Dhaka ১০:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি

আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি

বর্তমান অত্যাধুনিক যুগে জীবন চলার পথে যেকোনো কাজেই এগিয়ে যান না কেন, আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া প্রশ্নবিদ্ধসহ প্রতিবন্ধকতায় সম্মুখীন হবেন। আর আপনিই যে আপনি, তা কেবল আঙ্গুলের ছাপেই শনাক্তপূর্বক বলে দিবে। মজার ব্যাপার হলো যে আপনার আঙ্গুলের ছাপ শুধুই আপনার; সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি মানুষের ছাপের সঙ্গে কোনো মিল হবে না। শুধু তাই নয়, সৃষ্টির গোড়া থেকে শুরু করে যত মানুষ এই ধরায় এসেছেন এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত যত মানুষ আসবেন, কারও আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিল তথা এক হবে না। আঙ্গুলের এই ব্যতিক্রম ছাপের ব্যাপারে এখন বিজ্ঞানীরা জোর গলায় বললেও এ কথাটি ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা ক্বিয়ামাহ (মক্কায় অবতীর্ণ)-তে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যেভাবেই বলি না কেন, আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি।

এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলেছে জানেন? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান বলে যে গর্ভাবস্থায় যখন ভ্রূণের মাত্র ১০ সপ্তাহ বয়স, তখন তার আঙ্গুলের ছাপ গঠিত হয়। আর সেটা সারাজীবন একই থাকে; পরিবর্তন হয় না। কোনো দুই ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ কখনই এক হয় না। এমনকি জমজ ভাই-বোনদের ক্ষেত্রেও না। কিন্তু কেন? এর কারণ মায়ের গর্ভে প্রতিটি শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ একেবারেই আলাদা হয়; যা তাদের আঙ্গুলের ছাপের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া আপনার আঙ্গুলের ছাপে আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে? এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আঙ্গুলের ছাপ কেবল আপনাকে শনাক্ত করবে, তাই নয়। একইসঙ্গে আপনার জ্বিনগত দিক দিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য বহন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আঙ্গুলের ছাপ আঁকা-বাঁকা, তাদের বহুমূত্র ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই রকম আরও নানা রোগের চিহ্ন বহন করে থাকে, যা এখনো গবেষণার পর্যায়ে আছে।

এক সময় শুধু অপরাধীকে ধরতে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের পরিচয়ের জন্য; যেমন- আইডেন্টেটি কার্ড ও পাসপোর্ট বইসহ বায়োমেট্রিক্স তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে এই ছাপ ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে মোবাইল সিম কিনতে আঙ্গুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি, অনেক অফিসে ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। এই আঙ্গুলের ছাপের বিষয়টি আল্লাহর কুদরতের এক অকাট্য প্রমাণ বৈ কিছু নয়। পবিত্র কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই আল্লাহতায়ালা এই সৃষ্টির কথা বলেছিলেন। আর এতে এটাই প্রমাণ করে, কোরআন কখনো মানুষের লেখা নয়; বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান। ১৬৮৪ সালে সর্বপ্রথম ইংলিশ ফিজিশিয়ান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ ‘নিহোমিয়া গ্রিউ’ বৈজ্ঞানিক দৈনিক-ই প্রকাশ করে এতে করতল ও আঙ্গুলের ছাপের রহস্যের সংযোগ সূত্রের ধারণার উত্থাপন করেন। তবে ১৬৮৪ সালের পূর্বে ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পর্কে আর কোনো বিজ্ঞানীর আলোকপাতের কথা পাওয়া যায় না। এর পরবর্তীতে দীর্ঘ বিরতির পর ১৮০০ সালের পর ফিঙ্গার প্রিন্ট পুনরায় জোরভাবে বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন আঙ্গিকে গুরুত্ব দেন। এসব বিজ্ঞানীদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলেন, জেন জিন্সেন, সৈয়দ মুহাম্মাদ কাজী আজিজুল হক (খুলনা) ও ব্রিটিশ কর্মকর্তা এওয়ার্ড হেনরি। অবশ্য ১৬৮৫ সালে ডার্চ ফিজিসিয়ান ‘গোভার্ড বিডলো’ এবং ইটালিয়ান বিজ্ঞানী ‘মারসিলো বিডলো’ এনাটমির ওপর বই প্রকাশ করে ফিঙ্গার প্রিন্টের ইউনিক গঠনের ওপর নানা বিষয় তুলে ধরেন। প্রকাশ থাকে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে ব্যবসায়িক কাজে ছোট ছোট শুকনো কাদার খণ্ডে ব্যাবিলিয়ানদের আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। আর ১৮৯১ সালে আর্জেন্টিনার হুয়ান ভুসেটিস অপরাধী ধরার পদ্ধতি আবিষ্কার করার মাধ্যমে আধুনিক যুগের আঙুলের ছাপের ব্যবহার শুরু করেন।

