Dhaka ১১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে ‘হামলা’, আজ ছাত্রসেনার ‘কালো পতাকা মিছিল’, আসতে পারে নতুন কর্মসূচি

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে ‘হামলা’, আজ ছাত্রসেনার ‘কালো পতাকা মিছিল', আসতে পারে নতুন কর্মসূচি

মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সকালে দেশব্যাপী ‘শান্তিপূর্ণ’ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন ছাত্রসেনা নেতাকর্মী ও সুন্নি ছাত্র-জনতা। কিন্তু তাদের ‘ঠেকাতে’ চট্টগ্রামের মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে ‘স্থানীয়’ পরিচয়ে কিছু তরুণ-যুবক সড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন এবং হামলা করেন। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী ‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে ‘ওরা কারা’ সেই বিষয়ে ‘স্পষ্ট’ করে কারও নাম বা দলের কথা উল্লেখ করেননি সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি— ‘যারা এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের পরিচয় সাংবাদিক-পুলিশ সবাই জানে। তাদের ছবি-পদবি ফেসবুকজুড়ে রয়েছে।’

সোমবার (৫ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় শাহ আনিস মসজিদ মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে করে। এতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম।

সুন্নিদের সড়ক অবরোধ ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে ‘ওরা কারা’ ছিল সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তাদের নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে যারা এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের পরিচয় আপনারা (সাংবাদিক) জানেন। এছাড়া পুলিশও ভালো জানে। আর তাদের ছবি-পদবি ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। তাই বিষয়টা স্পষ্ট তারা কারা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রসেনার সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম বলেন, আজ (সোমবার) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঘোষিত দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা গভীর ক্ষোভ, নিন্দা ও উদ্বেগ জানাচ্ছি। বিশেষ করে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী ও ফটিকছড়ি এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার ও আক্রমণে বহু নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সড়ক অবরোধ থেকে চট্টগ্রামে আটক ২৭

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ থেকে পুলিশ চট্টগ্রামে ছাত্রসেনার ২৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে জানিয়ে সাহেদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে ১৪ জন, চান্দগাঁও এলাকা থেকে ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আর সারাদেশ থেকে আরও বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। প্রত্যেক স্থানে পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে এবং এতে কিছু উগ্রসন্ত্রাসী পুলিশের সঙ্গে মিলে হামলায় অংশ নেয়। যা সরাসরি ছাত্রসেনার প্রতি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা।’

আদালত, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইমাম রঈস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের মামলা অবশেষে দায়ের হয়েছে। কিন্তু এখনও অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়নি। এই ধীরগতি বিচারিক প্রক্রিয়া এবং আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত হামলা প্রমাণ করে— আদালত, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো বিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক নয়।’

অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে জামেয়ার কাছাকাছি এলাকায় হঠাৎ করে পুলিশি হয়রানি, উত্তেজনা সৃষ্টি ও সহিংস আচরণের কথা তুলে ধরে ছাত্রসেনার এ নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রামে সুন্নি অঙ্গনের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ, আমাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শক্তির অন্যতম মারকাজ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা এলাকার কাছাকাছি—যেখানে বরাবরই শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজমান—সেই এলাকায় আজকের অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে হঠাৎ করে পুলিশি হয়রানি, উত্তেজনা সৃষ্টি ও সহিংস আচরণ নজরে এসেছে। এই হামলা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং সুন্নি মুসলমানদের আত্মমর্যাদা ও বিশ্বাসের উপর সরাসরি আঘাত। আমরা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।’

‘যে জায়গা থেকে যুগ যুগ ধরে ঈমান-আকীদা রক্ষা ও ইসলামের সত্যপ্রচারে নেতৃত্ব এসেছে। সেই পবিত্র এলাকা আজ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার— এটা শুধু দুঃখজনক নয়, অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও পরিকল্পিত উস্কানি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই— জামেয়া এলাকাসহ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা না করে সেসব এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি ও আগ্রাসী আচরণ এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে’ —যোগ করেন তিনি।

