ইউপির চেয়ারম্যানদের রিট পিটিশনের রায় আগামী ৮ সপ্তাহের জন্য আদালত কর্তৃক স্থগিত করায় সীতাকুণ্ড উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম এক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও সচল হয়েছে
এবং তা গত ১০ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম আবারও শুরু হয়।
২৩ জুন হাইকোর্টের রিট পিটিশনের নির্দেশনা মোতাবেক সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালনের বৈধতা ফিরে পেলেও চেয়ারম্যানদের পরিষদে অনুপস্থিতির কারণে এক মাসেরও অধিক সময় প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে এসব ইউনিয়নে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
সাতটি ইউপি পরিষদের আওয়ামী লুটেরা চেয়ারম্যানগণ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসকের আদেশ আগামী ৬ (ছয়) মাসের জন্য স্থগিত করেন। হাইকোর্টের আদেশের পরও সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা পরিষদের ফিরে না আসায় এক মাসেরও অধিক সময় ধরে পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানদের রিট পিটিশনের রায় আদালত ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন।
উল্লেখ্য, বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর উপজেলার ৯টি ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১টি পৌরসভার মেয়র আত্মগোপনে চলে যায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রের আলোকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের আদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
উপজেলার সৈয়দপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী, বারৈয়াঢালা ইউপি চেয়ারম্যান রেহানউদ্দিন, মুরাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান কন্টাকটার গোফরান বাহার, বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদেকা তুল্যা নিয়াজী, কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ চৌধুরী, বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর, সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনির, ভাটিয়ারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন ও সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ ও পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যায়।
অভিযোগ উঠে, এসব আওয়ামী লুটেরা চেয়ারম্যানগণ বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে মামলা মোকদ্দমাসহ নানানভাবে এলাকাবাসীর ওপর নির্যাতন, জায়গা দখল ও চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে একতরফা ভোটের এসব জনপ্রতিনিধিরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম সাক্ষরিত এক আদেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ১৯ আগস্ট এক পরিপত্র মোতাবেক ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বারৈয়াঢালা, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর সহ ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে। রিট পিটিশনের রায় মোতাবেক এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের পরিষদের সকল কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা ফিরে পায়। কিন্তু আদালতের রায়ের পরও এক মাসেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এসব ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এত করে এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাইকোর্টের রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্ট সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের আদেশের কার্যকারিতা আগামী ৬ মাসের জন্য স্থগিত করার নির্দেশনা প্রদান করেন। সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এতে করে এলাকার জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ ২০টিরও বেশি মৌলিক সেবা বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ আকার ধারণ করে। চাকরি, ব্যবসা, জমি কেনা-বেচা, স্কুল-কলেজে ভর্তি সবকিছু থমকে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১০ আগস্ট থেকে সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উচ্চ আদালতের রিট পিটিশনের আদেশ আগামী আট মাসের জন্য আদালত স্থগিত করেছেন।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;