কথা প্রসঙ্গে আবার আল কোরআনের কথাই ফিরে আসি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আল্লাহতায়ালা যখন কোরআনে বারবার বিচার দিবস ও পুনরুত্থানের কথা বলেছেন। তখন কাফিররা এই বলে হাসাহাসি করত যে পচাগলা হাড়গুলোকে কীভাবে একত্রিত করা যাবে? একজনের অস্থির সঙ্গে অন্যজনেরগুলো কি বদল হবে না? এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন প্রতি-উত্তরে বলেছেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বরং আমি তার অঙ্গুলিগুলোর ডগা পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম’ (আল কিয়ামাহ, আয়াত ৩-৪)। বস্তুত এখানে মহান রব ফিঙ্গার প্রিন্টের সক্রিয়তার ওপর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর আল্লাহতায়ালা কেবল মানুষের অস্থিতে মাংস পরিয়েই উত্থিত করবেন না; বরং এমন নিখুঁতভাবে মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন, যেমন- জীবদ্দশায় তার আঙ্গুলের সূক্ষ্ম রেখা পর্যন্ত সুবিন্যস্ত ছিল। এখানে এটাই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে পুনরুত্থানে কত নিখুঁতভাবে পুনরায় মানুষকে হুবহু অবয়ব দেওয়া হবে। কাফিররা বলে গলা পচা অস্থি একজনেরগুলোর সঙ্গে অন্যজনেরগুলো কি মিশ্রিত হবে না? এ ক্ষেত্রে আল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে অস্থি মিশ্রিত হওয়া তো দূরে থাক; বরং নিখুঁতভাবে তিনি মানুষকে পুনরুত্থিত করবেন।

আসলে যেভাবেই বলি না কেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রকারান্তরে ডেটা ব্যাংক বলে অভিহিত। কেননা জ্বিনের মধ্য সন্নিবেশিত প্রায় সব বৈশিষ্ট্য, শুধু শারীরিক গঠনই নয় বরং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত আঙ্গুলের ছাপে এনকোড করা থাকে। তাই আল্লাহ এখানে কাফিরদের জবাব ও জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন দিয়েছেন যে শুধু মাত্র আঙ্গুলের ডগার প্রিন্ট দিয়ে যদি একটি মানুষের সম্যক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। তবে প্রত্যেক মানুষকে তার নিজের অস্থি দিয়ে পুনর্বিন্যস্ত করা কোনো ব্যাপারই না। এ সূত্র ধরে হয়তো অনেকেই বায়োমেট্রিকস বায়োলজিক্যাল ডেটা পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত আছেন। এখানে গ্রিক শব্দ ইওঙ, যার অর্থ জীবন বা প্রাণ এবং গবঃৎরপ হলো পরিমাপ করা। মূলত বায়োমেট্রিকস এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে কোনো ব্যক্তির গঠনগত এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত বা শনাক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যাপারে আগেই উল্লেখ করেছি, একজনের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপ-সই অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে মিল নেই। আর এটি মাথায় রেখে প্রথমেই আঙ্গুলের ছাপ ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডারের মাধ্যমে আঙ্গুলে ছাপ ইনপুট নিয়ে ডেটাবেইজে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে তুলনাপূর্বক যেকোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। আসলে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার হচ্ছে বহু ব্যবহৃত একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস, যার সাহায্যে মানুষের আঙ্গুলে ছাপ বা টিপসইগুলো ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে, তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে যারা দৈহিকভাবে আঙ্গুলের কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে রেখাগুলো মিলে বা মুছে গেলে, এই পরীক্ষায় জটিলতার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