তাদের অবস্থান ‘স্পষ্ট’ জানিয়ে ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম বলেন, ‘অবিলম্বে ইমাম রইস উদ্দিন হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আজকের অবরোধ কর্মসূচিতে হামলার দায়ে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া, শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

‘আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে ছাত্রসেনা প্রস্তুত’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কখনো অশান্তি চায় না। কিন্তু ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আমরা আপোষ করবো না। আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি— আরও কঠোর কর্মসূচির জন্য ছাত্রসেনা প্রস্তুত।’

এ সময় হুঁশিয়ার করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ছাত্রসেনার এ নেতা বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি— এই অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রসেনা দমে যাবে না। বরং গণআন্দোলনের আগুন আরও জ্বলবে।’

মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ‘কালো পতাকা’ মিছিল

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রসেনা নেতা সাহেদুল আলম বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে পুলিশি ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (৬ মে) সারাদেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিটি জেলা ও মহানগরে রাজপথে নামবে ছাত্রসেনা। বিকেল ৩টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার একটি মসজিদের খতিব এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে শিশু বলাৎকারের মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেঁধে মারধর করে একদল লোক। পরে সকাল ১০টার দিকে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরদিন ভোরেই কারাগারে তিনি মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকে টানা কর্মসূচি দিয়ে আসছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত। সর্বশেষ গত শনিবার নগরের লালদীঘি মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। গতকাল রোববার ছিল ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচি। সোমবার তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।

অবরোধ কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ানুযায়ী, সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, একে খান, সল্টগোলা ক্রসিং, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত ও ইসলামী ছাত্রসেনা। বেলা ১২টার দিকে যথাসময়ে তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন
লেখক তথ্য সম্পর্কে

জনপ্রিয় পোস্ট

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইশরাককে শপথ পড়ানো যাবে না: রিটকারীর আইনজীবী

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে ‘হামলা’, আজ ছাত্রসেনার ‘কালো পতাকা মিছিল’, আসতে পারে নতুন কর্মসূচি

আপডেটের সময় : ০৫:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে সোমবার সকালে দেশব্যাপী ‘শান্তিপূর্ণ’ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন ছাত্রসেনা নেতাকর্মী ও সুন্নি ছাত্র-জনতা। কিন্তু তাদের ‘ঠেকাতে’ চট্টগ্রামের মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে ‘স্থানীয়’ পরিচয়ে কিছু তরুণ-যুবক সড়কে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন এবং হামলা করেন। এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী ‘কালো পতাকা’ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে ‘ওরা কারা’ সেই বিষয়ে ‘স্পষ্ট’ করে কারও নাম বা দলের কথা উল্লেখ করেননি সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি— ‘যারা এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের পরিচয় সাংবাদিক-পুলিশ সবাই জানে। তাদের ছবি-পদবি ফেসবুকজুড়ে রয়েছে।’

সোমবার (৫ মে) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় শাহ আনিস মসজিদ মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে করে। এতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম।

সুন্নিদের সড়ক অবরোধ ঠেকাতে পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে ‘ওরা কারা’ ছিল সেই বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তাদের নাম উল্লেখ করতে চাই না। তবে যারা এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে তাদের পরিচয় আপনারা (সাংবাদিক) জানেন। এছাড়া পুলিশও ভালো জানে। আর তাদের ছবি-পদবি ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে গেছে। তাই বিষয়টা স্পষ্ট তারা কারা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রসেনার সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম বলেন, আজ (সোমবার) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ঘোষিত দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আমরা গভীর ক্ষোভ, নিন্দা ও উদ্বেগ জানাচ্ছি। বিশেষ করে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী ও ফটিকছড়ি এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার ও আক্রমণে বহু নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সড়ক অবরোধ থেকে চট্টগ্রামে আটক ২৭

