতে নজর দেওয়া হয়নি। এখন নজর দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে।
জাহাজ আমদানিতে অতিরিক্ত ভ্যাট লাগবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। নভেম্বরে এনবিআরের সঙ্গে একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানে শিপব্রেকিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করব। তারা সেখানে তাঁদের প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। আমার যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাবিব আবদুল্লাহ, সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান, শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাজমুল, কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ করিম উদ্দিন প্রমুখ।
কারখানা পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাজমুল বলেন, ‘কারখানাকে আবার লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে এখন আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হয়। ব্যাংক থেকে সহজ ঋণ পেতে অসুবিধা হচ্ছে। ফলে দুই–তৃতীয়াংশ জাহাজভাঙা কারখানা গ্রিন করা যাচ্ছে না। পরিবেশের ছাড়পত্র পেতেই দুই মাসের মতো সময় লাগছে। অথচ একটি জাহাজ কাটার আগেই বিশাল অঙ্কের সুদ গুনতে হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তারা গ্রিন শিপইয়ার্ড শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে জানান তিনি ।
এর আগে সকালে তিনি শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেন। এ সময় এ খাতের নানা সমস্যার কথা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।