উপর্যুক্ত বর্ণনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি।

লেখক: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

সীতাকুণ্ডে আকাশমনি কাঠ জব্দ

আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি

আপডেটের সময় : ০৭:০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

বর্তমান অত্যাধুনিক যুগে জীবন চলার পথে যেকোনো কাজেই এগিয়ে যান না কেন, আঙ্গুলের ছাপ ছাড়া প্রশ্নবিদ্ধসহ প্রতিবন্ধকতায় সম্মুখীন হবেন। আর আপনিই যে আপনি, তা কেবল আঙ্গুলের ছাপেই শনাক্তপূর্বক বলে দিবে। মজার ব্যাপার হলো যে আপনার আঙ্গুলের ছাপ শুধুই আপনার; সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি মানুষের ছাপের সঙ্গে কোনো মিল হবে না। শুধু তাই নয়, সৃষ্টির গোড়া থেকে শুরু করে যত মানুষ এই ধরায় এসেছেন এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত যত মানুষ আসবেন, কারও আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিল তথা এক হবে না। আঙ্গুলের এই ব্যতিক্রম ছাপের ব্যাপারে এখন বিজ্ঞানীরা জোর গলায় বললেও এ কথাটি ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা ক্বিয়ামাহ (মক্কায় অবতীর্ণ)-তে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যেভাবেই বলি না কেন, আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি।

এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলেছে জানেন? এ ব্যাপারে বিজ্ঞান বলে যে গর্ভাবস্থায় যখন ভ্রূণের মাত্র ১০ সপ্তাহ বয়স, তখন তার আঙ্গুলের ছাপ গঠিত হয়। আর সেটা সারাজীবন একই থাকে; পরিবর্তন হয় না। কোনো দুই ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ কখনই এক হয় না। এমনকি জমজ ভাই-বোনদের ক্ষেত্রেও না। কিন্তু কেন? এর কারণ মায়ের গর্ভে প্রতিটি শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশ একেবারেই আলাদা হয়; যা তাদের আঙ্গুলের ছাপের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া আপনার আঙ্গুলের ছাপে আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে? এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আঙ্গুলের ছাপ কেবল আপনাকে শনাক্ত করবে, তাই নয়। একইসঙ্গে আপনার জ্বিনগত দিক দিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য বহন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আঙ্গুলের ছাপ আঁকা-বাঁকা, তাদের বহুমূত্র ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই রকম আরও নানা রোগের চিহ্ন বহন করে থাকে, যা এখনো গবেষণার পর্যায়ে আছে।

এক সময় শুধু অপরাধীকে ধরতে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের পরিচয়ের জন্য; যেমন- আইডেন্টেটি কার্ড ও পাসপোর্ট বইসহ বায়োমেট্রিক্স তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে এই ছাপ ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশে মোবাইল সিম কিনতে আঙ্গুলের ছাপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি, অনেক অফিসে ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। এই আঙ্গুলের ছাপের বিষয়টি আল্লাহর কুদরতের এক অকাট্য প্রমাণ বৈ কিছু নয়। পবিত্র কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই আল্লাহতায়ালা এই সৃষ্টির কথা বলেছিলেন। আর এতে এটাই প্রমাণ করে, কোরআন কখনো মানুষের লেখা নয়; বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান। ১৬৮৪ সালে সর্বপ্রথম ইংলিশ ফিজিশিয়ান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ ‘নিহোমিয়া গ্রিউ’ বৈজ্ঞানিক দৈনিক-ই প্রকাশ করে এতে করতল ও আঙ্গুলের ছাপের রহস্যের সংযোগ সূত্রের ধারণার উত্থাপন করেন। তবে ১৬৮৪ সালের পূর্বে ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পর্কে আর কোনো বিজ্ঞানীর আলোকপাতের কথা পাওয়া যায় না। এর পরবর্তীতে দীর্ঘ বিরতির পর ১৮০০ সালের পর ফিঙ্গার প্রিন্ট পুনরায় জোরভাবে বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন আঙ্গিকে গুরুত্ব দেন। এসব বিজ্ঞানীদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলেন, জেন জিন্সেন, সৈয়দ মুহাম্মাদ কাজী আজিজুল হক (খুলনা) ও ব্রিটিশ কর্মকর্তা এওয়ার্ড হেনরি। অবশ্য ১৬৮৫ সালে ডার্চ ফিজিসিয়ান ‘গোভার্ড বিডলো’ এবং ইটালিয়ান বিজ্ঞানী ‘মারসিলো বিডলো’ এনাটমির ওপর বই প্রকাশ করে ফিঙ্গার প্রিন্টের ইউনিক গঠনের ওপর নানা বিষয় তুলে ধরেন। প্রকাশ থাকে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে ব্যবসায়িক কাজে ছোট ছোট শুকনো কাদার খণ্ডে ব্যাবিলিয়ানদের আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। আর ১৮৯১ সালে আর্জেন্টিনার হুয়ান ভুসেটিস অপরাধী ধরার পদ্ধতি আবিষ্কার করার মাধ্যমে আধুনিক যুগের আঙুলের ছাপের ব্যবহার শুরু করেন।