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ থেকে পুলিশ চট্টগ্রামে ছাত্রসেনার ২৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে জানিয়ে সাহেদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে ১৪ জন, চান্দগাঁও এলাকা থেকে ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আর সারাদেশ থেকে আরও বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। প্রত্যেক স্থানে পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে এবং এতে কিছু উগ্রসন্ত্রাসী পুলিশের সঙ্গে মিলে হামলায় অংশ নেয়। যা সরাসরি ছাত্রসেনার প্রতি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা।’

আদালত, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইমাম রঈস উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের মামলা অবশেষে দায়ের হয়েছে। কিন্তু এখনও অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়নি। এই ধীরগতি বিচারিক প্রক্রিয়া এবং আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত হামলা প্রমাণ করে— আদালত, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো বিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক নয়।’

অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে জামেয়ার কাছাকাছি এলাকায় হঠাৎ করে পুলিশি হয়রানি, উত্তেজনা সৃষ্টি ও সহিংস আচরণের কথা তুলে ধরে ছাত্রসেনার এ নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রামে সুন্নি অঙ্গনের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ, আমাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শক্তির অন্যতম মারকাজ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা এলাকার কাছাকাছি—যেখানে বরাবরই শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজমান—সেই এলাকায় আজকের অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে হঠাৎ করে পুলিশি হয়রানি, উত্তেজনা সৃষ্টি ও সহিংস আচরণ নজরে এসেছে। এই হামলা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং সুন্নি মুসলমানদের আত্মমর্যাদা ও বিশ্বাসের উপর সরাসরি আঘাত। আমরা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।’

‘যে জায়গা থেকে যুগ যুগ ধরে ঈমান-আকীদা রক্ষা ও ইসলামের সত্যপ্রচারে নেতৃত্ব এসেছে। সেই পবিত্র এলাকা আজ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার— এটা শুধু দুঃখজনক নয়, অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও পরিকল্পিত উস্কানি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই— জামেয়া এলাকাসহ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষা না করে সেসব এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি ও আগ্রাসী আচরণ এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে’ —যোগ করেন তিনি।

তাদের অবস্থান ‘স্পষ্ট’ জানিয়ে ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম বলেন, ‘অবিলম্বে ইমাম রইস উদ্দিন হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আজকের অবরোধ কর্মসূচিতে হামলার দায়ে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া, শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

‘আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে ছাত্রসেনা প্রস্তুত’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা কখনো অশান্তি চায় না। কিন্তু ন্যায়বিচারের প্রশ্নে আমরা আপোষ করবো না। আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি— আরও কঠোর কর্মসূচির জন্য ছাত্রসেনা প্রস্তুত।’

এ সময় হুঁশিয়ার করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ছাত্রসেনার এ নেতা বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি— এই অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রসেনা দমে যাবে না। বরং গণআন্দোলনের আগুন আরও জ্বলবে।’

মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ‘কালো পতাকা’ মিছিল

শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রসেনা নেতা সাহেদুল আলম বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধে পুলিশি ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (৬ মে) সারাদেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিটি জেলা ও মহানগরে রাজপথে নামবে ছাত্রসেনা। বিকেল ৩টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার একটি মসজিদের খতিব এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে শিশু বলাৎকারের মিথ্যা অভিযোগে গাছে বেঁধে মারধর করে একদল লোক। পরে সকাল ১০টার দিকে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরদিন ভোরেই কারাগারে তিনি মারা যান।

এ ঘটনার পর থেকে টানা কর্মসূচি দিয়ে আসছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত। সর্বশেষ গত শনিবার নগরের লালদীঘি মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। গতকাল রোববার ছিল ‘মার্চ টু গাজীপুর’ কর্মসূচি। সোমবার তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।

অবরোধ কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ানুযায়ী, সোমবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, একে খান, সল্টগোলা ক্রসিং, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত ও ইসলামী ছাত্রসেনা। বেলা ১২টার দিকে যথাসময়ে তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;

আপনার সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এই পোস্ট শেয়ার করুন