আসল না এফবিসিসিআইয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সমাধান , কোন সুখবর দিতে পারলেন না বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ নিয়ে

আসল না এফবিসিসিআইয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সমাধান , কোন সুখবর দিতে পারলেন না বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারলেন না। তিনি বলেন, দেশে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ বেশি পরিমাণে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমবে না। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ সময় লেগে যেতে পারে।

রোববার এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যদিকে গতকালের এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও পেঁয়াজের দাম কমানো বা বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো সমাধান আসেনি। এফবিসিসিআই নেতারা, সরকারের দুই মন্ত্রী, তিন সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সরকারের আরও বেশ কিছু দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পেঁয়াজের চড়া মূল্যে যেখানে টানা দুই মাস দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন, সেখানে সবর নজর ছিল গতকালের এই বৈঠকের দিকে।

প্রত্যাশা ছিল, পেঁয়াজের আমদানিকারক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে হয়তো দাম কমানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসবে বাণিজ্যমন্ত্রী বা ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে। কিন্তু বাস্তবে এটি হয়নি। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তেমন কোনো সুখবর দিতে পারলেন না। বরং পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেই দায় সারলেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে এক লাফে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এটা তো ঠিক করেননি ব্যবসায়ীরা। কারণ বন্ধ ঘোষণার আগেই তো সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে কেনা ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল প্রচুর পরিমাণে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে দাম বাড়িয়ে নীতি-নৈতিকতাহীন কাজ করেছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে। এই পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি খরচ প্রতি কেজি ৩২ টাকা পড়বে। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা বিক্রি হবে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে সব মিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের ২৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ লাগে এর মধ্যে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় যার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আমাদের দেশের বাজারে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলামসহ বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১টায় শুরু হওয়া অভ্যন্তরীণ এই বৈঠক চলে প্রায় দুই ঘণ্টা জুড়ে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পেঁয়াজ, লবণ, তেল, চিনি ডাল-এসব নিত্যপণ্যে ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট হবে না। সরকার ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আগামীতে ভোগ্যপণ্যের বাজারে সুষম সরবরাহের মাধ্যমে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চত করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে দেশকে আর পেঁয়াজ সংকটের মতো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। পেঁয়াজ মজুদ করে যারা সংকট তৈরি করেছে সেসব মজুদধারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।

কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়িক সংগঠন অহেতুক কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা বছর বাজারের এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে একযোগে কাজ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক শেষে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বছর জুড়ে যে চাহিদা আছে, যে পরিমাণ উৎপাদন হয় এবং যারা আমদানি করেন তা কি পরিমাণ করেন, কেমন দামে করে থাকেন। বাজারে এর যৌক্তিক দাম কেমন হওয়া উচিত এসব বিষয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি-ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি না হয়, সে বিষয়ে আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও সতর্ক থাকব।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মানুষ মোটা চাল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। চালের পরিবর্তে এখন সরু চাল বেশি খাচ্ছে। এ কারণে সরু চালে বেশি চাপ পড়ায় দাম কিছুটা বাড়লেও এখন চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে পাইকারি বাজারে যে দাম তার তুলনায় খুচরা বাজারে কেজিতে ৭-৮ টাকা দামের পার্থক্য থাকার বিষয়ে তিনি ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে এ বিষয়ে কঠোর তদারকির পরামর্শ দেন।

পেঁয়াজের মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভ‚ঁইয়া বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বাংলাদেশি। কেউ সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ দেখছি না। আমরা তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সোজাসাপ্টা মেসেজ দিয়েছি। যদি কেউ পণ্যের মজুদদারি করে বাজারে পণ্যের অহেতুক চাপ সৃষ্টি করে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের আরও একটা মেসেজ দিয়েছি-বাজারে কোনো নিত্যপণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। পেঁয়াজ নিয়ে সংকট হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ বাজারে আছে। এ জন্য কাদের কাছে পেঁয়াজের মজুদ ছিল, তারা কখন আমদানি করেছে, কখন ও কত টাকায় বিক্রি করেছে তা এনবিআর খতিয়ে দেখছে। এসব পণ্যে কোনো ট্যাক্স বা শুল্ক নেই। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চালের ওপর শুল্ক আছে। কারণ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার সুরক্ষাতেই সেটা করা হয়েছে। তাই ভোক্তাদের জানাতে চাই লবণ তেল, চিনি, ডাল এ জাতীয় নিত্যপণ্যে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না।

আবার ২৫০ টাকা ছাড়াল পেঁয়াজের কেজি

অন্যদিকে আবারও পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়াল। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দুইশ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। এ ছাড়া অন্য দেশগুলোরও পেঁয়াজের দামও বেড়েছে কিছুটা। রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বাজারে এ চিত্র দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ২০০, চীনের পেঁয়াজ ১০৯, মিয়ানমারের ১৮৩ থেকে ১৮৮, ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭৭ ও বড় আকারের পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একই বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম আবারও ২৫০ টাকায় উঠেছে। বেশি দামে কিনে আনায় আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সুত্রঃ সময়ের আলো