কথা প্রসঙ্গে আবার আল কোরআনের কথাই ফিরে আসি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আল্লাহতায়ালা যখন কোরআনে বারবার বিচার দিবস ও পুনরুত্থানের কথা বলেছেন। তখন কাফিররা এই বলে হাসাহাসি করত যে পচাগলা হাড়গুলোকে কীভাবে একত্রিত করা যাবে? একজনের অস্থির সঙ্গে অন্যজনেরগুলো কি বদল হবে না? এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন প্রতি-উত্তরে বলেছেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বরং আমি তার অঙ্গুলিগুলোর ডগা পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম’ (আল কিয়ামাহ, আয়াত ৩-৪)। বস্তুত এখানে মহান রব ফিঙ্গার প্রিন্টের সক্রিয়তার ওপর ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর আল্লাহতায়ালা কেবল মানুষের অস্থিতে মাংস পরিয়েই উত্থিত করবেন না; বরং এমন নিখুঁতভাবে মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন, যেমন- জীবদ্দশায় তার আঙ্গুলের সূক্ষ্ম রেখা পর্যন্ত সুবিন্যস্ত ছিল। এখানে এটাই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে পুনরুত্থানে কত নিখুঁতভাবে পুনরায় মানুষকে হুবহু অবয়ব দেওয়া হবে। কাফিররা বলে গলা পচা অস্থি একজনেরগুলোর সঙ্গে অন্যজনেরগুলো কি মিশ্রিত হবে না? এ ক্ষেত্রে আল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন যে অস্থি মিশ্রিত হওয়া তো দূরে থাক; বরং নিখুঁতভাবে তিনি মানুষকে পুনরুত্থিত করবেন।

আসলে যেভাবেই বলি না কেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রকারান্তরে ডেটা ব্যাংক বলে অভিহিত। কেননা জ্বিনের মধ্য সন্নিবেশিত প্রায় সব বৈশিষ্ট্য, শুধু শারীরিক গঠনই নয় বরং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পর্যন্ত আঙ্গুলের ছাপে এনকোড করা থাকে। তাই আল্লাহ এখানে কাফিরদের জবাব ও জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন দিয়েছেন যে শুধু মাত্র আঙ্গুলের ডগার প্রিন্ট দিয়ে যদি একটি মানুষের সম্যক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। তবে প্রত্যেক মানুষকে তার নিজের অস্থি দিয়ে পুনর্বিন্যস্ত করা কোনো ব্যাপারই না। এ সূত্র ধরে হয়তো অনেকেই বায়োমেট্রিকস বায়োলজিক্যাল ডেটা পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত আছেন। এখানে গ্রিক শব্দ ইওঙ, যার অর্থ জীবন বা প্রাণ এবং গবঃৎরপ হলো পরিমাপ করা। মূলত বায়োমেট্রিকস এমন একটি প্রযুক্তি, যেখানে কোনো ব্যক্তির গঠনগত এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত বা শনাক্ত করা হয়। এ ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যাপারে আগেই উল্লেখ করেছি, একজনের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপ-সই অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে মিল নেই। আর এটি মাথায় রেখে প্রথমেই আঙ্গুলের ছাপ ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডারের মাধ্যমে আঙ্গুলে ছাপ ইনপুট নিয়ে ডেটাবেইজে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে তুলনাপূর্বক যেকোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। আসলে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার হচ্ছে বহু ব্যবহৃত একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস, যার সাহায্যে মানুষের আঙ্গুলে ছাপ বা টিপসইগুলো ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে, তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে যারা দৈহিকভাবে আঙ্গুলের কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে রেখাগুলো মিলে বা মুছে গেলে, এই পরীক্ষায় জটিলতার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

উপর্যুক্ত বর্ণনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আঙ্গুলের ছাপ আল্লাহতায়ালার মহাবিস্ময়কর সৃষ্টি।

লেখক: বিশিষ্ট গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন