Dhaka ০৯:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার উত্থান এবং রাজনৈতিক সফলতা !

গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার উত্থান, কর্মী থেকে দলের চেয়ারপারসন এবং রাজনৈতিক সফলতা !

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে খালেদা জিয়ার, রাজনীতির ইতিহাসে সেটাকে বিরল ঘটনাই বলা যায়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এ ছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।

১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন খালেদা জিয়া। পরে তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দটি লেখা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।

স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়াউর রহমান হত্যার শিকার হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা ৪৩ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন।

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।

নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন।

সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন।

কর্মী থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রবেশ হঠাৎ করেই। বিএনপির বিপদের সময় এক রকম বাধ্য হয়েই যোগ দেন দলে। তবে একেবারে দলের চেয়ারপারসন হয়ে না, যোগ দেন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে।

১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, খালেদা জিয়া তখন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। সেসময় রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানেও খুব একটা দেখা যেত না তাকে।

স্বামীকে হারিয়ে অল্প বয়সেই বিধবা হন তিনি। জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন খালেদা জিয়া। সে সময় দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাত্তারের বয়স তখন আনুমানিক ৭৮ বছর। তখনকার রাজনীতিতে সাত্তারকে একজন বৃদ্ধ এবং দুর্বল চিত্তের ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন আন্দোলন। আপসহীন আন্দোলনের ফলে ত্বরান্বিত হয় এরশাদের পতন।

১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় সাত-দলীয় ঐক্যজোট। একই বছর সেপ্টেম্বরে জোটের মাধ্যমে নামেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে পাঁচ দফায় আন্দোলন। ওই বছর ২১ মার্চ রাতে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দল ভেঙে আট দল ও পাঁচ দল হয়ে যায়। সেসময় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৮ দল।

অন্যদিকে, ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া শুরু করেন ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন। টানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।

১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার ও ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে। স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলোতে বন্দিজীবন কাটানো দুই সন্তানের মা খালেদা জিয়া দেশের সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যত সফলতা

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল ৪৩ বছরের। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাজও করেছেন। এসব পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় মাথায় আসবে। সদ্য সাবেক হওয়া বিএনপির এই চেয়ারপারসনের সফলতা কতটুকু…

সবারই জানা যে, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিজীবন রাজনীতি দিয়ে শুরু নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বিয়ের পরও তিনি ছিলেন শুধু গৃহবধূ। ১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, এরপর থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ এই নেত্রীর।

দল টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার পরামর্শ এবং অনুরোধে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমদ। তার মতে, সেই সময় থেকেই খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন বিএনপির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতার বলয়ের ভেতরে থেকে দল তৈরি করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সে দলকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেন।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে কয়েকবার আটক করা হলেও আন্দোলন থেকে সরে যাননি তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন দুইবার।

প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন দেশ পরিচালনায় তিনি ছিলেন একেবারেই অনভিজ্ঞ। এমনকি সংসদেও তিনি ছিলেন নতুন। কিন্তু জীবনের প্রথম নির্বাচনেই খালেদা জিয়া পাঁচটি আসন থেকে লড়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন। তার রাজনৈতিক জীবনে যত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার কোনোটিতেই পরাজিত হননি তিনি।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল এবং নির্বাচনের পর জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অনেকের ধারণা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও দলের ভেতরে নানা টানাপড়েন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনি নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তিনি মনে করেন, গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার অবিচল আস্থা ছিল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তার ক্যারিশমা ছিল।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সীতাকুণ্ডে মারা গেলেন শিক্ষক

গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার উত্থান এবং রাজনৈতিক সফলতা !

আপডেটের সময় : ০৬:৫৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে খালেদা জিয়ার, রাজনীতির ইতিহাসে সেটাকে বিরল ঘটনাই বলা যায়। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এ ছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।

১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন খালেদা জিয়া। পরে তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দটি লেখা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।

স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়াউর রহমান হত্যার শিকার হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা ৪৩ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন।

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ‘এরশাদ হটাও’ আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।

নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন।

সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন।

কর্মী থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রবেশ হঠাৎ করেই। বিএনপির বিপদের সময় এক রকম বাধ্য হয়েই যোগ দেন দলে। তবে একেবারে দলের চেয়ারপারসন হয়ে না, যোগ দেন একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে।

১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, খালেদা জিয়া তখন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। সেসময় রাজনীতি নিয়ে চিন্তাধারা তো দূরের কথা, রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠানেও খুব একটা দেখা যেত না তাকে।

স্বামীকে হারিয়ে অল্প বয়সেই বিধবা হন তিনি। জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন খালেদা জিয়া। সে সময় দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাত্তারের বয়স তখন আনুমানিক ৭৮ বছর। তখনকার রাজনীতিতে সাত্তারকে একজন বৃদ্ধ এবং দুর্বল চিত্তের ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন আন্দোলন। আপসহীন আন্দোলনের ফলে ত্বরান্বিত হয় এরশাদের পতন।

১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় সাত-দলীয় ঐক্যজোট। একই বছর সেপ্টেম্বরে জোটের মাধ্যমে নামেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে পাঁচ দফায় আন্দোলন। ওই বছর ২১ মার্চ রাতে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫ দল ভেঙে আট দল ও পাঁচ দল হয়ে যায়। সেসময় নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৮ দল।

অন্যদিকে, ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া শুরু করেন ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন। টানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।

১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার ও ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে। স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলোতে বন্দিজীবন কাটানো দুই সন্তানের মা খালেদা জিয়া দেশের সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যত সফলতা

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল ৪৩ বছরের। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাজও করেছেন। এসব পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় মাথায় আসবে। সদ্য সাবেক হওয়া বিএনপির এই চেয়ারপারসনের সফলতা কতটুকু…

সবারই জানা যে, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিজীবন রাজনীতি দিয়ে শুরু নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বিয়ের পরও তিনি ছিলেন শুধু গৃহবধূ। ১৯৮১ সালের মে মাসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, এরপর থেকেই রাজনীতিতে প্রবেশ এই নেত্রীর।

দল টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার পরামর্শ এবং অনুরোধে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন মহিউদ্দিন আহমদ। তার মতে, সেই সময় থেকেই খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন বিএনপির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতার বলয়ের ভেতরে থেকে দল তৈরি করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সে দলকে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে নেন।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাকে কয়েকবার আটক করা হলেও আন্দোলন থেকে সরে যাননি তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন দুইবার।

প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন দেশ পরিচালনায় তিনি ছিলেন একেবারেই অনভিজ্ঞ। এমনকি সংসদেও তিনি ছিলেন নতুন। কিন্তু জীবনের প্রথম নির্বাচনেই খালেদা জিয়া পাঁচটি আসন থেকে লড়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন। তার রাজনৈতিক জীবনে যত নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার কোনোটিতেই পরাজিত হননি তিনি।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল এবং নির্বাচনের পর জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অনেকের ধারণা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও দলের ভেতরে নানা টানাপড়েন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

খালেদা জিয়ার জীবন কাহিনি নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তিনি মনে করেন, গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার অবিচল আস্থা ছিল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তার ক্যারিশমা ছিল।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন