সদস্যপদ এবং কাজের ‘জায়গা’ না থাকায় সন্দ্বীপ-কুমিরা চ্যানেলের সমুদ্র উপকূলে ড্রেজিং করতে আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্যালস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)। যদিও ‘শ্যামা ইন্টারন্যাশনাল শিপ ইয়ার্ড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ । তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিএসবিআরএ সরকারি কোনো সংস্থা নয়, তাদের আপত্তি নিয়ে ‘কি করার আছে’ তা তাদের জানা নেই।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন সমুদ্র ও নদী উপকূলে ড্রেজিং করার জন্য সংস্থাটির অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কুমিরা-সন্দ্বীপ চ্যানেলের সমুদ্র উপকূলে ড্রেজিংয়ের জন্য শ্যামা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ নভেম্বর কাজের অনুমতি দেয়। এ কার্যাদেশে ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৭ মে পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে শ্যামা ইন্টারন্যাশনাল শিপ ইয়ার্ডের সামনের অংশের সমুদ্র উপকূলে নাব্যতা বৃদ্ধি করবে ।
অন্যদিকে, ইয়ার্ড মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজ ইয়ার্ড ছাড়া অন্য কারো ইয়ার্ডে ড্রেজিং বা এ সংক্রান্ত কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। বিষয়টি জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্যালস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)। ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বরে পাঠানো সেই চিঠিতে সংগঠনটি লিখেছে, ‘বিএসবিআরএ’র মেম্বারশিপ তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র যাচাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে দেখা যায়, ‘শ্যামা ইন্টারন্যাশনাল’( ঠিকানা : ভুইয়া পাড়া এলএন মিলস, গোদনাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ) নামীয় কোনো প্রতিষ্ঠান বিএসবিআরএ-র সদস্য নয়।’
এ বিষয়ে কথা হলে বিএসবিআরএর সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘নিজের ইয়ার্ড ছাড়া অন্য কারো ইয়ার্ডে কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করবে না বলে আমাদের সমিতির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সংগঠনের সবগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কীভাবে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে তা আমরা জানি না। এছাড়া যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে, সেটি আমাদের শিপ ইয়ার্ড মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএরও সদস্য নয়। বিষয়টি আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ নিবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রোগ্রাফার (ড্রেজিং) মো. আল হাসনাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন বা নীতিমালা ভেঙে কাউকে কাজ দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কুমিরা-সন্দ্বীপ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ কেউ পেয়ে থাকে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী সেই কাজটা হয়েছে। শিপ ইয়ার্ডদের আপত্তির যে বিষয়টি আমার জানা নেই। আর বন্দর যে ধরনের সংস্থা, শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ীদের সমিতি সে ধরনের কোনো সংস্থা বা সরকারি দপ্তর না। এটা একটি বেসরকারি সংগঠন। তাদের আপত্তি থাকলেও কি করার আছে তা জানি না।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইডোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ বলেন, যে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, সেটি আমি এখনও জানি না। তাদের চিঠিটা পাইনি। তবু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটি সংশোধন করে নেওয়ারও সুযোগ থাকবে বলে জানান তিনি ।
প্রসঙ্গতঃ দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে এখানকার মানুষকে পাড়ি দিতে হয় ওই পথ। একমাত্র নৌ ঘাট কুমিরা গুপ্তছড়া ঘাট। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেই যেন স্তব্ধ হয়ে যায় দ্বীপের মানুষের জীবন। পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সন্দ্বীপ।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;