Dhaka ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ, এক কালো অধ্যায়

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতক চক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ ভূতুড়ে অন্ধকারে।

পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলাতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছে অনেকের। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে উন্মুখ মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল। স্থবির হয়ে গিয়েছিল সবকিছু।

হত্যার পূর্বে যে তাঁদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সে তথ্যও বের হয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের রচিত নিবন্ধ থেকে জানা যায় যে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এই বুদ্ধিজীবীরা মেধা, মনন ও লেখার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম যেন কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।

প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ওড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকা। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এদিন সর্বপ্রথম রাষ্ট্র প্রধান মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর সরকার প্রধান মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে বিশেষ নিবন্ধ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।

চট্টগ্রামে কর্মসূচি :

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আজ বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ বেতার–চট্টগ্রাম বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করবে এবং স্থানীয় দৈনিকগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং নগর ও জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে বিশেষ অনুদান বিতরণ করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।

বিএনপির মহানগর শাখা এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এদিন সকালে স্থানীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে এবং নগরীর নূর আহমদ সড়কস্থ দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটি, চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিভাসু, শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

তেলের ডিপোতে পড়ে সীতাকুণ্ডে একজনের মৃত্যু, দগ্ধ ৩

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ, এক কালো অধ্যায়

আপডেটের সময় : ০৬:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা ছিল নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ঘাতক চক্র কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সান্ধ্য আইনের মধ্যে সেই রাতে তালিকা ধরে ধরে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ ভূতুড়ে অন্ধকারে।

পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলাতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় অনেক নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছে অনেকের। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে উন্মুখ মানুষ স্বজন হারানোর সেই কালরাত্রির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছিল। স্থবির হয়ে গিয়েছিল সবকিছু।

হত্যার পূর্বে যে তাঁদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সে তথ্যও বের হয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের রচিত নিবন্ধ থেকে জানা যায় যে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এই বুদ্ধিজীবীরা মেধা, মনন ও লেখার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম যেন কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের।

১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।

প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শোকের আবহে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ওড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকা। দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এদিন সর্বপ্রথম রাষ্ট্র প্রধান মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর সরকার প্রধান মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে বিশেষ নিবন্ধ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।

চট্টগ্রামে কর্মসূচি :

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আজ বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ বেতার–চট্টগ্রাম বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করবে এবং স্থানীয় দৈনিকগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং নগর ও জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে বিশেষ অনুদান বিতরণ করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।

বিএনপির মহানগর শাখা এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এদিন সকালে স্থানীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে এবং নগরীর নূর আহমদ সড়কস্থ দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটি, চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিভাসু, শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন