Dhaka ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার সুফল

  • নাঈম আহমাদ ।।
  • আপডেটের সময় : ০৬:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৬৩২ টাইম ভিউ

কোনো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে তাতে বরকত পাওয়া যায়, আল্লাহ খুশি হন এবং পরকালে পুণ্য সঞ্চিত হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)। বিসমিল্লাহ একটি শক্তিশালী আমল। এর মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবু মুলাইহ (রা.) একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, আমি একবার নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বলেন, ‘শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা এ কাজ করেছি; বরং এরূপ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। এতে সে অতিক্ষুদ্র হয়ে যায়, এমনকি মাছিসদৃশ হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৯৭৮২)

খাওয়া-দাওয়াসহ যেকোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে সেই কাজে শয়তানের অংশীদারত্ব থাকে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে’ (মুসলিম : ৫৩৭৬)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না’ (মুসলিম : ২০১৭)। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। নবীজি (সা.) বলেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। তখন জিবরাইল (আ.) বলেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা : ২৬৩)

বিসমিল্লাহর মর্যাদা রক্ষা সবার জন্য জরুরি। বিভিন্ন দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার প্রয়োজন শেষে পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, কিন্তু বর্তমানে বরকত লাভের আশায় সেগুলোতেই অনেকে বিসমিল্লাহ লিখে এর অমর্যাদা করছে। মনে রাখতে হবে, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ কুরআনের একটি মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। কুরআনের অন্য আয়াতের মতো এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। তাই এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি বাংলা কোনোভাবে লেখা উচিত নয় (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২৩)। চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা সুন্নত। কিন্তু অনেকেই বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখে থাকে। এটা জায়েজ নয়।

এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই পাওয়া যাবে না। এ রীতি পরিহার করা উচিত। কারও কারও ‘বিসমিহি তায়ালা’ লেখার অভ্যাস আছে। এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখার স্বতন্ত্র সুন্নত আদায় হবে না (আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/২৪)। মোটকথা লিফলেট, পোস্টার বা কোনো ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নিলে এর ফজিলত ও বরকত পাওয়া যাবে (শারহু মুসলিম নববী : ২/৯৮)। মহান আল্লাহর নাম উচ্চারণের অন্যতম একটি উপায় ‘বিসমিল্লাহ’ তথা ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ পাঠ করা। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার সুফল

আপডেটের সময় : ০৬:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কোনো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে তাতে বরকত পাওয়া যায়, আল্লাহ খুশি হন এবং পরকালে পুণ্য সঞ্চিত হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)। বিসমিল্লাহ একটি শক্তিশালী আমল। এর মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবু মুলাইহ (রা.) একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন, আমি একবার নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বলেন, ‘শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা এ কাজ করেছি; বরং এরূপ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। এতে সে অতিক্ষুদ্র হয়ে যায়, এমনকি মাছিসদৃশ হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৯৭৮২)

খাওয়া-দাওয়াসহ যেকোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হলে সেই কাজে শয়তানের অংশীদারত্ব থাকে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে’ (মুসলিম : ৫৩৭৬)। অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না’ (মুসলিম : ২০১৭)। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রথম ওহি নাজিলের সময়ও এ উত্তম বাক্য পড়ানো হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হচ্ছে হে মুহাম্মদ! আপনি আশ্রয় চান। নবীজি (সা.) বলেন, আমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। তখন জিবরাইল (আ.) বলেন, হে নবী! আপনি বলুন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা : ২৬৩)

বিসমিল্লাহর মর্যাদা রক্ষা সবার জন্য জরুরি। বিভিন্ন দাওয়াতনামা, পোস্টার ও ব্যানার, যা নির্ধারিত সময়ের পর কোনো প্রয়োজন হয় না, আবার প্রয়োজন শেষে পথে-ঘাটে ও নর্দমায় পড়ে থাকে, কিন্তু বর্তমানে বরকত লাভের আশায় সেগুলোতেই অনেকে বিসমিল্লাহ লিখে এর অমর্যাদা করছে। মনে রাখতে হবে, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ কুরআনের একটি মর্যাদাপূর্ণ আয়াত। কুরআনের অন্য আয়াতের মতো এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। তাই এসব ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি বাংলা কোনোভাবে লেখা উচিত নয় (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২৩)। চিঠিপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা সুন্নত। কিন্তু অনেকেই বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখে থাকে। এটা জায়েজ নয়।

এতে বিসমিল্লাহর বরকত ও ফজিলত কিছুই পাওয়া যাবে না। এ রীতি পরিহার করা উচিত। কারও কারও ‘বিসমিহি তায়ালা’ লেখার অভ্যাস আছে। এতে আল্লাহর নাম স্মরণ করার সওয়াব পাওয়া যাবে, তবে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখার স্বতন্ত্র সুন্নত আদায় হবে না (আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/২৪)। মোটকথা লিফলেট, পোস্টার বা কোনো ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে ‘বিসমিল্লাহ’ না লিখে বরং তা আরম্ভ করার সময় শুধু মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করে নিলে এর ফজিলত ও বরকত পাওয়া যাবে (শারহু মুসলিম নববী : ২/৯৮)। মহান আল্লাহর নাম উচ্চারণের অন্যতম একটি উপায় ‘বিসমিল্লাহ’ তথা ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ পাঠ করা। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন